রবিবার, ২৩ মে, ২০১০

রাক্কসী ও রহিমা

ভাই, আমাগো দুইডা সমস্যা দেন না।

-সমস্যা নাই, সিঙ্গারা আছে কইয়া শরবেশ আর একাব্বরের সামনে রাহা টিনের আইঠা পিরিজের উপর পিরিজ চ্যাঙ্গা দিতে দিতে উত্তর দেয় পিয়াসী হইটালের কর্মচারী রুবেল।

রওশন টকিজে ম্যাটিনি শো মাইরা খিদাজর্জরিত সখিপুইরা পাহাইড়া শরবেশ কয়, তাইলে দুইডা সিঙ্গারাই দেন।

কিন্তু একাব্বর বাগড়া দেয়। কয়, ভাতের খিদ্যা নাগছে, তুই সিঙ্গারা চাস ক্যা?

শরবেশ কয়, ভাত রাইত্রে আইয়া খামনি। নাইলে ট্যাহায় কুলায়বো না।

একাব্বর কয়, ট্যাহা আমার কাছে আছে তো? তুই ভাতের অডার দে।

শরবেশ উজবিজ কইরা রুবেলরে কয়, ভাই তুমি আমাগো নিগ্যা দুইডা সিঙ্গারাই আনো।

রুবেল সিঙ্গারা আনতে চইলা গেলে শরবশ ওফ ফুলা একাব্বরে কয়, তুই এত ভুক্মা ক্যা? তরে না কইলাম, নঠিপাড়ায় গেলে ট্যাহা নাগবো ম্যালা?

একাব্বর কয়, তাই বইলা দুফুরে ভাত খামু না?

শরবেশ কয়, এহন দুফুর পাস কনে? বিহাল গড়িয়া গেছে গা কুনসুময়?

একাব্বর কয়, যাইগ্গা.. আমার খিদা নাগছে।

শরবেশ রাগ ধইরা রাখা পারে না। কয়, হালার পু হালা, দৈনিকি তুমার ভাত খাওন নাগব? একদিন অন্য কুন্তা খা। দুইডা সিঙ্গারা খাইয়া ঠাইসা পানি খাইয়া নু যাই স্টিডিয়ামে খেলা দেহি গ্যা। হাইঞ্জা অইলে দুই ভাইয়ে মিল্যা নঠিপাড়ায় ঢুকুমনি।

রুবেলরে সিঙ্গারা নিয়া আইতে দেইখা শরবেশ আরো হাঁকিহুঁকি কইরা কয়, তাহাদে রাইতে আইয়া ঠাইসা ভাত খিলামুনি তরে।

শরবেশের চোখে তখন বিজাতীয় ঝিলিক। কিন্তু সে ঝিলিকে প‌্যাটের খিদা দূরে সরে না একাব্বরের।

কিন্তু কিছু কওয়ার ইচ্ছা হয় না শাটে নাইগা থাকা ঘাম আর বিড়ির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ একাব্বরের।

টিনের পিরিজে বড় বড় সিঙ্গারা রাহে রুবেলে।

কোনও কিছু কওয়ার বদলে পিরিজ থিক্যা একটা সিঙ্গারা তুইলা কামুড় বসায় একাব্বর। এক ধরনের তুমুল ভালোলাগা তার দাঁত থিক্যা জিবল্যায় ছড়াইয়া পড়ে। সে কোপের পর কোপ দিতে থাকে প্রায় বয়কা ধরা সিঙ্গারাতে।

সিঙ্গারা ফুরিয়া গেলে ঢগঢগ কইরা দুই গেলাশ পানি খায়। আর তহনই টের পায় প‌্যাটের মুচার।

শরবেশের মুহী তাকিয়া একাব্বর কয়, আগা ধরছে।

চলব?

বুধবার, ১৯ মে, ২০১০

ভালুবাসা

ফুলের দুকানে ফল হয়ে শুয়ে আছি
হাসি পাচ্ছে না তবুও হাসছি
বাসছি ভালো তুমাকে

গাংচিল দেখাচ্ছো গাংচিল দেখছি
পাহাড় দেখাচ্ছ পাহাড় দেখছি
প্রজাপতি শেখাচ্ছ প্রজাপতি শিখছি
দয়া করে ভালোবাসা শিখিয়ো না
পিলিজজজজজজজজজজজ

মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০১০

উঁচা পাহাড় ও নিহত ঘুড়া বিটল বানর ও আমি

কুনো এক শনিবার দুফুর বেলা
একটা উঁচা পাহাড় আর একটা নিহত ঘুড়া
বইসা বইসা গান গাইতে ছিল
আমি গান থামিয়া কইলাম,
পিলিজ আমারে এট্টু দীক্ষা দেন। খুব হেসেখেলেবেঁচেবর্তেখাই।
উহারা কইল, হাহাহাহ হাহাহাহাহ। ইহা তো খুবোই আমোদের কতা..কিন্তু আমরা যে নিতান্তই বুকাচুদা। দীক্ষা দিবার শিক্ষাই যে আমাগের নাই!
কহিলাম, তা হবে হয়তো। কিন্তু এখন আমি দীক্ষা লইতে কোথায়ই বা যাই?
উহারা ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিল, তুমি উত্তরে যাউ। উখানে এক প্রগলভা নারীর বাস। উহার কাছথন দীক্ষা লইয়া লও।
চলিলাম উত্তরের পথে। হাঁটিতে হাঁটিতে কিলান্তপ্রায়
পথিমদ্যে হঠাৎ দেখা এক বিটল বানরের
কহিলাম, হে পরম ভ্রাতামার, তুমি কি কহিতে পারো অত্রাঞ্চলে বসবাসরত কুনো প্রগলভা নারীর কথা?
কুথায় তাহার সাং কুথায়ইবা সাকিন?
বিটল বানর হাতের কদলী ফুটাইতে ফুটাইতে কহিল,
খুব পারি।
অবাক মানিয়া কহিলাম, খুব পারো?!
তবে হামাক ওইস্থানে লইয়া যাও।
বিটল বানর কহিল, তাহার আগে একটা কদলী খাইয়া লও।
কহিলাম, ক্যানে ক্যানে? আমি পরিছ্রান্ত বটে, ক্ষুদার্ধ তো নই..
বিটল বানর কহিল, তাহা জানি বৈকি? কিন্তু ব্রাদার হোচিমিন,
প্রগলভা নারীর কাছে যাইবার ইহাই যে উপায়।
কহিলাম, যেমন যেমন?
বিটল বানর কৎকৎ করিয়া কদলী ভক্ষণরত অবস্থাতেই কহিল,
এট্টু পরে তুমিউ যে আমার নগাল হইয়া যাইবাগা!
তৎক্ষণাৎ বুঝিলাম, প্রগলভারা কেবলই বানর বানায়।

একটা নাল পাহাড় বনাম...
ফ্যাকাইশা নীলরঙ্গা একটা আকাশ আছিল আকাশে
আমরা আঁটপার নু্ইছিলাম হয়তোমা আনমুনেই
নদী চর খাল বিল গজারির বন পার হইয়া
সামনে একটা লাল পাহাড়
কইল, ক্যা আইছত এইহানে?
কইলাম, জাইন্ন্যা।
কয়, জাইন্যা আহই।
কইলাম, পারুম না।
কয়, ক্যা পারবি না। পক্কুতে ফুট অইছে?
কইলাম, না। পক্কুতে ফুট অয় নাই।
কয়, তাইলে পারবি ন্যা ক্যা?
কই, ট্যাকা নাইঙ্কা।
কয়, ক্যা ট্যাকা নাইঙ্কা?
কই, পিথিবী একটা অজন্তা ইলোরার দ্যাশ, এনে ভালো মাইনষ্যের পকটে ট্যাকা থাকে না।
কয়, তুই কি ভালো মানু?
কইলাম, হ।
কয়, ক্যামনে তুই ভালো মানু?
কইলাম, কারণ আমি বহুদ্দিন খেলাই না।

সবিতা আর ববিতা

সবিতা আর ববিতা দুই বোন
তারা ভালোবাসে পিথিবীর নকল জীবন
আমি তাদের বলিলাম, শোনো সবিতা শোনো ববিতা
কেন তুমরা ভালোবাসো পিথিবীর নকল জীবন?
তাহারা কুনো উত্তর করিল না, শুধু কিটিকিটি হাসিল
আমি বলিলাম হাসিবে না। উত্তর করো জলদি
তাহারা উত্তর করিল না তবু
হাসিতেই থাকিল শুধু।
হিহিহি ফিফিফি হিহিহি ফিফিফি
আমি মিজাজ রাখিয়া খাইতে পারিলাম না
ঈষদুষ্ণ ধমক কষাইয়া দিলাম
তাহারা ধমক খাইয়া হাসিয়া গড়াইয়া পড়িল
আমিউ নিজের আহাম্মুকি ধরিয়া ফেলিয়া
হাসিয়া ফালাইলাম এবং ভালোবাসিয়াউ
কিন্তু তাহারা হামাক ভালোবাসিল না
শুধু হাসিয়াই গেল চিরকাল।
সবিতা আর ববিতা ছিল দুইবোন
তাহারা ভালোবাসে পিথিমীর নকল জীবন।
আমরা ঘাস খাই তাহারা ভাত খায়।

দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম

এট্টা ডাইনোশুয়ার কোলে এট্টা নিরীহ বিড়াল বাচ্চা নিয়া
ঘুইরা বেড়াইবার নুইছিল।
আমি তারে কইলাম, কীরে তর সিন কী?
কয়, বুঝবার পারতাছি না।
কইলাম, ক্যা বুঝবার পারতাছোত না?
কয়, পরিষ্কার না। ঘুলাঘুলা নাগে তাই।
কইলাম, ক্যা? ঘুলাঘুলা নাগে ক্যা?
কয়, খুব অপরিষ্কার এইজুইন্যে।
কইলাম, কস কি? চোকে ঠিকমতো দেহস তো?
কয়, দেহি। কিন্তু বুজি না।
বুজলাম, সিন সুবিদার না। তাই চাপ্টার উল্টাইলাম।
কইলাম, যাইগ্গা বাদ দে। তর কুলে কি তর পুলা?
কয়, না । এইডা এট্টা বিড়ালের পুলা।
কইলাম, তা তর কুলে ক্যা?
কয়, খামু দেইকা ধইরা আনছি।
কইলাম, কস কি! তা খাস না ক্যা?
কয়, ঠ্যাঙ্গে এট্টু ব্যতা পাইছে তো
তাই কুলে নিয়া হাত করাইতাছি। হাত হইলেই খামু।
বিড়ালের বাচ্চা কুল থিক্যা ফাল উইঠা কয়, আমি হাত অমু না।
বুজলাম, দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম।

সবজি বাগানে একাধিক বিড়াল

একটা নিতুন ক্যাট দীর্ঘদিন প্রহেলিকার ভিতর থেকে
উত্থিত হইয়া এক ডানাবালা ঘুড়ার পিছে
নিজেকে আবিষ্কার করিল। দেখিল পাতে কয়টা হবিস্যির চাল মাত্র পড়িয়া আছে
ডরিয়া ভাবিল এ জীবন বুঝি আর না বাঁচে!
তাই সে ঘুড়ার ন্যাজ ছাড়িয়া দিয়া
গাছের গুড়িতে বসিয়া উথাল পাতাল ভাবিতে লাগিল
ভাবনা তাকে সঠিক পথের সন্ধান দেখাইল না
বরং খোলা মাঠে ছাড়িয়া দিয়া মজা দেখিবার যোগাড় যন্তর করিল
নিতুন ক্যাট ভাবনার এমন বদগতি দেখিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া উঠিল
প্রথমে ও.. ও..ও..পরে ওরে ফাদাররে ওরে মাদাররে
ওরে সিস্টার ব্রাদার এভরি এভরি ডেরে...বলিয়া।
ওখান দিয়াই যাইতাছিল এক মিদুল ভট্টাচার্যি
শুধাইল কীরে কী মাকানচুয়ার পুলা কাঁদিতে লাগিচ্ছিস ক্যানে?
নিতুন ক্যাট বলিল, ফাদার দুষ্ট ভয়স্কি পাতে কখান হবিস্যির চাল মাত্র
বলুন তো সারাটা জীবন কি নিয়ে বাঁচি?
মিদুল ভট্টাচার্যি হোহো হাহাহাহা হেসে বলিল, ক্যানে বউ নিয়া বাঁচিবি।
কান্না ভুলিয়া নিতুন ক্যাট বলিয়া উঠিল, উত্তম প্রস্তাব। আফনের বউডা ধার দেবেন বুঝি?
মিদুল ভট্টাচার্যি কী করিবে বুঝিতে না পাইয়া চদু হইয়া
গাছের গুড়ি ত্যাগ করিয়া সরসর করিয়া নামিয়া গেল সব্জি ক্ষেতের ভিতর
যেখানে একাধিক নিতুন ক্যাট কান্না ভুলিয়া হোহো করিয়া হাসিতেছে।

পপ্পন

ভাঙ্গবার আগেই ভেঙ্গে গেছি বার বার
জরায়ুতে মা যে ডিম পেড়েছিল
তাতে ছিল ভীষণ পুষ্টির অভাব

তাই এই মুখ এই নাক এই শরীর নিয়ে
প্রতিক্ষণ জেরবার। রঙ আর তামাশার পৃথিবীতে
আমাশয়ে ভুগে ভুগে কাহিল আমি
পড়েছি জাহেলদের খপ্পরে
যারা পপ্পন বোঝে না পপ কর্ন বোঝে।

পিস্তল এবং অন্যরকম ঘুড়া

তবে এইসব মিনার্ভার ছেলেরা আমাদের ভাগ্যহত করে দিল
আমরা চেয়েছিলাম অনেক প্রেম আর নিরালায় দুদু খাউয়া
গাংচিল এবং অরুন্ধতী রাওয়ের কাছে প্রেমভিক্ষা
একটু দাও একটু দাও বলে চেঁচানোর মজা
হয়নি। পাগল পার্থ সব ব্যর্থ করে দিল
উ আগেই ভালবেসে রেখে দিয়েছিল অরুন্ধতী রাও আর রেহনুমা
তাই বেলেঘাটায় কোনও সুপারিবাগান আছে কি-না জানি না
তবে মরিশাস উত্তম নগরী
কুনো জিগরি দোস্ত নেই বলে
আধন্যাংটা পিস্তল একা একাই সমুদ্রে গোসল খেলে
আর অন্যরকম ঘুড়া হয়ে নাচে
ভুলুণ্ঠিত সবুজ মেয়েদের গ্রীবায়
ঘন সবুজ বিপ্লবে তার আর মতি নাই
যতি চিহ্নে মুছে যায় চুমুর বিলাপ।

পাখি এবং প্রজাপতির নকল জীবন

পৃথিবীর কোনও একদিন
ভাতের লোভে পাখি এবং প্রজাপতি
উড়ে গেল নেমকহারামদের দেশে
যেখানে প্রচুর ভাত প্রচুর ডাল এবং তয় তরকারি বেশুমার মজুদাছে।
ফলে বহুদূর উড়ে গিয়ে পাখি এবং প্রজাপতি
ভাতভরা গামলায় হামলে পড়ে
এবং প্রচুর খায় অত্যধিক ডাইল মেরে মেরে
যেহেতু গাইল দিবার কেউ নাই
সেহেতু তারা প্রচুর খায় এবং খাইতেই থাকে
যতক্ষণ না তাগো দাঁত ভাত খাউয়ার
অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
তারপর তারা বিশ্রামের লোভে ইদিক সিদিক ছোটে
কিন্তু ব্রাদার হো চি মিন,
নেমকহারামদের দেশে কোনও গাছপালা নাই।

সকলই ভ্রান্ত সিন

জলের ভিতরে খলের পুলারা
ঘ্যাচাঘ্যাচ নাচে আর খলবলিয়ে হাসে
বিলবিলিয়ে কানে কানে কামুড় দিয়া
কতা কয় প্রিয় প্রিয়াশীর নগে।
আদর কইরা খেলে পাইন্যা পাইন্যা
পানি ছিটানি খেলা
আমরা শালা ভুদাই চুদা
হাইগ্যা গুয়া ধুইবার পানি পাই না।

লুহার তালা

খউপ সুন্দরমতোন একটা ম্যায়া তার প্রেমিকের বাড়ি যাইবার নুইছিল। কিন্তু ম্যায়াডা তার ক্যাত্তলার বাল কাটছিল কি-না আমরা তা জানি না। আর জানলেই কি? হ্যার প্রেমিক হয়তো ঝুপড়া বনই পছন্দ করে। ঝুপড়া বনে বাঘ ছাইড়া দিয়া হরিং শিকারে নামতে ভালো পায়। তাতে আমাগো অসুবিধা কনে?
অসুবিধা নাই বইলাই ম্যায়াডা তার প্রেমিকের বাড়ি যাইবার নুইছিল, হয়তো একটা ঝুপড়া বন নিয়া। যেখানে তার প্রেমিক অত্যন্ত আমোদে বাঘ ছাইড়া দিয়া হরিং শিকারে নামব। কানে তেল দিয়া, খালি ডুবিয়া ডুবিয়া মাছ ধরব। কিন্তু রাস্তায় আছিল চরম জাম। চুদানির পুলা রিকশালা, ভ্যানালা, সিএনজিলা, পাইভেট কারালারা ছুট্ট ওই রাস্তার মদ্যেই তিনড্যা লাইন চুদাইছিল। ফলে দুই মুর থিক্যাই কেউ যাইবারও পারতাছিল না আইবারও পারতাছিল না। এই নিয়া হিউজ গিয়াঞ্জাম। ব্যাপক চিল্লাচিল্লি আর গালিগালান্তিস থুতনা ভাঙ্গাভাঙ্গি পর্যন্ত পৌঁনছিয়া গেছিলগা পরাই। সেই সুমায় কে যে কার মাকে চুদল, মুখ দিয়া, বলা মুশকিল।
এই যহন অবস্তা, তহন ম্যায়াডা ঘ্যাচ কইরা রিকশা থিক্যা নাইমা পড়ল। ভাড়া মিটিয়া দিয়্যা। তিন গলি আগে। কিন্তু রাস্তায় নাইমাই ম্যায়াডা টের পাইল কামডা ভালো হয় নাই। কারণ রাস্তার এক খানকির পুলা টাইপ পথচারী তার লবস্টার পাছা দেইকা লুভ সামলাইতে পারল না। দিয়া দিল একটা রাবণ খামচি। উহঃ কইরা ব্যথা সামলাইতে পারলেও রাগ আর ঘিরিনা সামলাইতে পারল না ম্যায়াডা। রাগে তার শরীল রিরি আর ঘিরিনায় তার শরীল গিরগির করবার নুইছিল। ঘুইরা খাঁড়িয়া একটা চড় কষাইবার প্রগাঢ় ইচ্ছা গলা টিফি দিয়া মাইরা হালাইল ম্যায়াডা, দাঁত খামটি দিয়া। এবং বুদ্ধি খাটিয়া দ্রুত কাইটা পড়ল ভীড় থিক্যা। তারপর রাস্তা পার হওনের জন্যে তক্কে তক্কে রইল জামের ভিতর সুবিধামতো চিপাচুপার খোঁজে।
কিন্তু জিঞ্জের প্যান পরা ম্যায়াডার ওই আকর্ষণীয় ভঙ্গিমাডা রাস্তার ম্যাড়া পুরুষরা হাতছাড়া করল না এহাবারেই। দুইচোখ ভইরা গিল্যা খাইল ম্যায়াডার উগ্র যৌনগন্ধীময় ওই খাঁড়াইবার ভঙ্গিমাডা। অবশ্য তাগোরেও দুষ দিয়া লাভ নাই। কারণ ইহ জনমে এত ভালো শরীল খাইবার দাঁত তাগো আর জ্বালাইব না, এইডা তারা ভালো কইরাই জানে। তাই রাস্তা ঘাটে পথে প্রান্তরে ভালো কোনও শরীল দেকলেই তারা খাঁড়িয়া পড়ে হারামজাদার নগাল। আর সেইসব শরীলের রঙ্গিল স্মৃতি নিয়া আস্তানায় ফিরে। আর রাইতে রাইতে হাত মারে, সেইসঙ্গে মারে জীবন।
তো, সে যাই হোক না ক্যা, আমাগো গল্ফ হেইহানে না। আমাগো গল্ফ খউপ সুন্দর ম্যায়াডার পিছে পিছে। যে তার প্রেমিকের বাড়ির চৌকাঠে, ইতোমধ্যেই পৌঁনছিয়া গেছে। ম্যায়াডা বেল টিফে আর ওমনেই একটা টিয়া জাতীয় পাকি গলাখাকারি দিয়া উঠে। দরোজা খুইলা খাঁড়ায় প্রেমিকের মা। চিকন চোখে পর্যবেক্ষণ নেয়, তার ছেলেডার সাথে ম্যায়াডার খেলাধুলা স্টার্ট হইয়া গেছে কি-না? বলা যায় তো না, আইজ কাইলকার ছেলেমেয়েরা, প্রেমের আগেই বোডি ছাইন্যা নেয়, তে আর বিয়া? কিন্তু প্রেমিকের মারে এতদূর ভাবতে দেয় না সুন্দর মতো চালাক ম্যায়াডা, কয়, আন্টি হঠাৎ এত সাজুগুজু, বান্টিদের বাসায় যাবেন বুঝি?
কী যে কও না। তুমার আঙ্কেল মরছে আইজ পুনরো বছর, তারপরে তো আর সাজি না। নিউমার্কেটে যামু তাই এট্টু শাড়িড্যা বদলাইছি খালি। বলে সরু চোখের ভুরু জমিয়ে হাসেন আন্টি। আর ম্যায়াডাও বোঝে ওষুধে কাজ হচ্ছে না, তাই আরেক ডোজ মারে। তারপরও আপনাকে দারুণ লাগছে, আন্টি। অবশ্যি আপনি এমনিতেই সুন্দর।
এবার হয়তো আন্টি ধরাশায়ী কিংবা তারও তাড়া আছে বলে বাতচিৎ খাটো কইরা আনে, হেইৎ! আলাই বালাই। এইসব কওন লাগে না। তা তুমি এহন আইলা, রুকনে তো ঘুমায়?
ম্যায়াডা এইবার আকাশ থিক্যা পানিতে পড়ার অভিনয় কইরা বসে, হায় আল্লা ওর কালকে টিউটোরিয়াল... এখনও ঘুমাচ্ছে? আমি কত কষ্ট করে নোট যোগাড় করে আনলাম আর ও ঘুমাচ্ছে! রুকনের মা খউপ সুন্দর মতো ম্যায়াডার অভিনয় দেইকা হয়তো মনে মনে বলে, এই সুমস্ত পার কইরা আইসিরে মাগী! কিন্তু পুলার ডরে মুখে কয়, তাইনি? তা রুকনে তো আমারে কিছু কইল না। যাইগগা তুমি ভিতরে যাইয়া বহো, রহিম্যা রুকনেরে ডাইক্যা দিবনি। আমার আবার হাড়াহাড়ি বলে আন্টি নিউমার্কেটের উদ্দেশে রওনা দিলেন। তবে তিনি নিউমার্কেটে যাবেন কি-না, আমরা কিন্তু তা জানি না। তার জন্যও হয়তো কোনও আক্কাস কুদ্দুস কিংবা ইলিয়াস সাব অপক্ষোয় বইসা আছেন। আন্টি গেলেই তার বান্টি ফাটাবেন তিনি, নিরাপদ কোনও স্থানে গিয়ে। তাই বলা নি®প্রয়োজন, মানুষের যৌন জীবন খুব গোপন। ক্যারা কারে দিয়া বেড়ায়, বলা মুশকিল। যেইখানে গাঞ্জা বিক্রেতা ফালতু আলী লোকের কাছে যত্রতত্র কইয়া বেড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও এক ম্যাডামের প্যাট কাটলে আলীর ট্যাকার কোক এহনও পাওয়া যাইবে, সেইখানে কুনো কিছুই আর অনবিশ্বাস করার নাই। জগতের সবই তখন সবই হইতে পারে থিওরির তলে পড়ে।
সে যাই হোগ্গা, এইদিকে, ঘুমের মইধ্যে রোকন একটা খরগোশ জবো করবার নুইছিল ব্যাপক জোশে। খরগোশটা প্রথমে তার খাটের তলায় আছিল। তারপর দৌড় দিয়া পলাইল একটা ঝুপড়া বনে। রোকন তারে যাইত্যা ধরল খাটের উপরে আর অমনেই খরগোশটার বুকে বুনি গজাইল। বড় বড়। রুকনের চাকুডাও পরিণত হইল একটা ছুরিতে। এবং কন থিক্যা যানি কী হইয়া গেল, রোকন দেখল ওই নিরীহ খরগোশটার চাইর হাতপাও বাঁইন্ধা সে নিজেই সুমানে ছুরি চালাইতাছে। নল্লির মইদ্যে। কিন্তু জবো হইতে হইতেও হইতেছিল না। সে আরও জোরে জোরে কুপায়! কিন্তু কাটে না। নল্লি কাইটা গুল্লরি নগাল রক্ত চিলকি দিয়া ছুটে না। হাতে তার ব্যাদ্না ধইর‌্যা যায়। শরীর দিয়া ঘাম ছুটে। কিন্তু রক্ত পড়ে না। খরগোশও মরে না।
এই সুমায় হঠাশই ঘুম ভাইঙ্গা যায় রোকনের। পিঠে ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পায়। চোখে দেখে পরিচিত জিঞ্জের প্যান্ট। রোকনের মন খুশি হইয়া যায়। দুই হাতে ভর দিয়া রোকন উপরে উঠতে থাকে, সেইমতো সুন্দরমতো ম্যায়াডার মাথাও রোকনের পিঠ থিকা পিছলা যাইতে থাকে। কিন্তু ম্যায়াডা দুইহাতে চাইপা ধরে রোকনরে আর মাথাডা তুইলা নেয় রোকনের ঘাঁড়ের কাছে। চুষনি চুমা কষায়। রুকনে শিউরা উঠে। কিন্তু তারপরও ‘উহ মরলাম মরলাম’ বলে অযথা আহ্লাদ করে। এবং ঠেলা দিয়ে উঠে পড়ে।
কখন আসলে? বলে রোকন তার লুঙ্গি ঠিক করে। কিন্তু এতক্ষণ ধরে স্বপ্নে খরগোশ জবো আর বাস্তবে খাটের কাঠ গুতানো বেকায়দায় পড়ে থাকা লিঙ্গটা লুঙ্গির তলে বেলেহাজের মতো দাঁড়িয়া হাসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোকনের কথা পৌঁছায় না সুন্দর মতো ম্যায়াডার কানে। বরং লিঙ্গের সৌন্দর্য তাকে বেশি বেশি টানে, ওমা ওটা কত বড় হয়ে আছে! রুকনে শরমায় হয়তো। তাই এবার জিজ্ঞাস করে, তুমার কি আজকে আসার কথা ছিল? সুন্দর মতো ম্যায়াডা অবাক হয় খুব। ওমা! তুমি বুঝি জানো না? আজ সাত দিন পার হয়ে গেছে? তখনই রুকনে ঝাপাইয়া পড়ে, সুন্দরমতো ম্যায়াডার উফরে।
পাশের ঘরে রহিম্যা ফুল ভলুমে হিন্দু ছবির গান দেহে এবং কিটিকিটি কইরা হাইসা মরে। যতডা না জনি লিভার আর গোবিন্দর কৌতুকে তার চাইয়্যাও বেশি পাশের ঘরের খচরমচরের আওজে। কারণ বাসা খালি পাইলেই ভাইয়্যা যে তারে নিয়্যাও খচরমচর খেলে। আর আমাদের কাছেও তখন অজানা থাকে না, কোনও এক অনামজাদা ক্লিনিকের কালোমতোন গাট্টাগোট্টা মোট্টা একটা প্যারামেডিক রুকনরে চাবাইয়া চাবাইয়া সাতদিন আগে কইছিল, এক সাপ্তা কুনো লাগালাগি করবেন না। মুনে থাকপো? রুকনে মাথা নাইড়া সায় দেয়। আর সুন্দর মতোন ম্যায়াডা তখন ক্লিনিকের এক নোংরা বিছানায় ভুলভাল বকে, এ্যানেসথাসিয়ার নিষ্ঠুর কামুড়ে।
তাই এই সাতদিন পর কালোমতোন গাট্টাগোট্টা মোট্টা নার্সের শর্ত মাইনা তারা ঝাপিয়া পড়ে একে অন্যের উপর। সুন্দরমতো ম্যায়াডার অনেক কষ্টে যোগাড় করে আনা নোটখানা বিছানায় এলোপাতাড়ি গড়ায়। রুকনে তাতে ঢেঁকির পাড় বসায়। ঢেঁক কুড়কুড় ঢেঁক। পিথিবীর সবই তহন তব্দা লাগা। খালি সুন্দরমতোন একটা খরগোশছানা খ্যান খ্যান কইরা কান্দে আর কয়, আব্বা আফনেরা আমারে মাইরা ফালাইলেন? আম্মা...আফনেরা আমারে মাইরা হালাইলেন! কিন্তু ঢেঁকিতে নোটে তখন তুমুল উত্তেজনা। এসব তাদের কানেই ঢুকে না। কানে তাদের লুহার তালা। সিলগালা।

হুদাহুদি

বহুকাল পর মিউকাহার লগে দেহা
আমার লগে এক নারী ছিল নাম শিপরা বড়ুয়া
মিউকাহার লগে এক পোলা
হের নাম আমি জানি না
মুনে হয়, হে মিউকাহার প্রেম খায়
যে স্বাদের প্রেম মিউকাহা আমারে খিলায় নাই।
অথচ আধ হাত জিউভা বাইর কইরা
কত চাইছিলাম, খাইবার পাশের টিহট।
যাইহোক, মিউকাহা আমারে দেইকা দাঁড়াইলো
নজ্জাই পাইলাম শিপরা বড়ুয়ারে নিয়া।
মিউকাহার বড় চোকের একটা সরু হইয়া
শিপরা বড়ুয়ারে দেকল। কিন্তুক বেশি দেহার আগেই
হেরে আমি কইলাম হের নাম শিপরা বড়ুয়া।
হেউ আমার আমার নগাল বেকার। দুইজনে তাই আস্তাঘাটে হুদাহুদিই ঘুরি। চোকে ফুটাইলাম কুনো প্রেম না খেলার অরহস্যময় সুজাসুজি ভান। মিউকাহার সরু চোখ বড় হইল। কইল, আফনেরে আমি ছরি কইতাম চাই।
ক্যা ক্যা তুমি হামাক ছরি কইতাম চাউ?
মিউকাহা পিউকাহার মতো ভ্রান্ত চোখ বানাইয়া কয়,
না, আফনের কাছে ছরি কওয়ার কারম আছে আমার।
ভূশ কইরা প্যাটের তলপেট থিক্যা
যে প্রেম হারাইয়া গেছিলগা একদা
হেই শালায় ফিরা আইল বেহুদা।
ঘ্যাগের মতোই জমা হইল গলায়
কেমুন কইরা যে কুটকুটাইল, তা বলার সাদ্যি আমার নাই।
হেই দিনকার হেই ববোহারডা আমার ভালো হয় নাই-
বইলা মিউকাহা অফরাদীর নগাল তাকায়।
আমি কই, হেইৎ কী যে কও না তুমি?
তুমারে যা ইচ্চা কওনের অদিকার বহু আগেই দিছি।
মিউকাহা দুঃখিত হয়, লজ্জিত হয়।
তারফরো রাগী গলায় কয়, এইগলা কী কন?
আমার গলায় তহন শয়শ' সাপ সুমানে কামড়ায়।
মিউকাহা চইলা যায় এক সুমায়।
আমি শিপরা বড়ুয়ারে নিয়া ঘুরি। হুদাহুদি।

যুদি কেউ মারে?

কিছু ছয়তামের বাচ্চা আইসা বলল
আমরা তোমাকে মারব।
কিন্তু আমি তাগো কইলাম, আমারে মারন যাইব না
তারা বলল, কেন মারা যাবে না?
আমি কইলাম, কারণ আমার প্যাটে ব্যাদ্না
তারা বলল, আমরা তুমার পোদে মারব।
তারপরো আমি গড়িমসি করলাম।
কইলাম, আমার পোদে একটা বিষফুট হৈছে।
তারা বলল, আমরা বিষফুট বাঁচাইয়া মারব।
আমি কইলাম, তা হৈব না।
মারলে বিষফুটটাই মাইরা দিতে হৈব এটফাস্ট।
ছয়তামের বাচ্চারা তাতে রাজি হৈল না।
ফলে তারা চইলা গেলগা ভুদাই সাইজা
আর আমি বিষফুটের যমত্রনা নিয়া
গুয়া উঁচা কইরা খাঁড়িয়া রইলাম।
যুদি অন্য কেউ মারে?

বিশাখা

আমরা ভালবাসি বিশাখার প্রেম
ও অন্তরের সারল্য নয়,
বুকের মৃদুমন্দ ডিম
তৈলাক্ত তেলে ভেজে
ঝালমুড়ি খেতে।
আহারের পর বাহারী ফুলবাগানে
ছুটে যেতে ও ফুল নয়,
উঁচু হয়ে ফুঁসে থাকা
পুচ্ছের মাপজোক কষি বিশাখার।
বিশাখাও কি ভালবাসে না
সর্ষে তেলে মাখা ছাইতান মাছের ভর্তাভাত
ও প্যান্টালুন গলে সাপের মাথায়
বিশাখার হাসিমুখ হাত?

বলিভদ্র-২

একটা লাররঙের বাল চাছা টিয়া পাকি আইসা কইল
ফাদার দুস্টভস্কি, বলিভদ্র যাইবা?
কইলাম, না যামু না।
টিয়া পাকি কয়, ক্যা যাইবা না?
কারণ আমার বাল পাকে নাই।
টিয়া পাকি নতুন কইরা চুদায়,
ক্যা বাল পাকে নাই?
কইলাম, বয়স অয় নাই তাই।
টিয়া পাকি কয়, ক্যা বয়স অয় নাই?
কইলাম, উলের পুতা বড় অয় নাই তাই।
টিয়া পাকি কয়, উলের পুতা কি?
আমি কই, চুদানির পুলা এইহান থিক্যা যাবি?
টিয়া পাকি কয়, যামু যুদি তুমি বলিভদ্র যাও।
আমি কই, নু যাই তাইলে বলিভদ্রই যাই।

সুভদ্র বাঘ এবং বেলেহাজ বিড়াল(শেষাংশ)

বিড়াল বাহিরে যাইবামাত্র পাটিতে ন্যাটা দিয়া বসিয়া বাঘ ফের বাল কাটিতে লাগিল। কর্ম মনমতো হওয়ার আনন্দে বাঘ গানও গাহিতে লাগিল প্যারালালি, হাসি হাসি পড়বেন ফাঁসি
দেহন চুদাইবেন ভারতবাসী ...
একবার বিদ্যায় দেন মা
ঘুইরা মুইরা আহি...
বিরাট লাটকে মারবেন বলিয়ে
মারলেন ইংলন্ডনবাসী
একবার বিদ্যায় দেন মা
ঘুইরা মুইরা আহিরে...'
এদিকে বেলেহাজ বিড়াল বারিন্দায় আসিয়া ফাঁসিয়া গেল। বারিন্দার মাটিতে কোথাও পাটি পাতা না থাকায় বেলেহাজ বিড়াল ভুদাই হইয়্যা গেলগা।এহন সে কনে বহে?এট্টা ফিঁড়া থাকলেও চলতো। টুল বেঞ্চি নাইলে নাই থাইক। কিন্তু হারাম বলতে.. সুভদ্র বাঘের বাড়ির বারিন্দায় এইসব কুনো ধুনও আছিল না। ফলে বেলেহাজ বিড়াল বুদ্ধি খাটিয়া মাটিতে গুয়া না ঠেকিয়া দুই ঠ্যাঙ্গের উপরে ভর দিয়া বসিয়া রইল। হগ্নিপাতের স্টাইলে। কিন্তু কতক্ষণ? বেলেহাজ বিড়ালের আবার উপরের বডি বড় এবং ওজনদার থাকায় তার নীচের দুই ঠ্যাং বেশিক্ষণ ভার বহন করিতে স্বীকার গেল না।
দুই মিনিট বইতে না বইতেই দুই ঠ্যাঙ্গই কুহান ধরল, আর পারতাছিনা গো..এইবার ক্ষ্যামা দেন.. এইবার আফনে আফনের পুটকি দোফে নামান। কিন্তু বেলেহাজ বিড়াল তা নামায় না সহসা। কারণ বউ কাইলক্যাই বাঘের বাইত্তে আইবার কতা শুইন্যা সবচেয়ে ভালো পুশাকটা সাবান দিয়া ঘইষা ঘইষা ধুইয়া দিছে। তাহাদে শুকানের পর সুন্দর কইরা ভাজ দিয়্যা বালিশের তলায় রাকছিল হারা রাইত। তাহাতে বাটির মইদ্যে গরম কয়লা দিয়্যা ডইল্যা ডইল্যা কইয়্যা দিছে,আইড়াকাইড়া কিছু খাইবান ন্যা য্যান। যেনে হেনে বইবান না কইলাম। এই সাট আগামী সাত দিন পড়ন নাগবো কিন্তুক।
তাই বিড়াল গুয়া দোফে নামায় না। অথচ দুই ঠ্যাঙ্গের কুহানি অস্তে অস্তে বাড়তেই থাহে। ঠ্যাঙ্গে ঝিঞ্জি ধরে পয়লা, তাহাদে জিলকায়। ক্ষেনে ক্ষেনে চিলিকও মারে। কিন্তু বিড়াল গুহা দোফে নামায় না। বরং পাত্তা না দিয়া ভাবতে থাকে অন্য কথা। আর তখনই তার চোখের সামনে ভাইস্যা ওঠে বাল কাটতে থাকা সুভদ্র বাঘের বিরাট বড় ডাস ক্যাপিটাডা। বিড়াল মনে মনেই অবাক হয়..ওরে বাপরে বাপ! শালায় ঘগ্গ গুইনা না যানি কেমুন কইরা মারে! বাঘিনী নিশ্চয়ই আরামে সারা দিন কতা কইতে হারে না।
কিন্তু বিড়াল বেশিক্ষণ ভাবতে পারে না। একদল বিলাতী ইঁন্দুর তার তন্ময়তা ভাইঙ্গা খানচুর কইরা দেয়। বিলাতী ইঁন্দুর জর্মেরপর অবধি কুনো বিড়াল দেহে নাই, সঙ্গতকারণেই তাদের কুনো ধারণাই নাই বিড়াল কি জিনিস। তাই তারা বিড়ালকে তাদের আদরের খেলনা মনে করিয়া আনন্দে খেলতে থাহে।
পক্ষান্তরে আশেপাশে দেশি ইন্দুরের চেহারা দেখলেই যেইখানে বিড়ালের আমোদ আর ধরে না, সেইখানে নিজ গতরের উফর বিলাতী ইন্ধুরের নাচানাচি দেখিয়া তার মাথাখারাপ হইয়া যায়্। মুহূর্তের মইদ্যে থাফা দিয়া চাইর পাঁচটা ধইরা হালায়। আর তহনই তার চোকের সামনে ভাইসা ওঠে বাঘের বিরাট বড় ডাস ক্যাপিটা। তাই ধইরাই আবর আদর কইরা বিলাতী ইন্দুরগুনিরে দোফে নামিয়া থোয়। কিন্তু বিলাতী ইঁন্দুর তো আর এত কিছু জানে না। তাই তারে দোফে নামিয়া থুইলেই কি আর সে দোফে থাকে? থাকে না। বরং নতুন উদ্যম আর উত্তেজনা নিয়া নতুন পাওনা খেলনার নগে খেলায় মাতিয়া ওঠে যারপরনাই।
বিড়াল প্রথমে হেইশ...হৈৎ হৈৎ ধেইশ ধুৎ ধুৎ বলিয়া গায়ে চড়িয়া বসা বিলাতী ইন্দুরগুলোকে দমনের চেষ্টা নেয়। কিন্তু বিড়ালের কোনও চেষ্টায় কামে আসিল না। বরং বিলাতী ইঁন্দুর দল ব্যাপক জোশে ঝাপিয়া পড়ল বেলেহাজ বিড়ালের উপর। কেউ চড়িল বিড়াল মাথায়, কেউ কানে কেউ বিড়ালের ছুট্ট পক্কুতে পর্যন্ত কামুড় গছাইয়া দিল। তখন আর বিড়াল সহ্য করিতে পারিল না। এমনিতেই বাঘের বিরাট বড় ডাস ক্যাপিটা দেইখ্য ব্যাপক শরমিন্দা হওয়া বিড়ালের লেস ক্যাপিটা পক্কু যহন আক্রান্ত হৈল তহন আর ধৈর্য ধরিয়া বইস্যা থাহার মাল না বিড়াল। তাই সে লেস ক্যাপিটার মুণ্ডি আর হুলের পুতা কামড়িয়া ধরা বিলাতী ইন্দুর দুইডার নেজ ধইরা এমুন আছাড় মারল, যে আছাড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে গুয়া দিয়া ফুছ কইরা দম বাইরিয়া গেল ইন্দুঁর দুইডার। এই দেখিয়া অন্য বিলাতী ইন্দুরগুনি ব্যাপক ভয়ে পিচু হটে গেল। আর তহনই বিড়ালের চোকে ভাসিয়া উঠিল বাঘের ডাস ক্যাপিটাডা। উপায় অন্তর না দেখিয়া বিড়াল বারিন্দার মাটিতেই গর্ত খুঁড়িয়া মৃত ইন্দুরগুনিকে মাটি চাপা দিয়া থাপথুপ দিতে লাগিল। আর তখনই বিড়াল টের পাইল তার পেছন হাজির হয়েছে সত্যিকারের বিরাট ডাস ক্যাপিটা।
বিড়াল ঘুরিয়া বলিল, স্যার কহন আইসলাইন?
বাঘ বলিল, তুমি যখন আমার বিলাতী ইঁন্দুরগুনিকে মারিয়া গাড়িয়া ফেলিবার উপক্রম করিতেছিলে, তখনই আসিয়াছি।
হতভম্ব বিড়াল বলিল, স্যার এইডা কী কইলান?
বাঘ বলিল, কেন, যাহা সত্য তাহাই বলিলাম।
এইবার বিড়াল বলে, স্যার আমনে না এট্টু আগেই আমারে কইলান অপ্রিয় সত্য বলতে নাই।
সেইডা তো তর ক্ষেত্রে হারামজাদা, বইলা বাঘ মিচকি মিচকি হাসে। কিন্তু কেউ এট্টু ভালো কইরা খিয়াল করলেই দেখতে পাইত তার দাঁত আসলে হাসতাছে না। সুফ্ফ কিড়মিড়ানি দিতাছে।
বিড়াল আরও অবাক হয়, স্যার এইডা কি কইলান? এক বাজারে কি কুনোদিন দুই ভাউ হইতারে?
বাঘ কয়, তরে ক্যারা কইল তর আর আমার বাজার এক?
বিড়াল কয়, তাইলে স্যার আফনে কইবার চাইতাছেন এক বাজার না?
কইবার চাইতাছি না..কইতাছি, বইলা বাঘ দাঁত কিড়মিড়ানি বাড়িয়া দেয়।
বিড়াল থুম ধইরা থাহে। কী যানি ভাবার চেষ্টা করবার যায়।
কিন্তু তার আগেই বাঘ তারে জিগায়, আইসক্যা তুই কী দিয়া ভাত খাইছত?
বিড়াল এইবার খুব সপ্রতিভ হয়, নিজের বিষয় পাইয়া। কয়, ক্যা ভালো কইরা পিয়াজ কাছামইচ মাইরা দুই পেলেট পান্তা ভাত খাইয়া আইসি।
-আর আমি কী দিয়া খাইছি জানোস? বাঘ কয়।
বিড়াল কয়, না স্যার.. জানি না। কী দিয়া?
বাঘ কয়, বাইত্তে পচুর ফল ফ্রুট গড়াগড়ি পাড়তাছে...ভাত পুলাউ মুরগী গরু শুয়ার কোনডার মাংসরই অভাব নাই...ক্ষির সেমাই অমুক তমুক কুনডার কতা কমু তরে..শেষমেশ এইন্যা কুনোডা না ধইরা একটা বাডগাডে কামুড় দিয়া থু কইরা ফালিয়া দিছি-এইডাই হৈল আমার আইজ সকালের নাস্তা।
বিড়াল আবারও অবাক হয়। কয়, তাই নিহি। তা বাডগাডটা কনে ফালাইছেন?
বাঘ চতুর চোকে বিড়ালরে দেহে। এইবার সত্যিই মিচকি মিচকি হাসে আর কয়, ক্যা? তা দিয়া তুই কী করবি?
-না, মানে কুনদিন খাই নাই তো? তাই?
বাঘ কয়, ধূর ব্যাটা এহনও ওই জিনিস থাকে। কুত্তায় খাইয়া ফালাইছে কবে।
বিড়াল কয়, তাইলে স্যার..আফনের বাসা থিক্যাই একটা দেন।
বাঘ কয়, ধুশ ব্যাটা.তুই কতাই বুজস না। সারাজীবন ধইরা কচু ঘেচু খাইয়া তর অভ্যাস..হঠাশ কইরা বাডগাড খাইলে তর প্যাট কাটপো না?
বিড়াল কয়, কাটুক। একদিন প্যাট কাটলে কিছু অইব না।
বাঘ কয়, এই জুইন্যেই তরে কইছিলাম। তর বাজার আর আমার বাজার এক না। তা তুই আমারে এহন ক, এই যে আমার বিলাতী ইঁন্দুর দুইডা তুই মারলি..যার একটা কিনতেই আমার খরচ হইছে সাড়ে পাচশো ট্যাহা..এই এগারোশো ট্যাহা তুই আইজক্যা কন থিক্যা দিবি?
বিড়াল ভুদাই হয়, মানে? স্যার আফনে এইন্না কী কন। একটা ভুল হইয়া গেছেগা..তাই বইলা আফনের মতো এট্টা মান্নিগুন্নি নোক আমার কাছে জরিপানা চাইব..এইডা আমি ভাবতেই পারি না।
বাঘ কয়, তরে তো কিছু ভাববার কই নাই? ট্যাহা ফালিবার কইছি। বাইনচোদের বাচ্চা.. বাডগাড চুদাও..ট্যাহা ফালা। বইলা বাঘ ধমক কষায়।
বিড়াল সত্যি সত্যিই ভাবতে পারে নাই সুভদ্র বাঘের আচরণ এই রকম হইতে পারে কোনও কালে। তাই সে চমকায়। তার চোখ ছল ছল হয়। যে একশ' ট্যাকা তার পকটের তলে প্ইড়া আছিল অন্ধকারে, তারে আলোয় টাইন্যা আইন্যা কয়, আসলেও আফনের বাজার আর আমাগো বাজার এক না। এই নেন।
বাঘ একশ' ট্যাকা পাইয়া মুনে মুনে খুব খুশি হয়। কারণ এই একশ' ট্যাকা দিয়াই সে সব কয়ডা ইঁন্দুরের বাচ্চা ঢাকা শহর থিক্যা কিন্যা আনছিল। কিন্তু মুখে কয়, এই একশ' ট্যাহা দিয়া কী হইব? আর এক আজার ট্যাকা কো?
বিড়াল কয়, স্যার আমার কাছে আর নাই। বইলা কান্দে।
বাঘ এইবার এট্টু নরম হয়। কয়, ঠিকাছে পরের বার পুরা ট্যাকা নিয়া আইবি। মুনে থাকপো?
বিড়াল কয়, থাকপো স্যার।
বাঘ কয়, চল তাইলে ভিতরে যাইয়া বসি। আমরা আইজক্যা পড়ুম..উন্নত নৈতিকতার পাঠ।
বিড়াল কয়, না..স্যার। আমি আইজক্যা আর কিছু পড়ুম না। বাইত্তে যামু গা।
বাঘ কয়, ক্যা..? এহনই যাবি ক্যা? আমি কত খাটাখাটনি কইরা সব যোগাড়যন্তর কইরা রাকছি। আর তুই কস এহন যাবিগা..ক্যা?
বিড়াল কয়, শইলডা ভাল্লাগতাছে না।
বাঘ কয়, ঠিকাছে যাগা।
বিড়াল রিক্ত নিঃস্বের মতো চইলা যাইতে থাহে। বাঘ পিছন থিক্যা ডাকে..এই এই শোন শোন..বিড়াল অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেছন ফিরে। বাঘ কয়, বাডগাড নিয়া যাবি না?
বিড়াল কয়, না।

সুভদ্র বাঘ এবং বেলেহাজ বিড়াল

একটা সুভদ্র বাঘ বাটিতে বসিয়া বাল কাটিবার নুইছিল। চানের আগে সাফ সুতরো হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু একটা বেলেহাজ বিড়াল কতা নাই বার্তা নাই হঠাশ বাটিতে ঢুকিয়া বাল কাটিবার পাটিতে বসিয়া গেল।
সুভদ্র বাঘ প্রথমে ভুদাই হইলেও পর মুহূর্তেই থাপথুপ দিয়া কর্তিত বাল সামলাইয়া ফেলিল গামছায়। এবং লুঙ্গিতে লিঙ্গ ঢুকাইয়া কোনওক্রমে উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, হাহা হাহা হাহা কখন এলে বিড়াল ভায়া?
বেলেহাজ বিড়াল অতশত বুঝে না। তাই ঠাশ করিয়া বলিয়া ফেলিল, স্যার আফনে যহন বাল কাটপার নুইছিলেন তহন আইছি।
কছ কি খানকির পুলা...জাতীয় ডাইলক বাঘের গলা দিয়া প্রায় বাইরিয়াই গেছিল। কিন্তুক শেষমুহূর্তের চেস্টায় বাঘের আলা জিবল্যা তারে তা বলা থিক্যা ঠেকিয়া দিল। ফলে বাঘ গরগর করিল কতক্ষণ। তারপর বলিল, ইহা তুমি কী ধরনের কথা বলিলা?
বিড়াল কহিল, ক্যা স্যার? সত্য কথা বলিলাম।
বাঘ বলিল, সব সময় কি সত্য বলা ঠিক?
বিড়াল কহিল, কন কি স্যার! আপনেই তো কইছেন সব সময় সত্য কতা চুদবা। কখনো মিথ্যার পুটকিও মারবা না।
বাঘ বলিল, কেন আমি ইহা বলি নাই যে অবশ্যই তা ভদ্রতা সহযোগে?
এইরম কতা কইছিলেন নিহি, বলিয়া সন্দিগ্ধ হয় বিড়াল।
বাঘ বলে, বলেছিলাম তো বটেই। শুধু কি তাই? এও বলেছিলাম যে কখনো অপ্রিয় সত্যও বলবে না। এই যেমন ধরো কানাকে কানা বলিবে না, খোঁড়াকে খোঁড়া...
বিড়াল বলিল, হ বুজজি স্যার। আফনে যহন বাল কাটপার নুইছিলেন...তহন যুদি আফনে আমারে জিগাশ করেন কহন আইলা? তহন আমি কমু, স্যার আফনে যহন মধুরশা খাইবার নুইছিলেন তহন আইসি। তাইতো?
না। তা নয়। বাঘ বলিল।
বিড়াল বলিল, তাইলে কী কমু স্যার।
কিছুই কহিবে না। বাঘ বলিল। তিনি আরো বলিল, তবে তুমি যুদি কোনো ভর্দলুকের গৃহে প্রবেশ করিতে চাও, তবে অতি অবশ্যই উত্তমরূপে কড়া নাড়িয়া আর যুদি কড়া না থাকে তবে অধমরূপে গলা খাকারি দিয়া গৃহে প্রবেশ করিবে। নচেৎ তুমাকে হয়তো নানারূপ অস্বস্তির শিকার হইতে হইতে পারে।
বিড়াল কহিল, মানে?
বাঘ কহিল, এই যেমন ধরো তুমি এরূপ বিনা কোনো বাটিতে ঢুকিলে আর দেখিলে কোনো নারী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুটাকে দিয়া বুনি টানাইতেছেন। কিম্বা ধরো গরমের গুমোট দশা হইতে পরিত্রাণ আশায় একদল নারী উদোম গতরে তাদের বুনিগুনিকে বাতাস খিলাইতাছে। ব্যাপারটি তুমার জন্য অস্বস্তির নয় কি?
কী যে কন স্যার। আমার তো ওই ধিরিশ্য দেইকা খুবোই আমোদ লাগিব।
মনে মনে কছ কি খানকির পুলা বলিতে বাঘ এবার ছাড়িল না। কিন্তু মুখে বলিল, তুমার হয়তো তাহা দেখিয়া আমোদ লাগিবে..কিন্তু ওইসব নারীদের তাহা নাও লাগিতে পারে। বলিয়াই বাঘ আবার নিজেকে শুদ্ধ করে নিল, নাও লাগিতে পারে কি, অবশ্যই লাগবে না।
বিড়াল এইবার বুজল, হু বুজজি স্যার। থাইক ইয়ার পর থিকা আমনের বাড়িতে গলা খাকাড়ি দিয়াই ঢুকুমনি। তবে স্যার আমি সত্যি সত্যিই আফনেরে ছাড়া আফনের বাড়ির আর কিচ্চু দেহি নাই কুনোদিন।
বাঘ রাগে রাঙা হইল আবার। কিন্তু তাহা দেখিবার মতো চোখ ছিল না বিড়ালের। তাই বিড়াল আরো কহিল, গুস্বা করিবেন না স্যার। এট্টা কতা কইতাম। জরুলি।
বাঘ বলিল, বলো।
স্যার আমনের কি বাল কাটা শ্যাষ হইছিল? না হৈলে স্যার আমি দশ মিনিটের নিগ্যা বারিন্দায় গিয়া বহি। আমনে বাল কাটিয়া লন? পরে নীতিজ্ঞান বিষয়ে আমনের কাছথন পাঠ লইবনি ক্ষণ।
এইরূপ অধম ছাত্রের কাছে বাঘের সকল ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় বাঘ খোলসমুক্ত কিছুটা। তাই এইবার সেও বলিয়া উঠিল, বাল কাটিবার পর আমি চানেও ঢুকব। অতএব তুমি দশ মিনিট নয়, অর্ধঘণ্টা অপেক্ষা করো। এই বলিয়া বাঘ যে গামছায় বাল সামলিয়ে ছিল, তাহা সপাটে ঝাড়া দিয়া কাঁধে লইয়া নিল। ফলে মুক্ত পাখির ন্যায় বাল গুলি উড়িয়া গিয়া ছড়াইয়া পড়িল ঘরময়। তার খানকতক আশ্রয় নিল বেলেহাজ বিড়ালের চোখেমুখেও। তা থেকে বাঁচার লক্ষ্যেই কি-না বিড়াল হাড়াহাড়ি করেই বারিন্দাভিমুখী হইতে ছিল। কিন্তু বাঘ ডাকিয়া উঠিল, খবর্দার বিড়াল। আমি কিন্তুক বিলাত হইতে কতিপয় বিলাতি ইঁন্দুর ক্রয় করিয়া লইয়া আসিয়াছি। অতএব তুমি যেন উহাদের কোনোরূপ বিঘ্নের কারণ না হও। বিড়াল বলিল, জ্বি আচ্ছা স্যার।
চলবো?

ডাক্টার সামঝান ও নীলরঙা ঘুড়া

একটা নীলরঙা ঘুড়া হঠাশ ডাক্টার সামঝানের চ্যাম্বারে যাইয়া উপুস্থিত হইল। দেইখা ডাক্টার সামঝান কয়, কীরে তুই আবর কীয়ের নিগ্যা?
গিরায় ব্যদ্না। চিকিৎসা দেন, ডাক্টার সামঝান বইলা বাঁইহাতের বুড়ি আঙ্গুল দিয়া গিরা ডলে নীলরঙা ঘুড়া।
ডাক্টার সামঝান কয়, পাতর চাবিয়া খা। ভালা হইয়া যাইবগা। আর যুদি ব্যদ্না না যায়, তাইলে কাইলক্যা একটা জিলাফা চাবাইয়া খাইস। ব্যদ্না টিকপো না।
তারপরো যুদিল ব্যদ্না না হারে ডাক্টার সাপ? বইলা ভুদাইয়ের নগাল চোখ বানিয়া চাইয়া থাহে নীল ঘুড়া।
ডাক্টার সামঝান চোক বদ্দ কইরা কইয়া হালায়, না হারলে হারবো না। কত মাইষ্যের গুয়ার ব্যতাই হারা জীবন হারে না। আর তর তো গিরায় ব্যদ্না! উয়া হারলেই কি না হারলেই কি?
না হারলে কি মানে? না হারলে আমি ব্যদ্না পামু না? বইলা বড় বড় চোক নিয়া চাইয়া থাহে নীল ঘুড়া। ডাক্টার সামঝানের দিকে।
-পাবি। খুব ব্যদ্না পাবি। ব্যদ্নার চুটে তর গুয়া দিয়া গু বাইরিয়া যাইবগা। তাতে তর কুনো অসুবিদা আছে? বলে ডাক্টার সামঝান আড়চোখে নীলঘুড়াভিমুখী তাকায়।
-অসুবিধা আছেই তো? বলে ঘুড়ার বড় বড় চোখ বিস্ফারিত হয়।
কী ধরনের অসুবিধা আছে তর? এক চোক বদ্দ কইরা আরেক চোখ দিয়া কয় ডাক্টার সামঝান।
-বড় ধরনের অসুবিদাই আছে আমার। বলে নীল ঘুড়া।
এইবার ডাক্টার সামঝান নইড়া চইড়া বহে। আর কয়, খাড়া খাড়া। তরে তো আমি ছুটো ধরনের নোক মুনে করছিলাম। তর তো বড় ধরনের অসুবিদা থাহার কতা না। দেহিছে, ঠ্যাঙডা আইগা।
ঘুড়া ঠ্যাঙ আইগিয়া দেয়। ডাক্টার সামঝান চোক বদ্দ কইরা গিরায় হাত না দিয়া গুয়ায় হাত দেয়। তারপর কয়, ওরে! তর তো গিরায় ব্যদ্না না গুয়ায় ব্যদ্না। আর সব বড় মানুর নগাল। আমি তো তরে পথম দেইখা বুজি নাই, তুইও বড় মানু। আর বুজুমই বা ক্যামনে? যে পুশাক আশাক নিছস, তাতে তো রাস্তার ছুটোনুকরাই তরে ভাই কইয়া ডাক দিয়া বইব।
ঘুড়া গুয়ায় সুড়সুড়ি খাইয়া কয়, প্যাচাল বাদ দেন। এহন ব্যদ্না ক্যামনে যাইব তাই কন।
ডাক্টার সামঝান এইবার দুইচোখ পুরা খুইলা কয়, আদঘণ্টার এট্টা ইনজিকশন দেওন নাগব তরে। তাইলে ব্যদ্না তো যাইবই, উফুরন্তু তর শইল্যের জার্মও ছু্ইটা যাইবগা।
-তাইলে তাই করেন। গুয়া আইতান বাদ দেন। বইলা ঘুড়া এট্টু সইরা দাঁড়ায়।
ডাক্টার সামঝান কয়, ক্ষেপস ক্যা? মাগনা মাগনা আদঘন্টার ইনজিকশন খাইবা, আবার ক্ষ্যাপ্পা, তাই কি হয়? হুতি দিয়া খাঁড়া। এইবার ধমক কষায় ডাক্টার সামঝান।
-হুতি দিমু ক্যা? ঘুড়া তেরিয়া হইয়া কয়।
-নাইলে তর গুয়ায় ইনজিকশন দিমু ক্যামনে? বইলা ডাক্টার সামঝান ঘুড়ার ঘাঁড়ে ধইরা ঘুড়ারে হুতি দিয়া খাঁড়াইতে সাহায্য করে। ঘুড়া হুতি দিয়া খাঁড়ানোর পর কালা কাফড় দিয়া ঘুড়ার চোখ বান্দে ডাক্টার সামঝান। আর কয়, বড় ধরনের ইনজিকশন তো দেইখা কুলিবার পারবি না। কত বড় মানু তুমা ফিট খাইয়া গেলগ! আর তুই তো তুইই! তারপর বান্দে ঘুড়ার হাতপাও।
সব রেডি হোয়ার পর ডাক্টার সামঝান আদঘন্টার ইনজিকশন পুনে এক ঘন্টা ধইরা মারে। ঘুড়া খালি হুহু কইরা কান্দে। তার গিরার ব্যদ্না গুয়ায় স্থানান্তরিত হয় সারাজীবনের নিগা।
অতএব হে নমশূদ্রগণ এবং ভুদাই বামন, ভুলেও ডাক্টার সামঝানের শরণাপন্ন হইয়ো না। হইলে আদঘণ্টার ইনজিকশন সারাজীবন ধইরা খাওন নাগব।

বৃষ্টির মা

লোকেরা ভালবাসে মেয়েলোকদের
আর মেয়েলোকরা ভালবাসে ছেলেলোকদের।
আর আমাকে ভালবাসি শুধুই আমি
তাই কী দরকার এই ঝুম বৃষ্টি আর কড়া শীতের দিনে
ফালতু বাইরে যাবার? অফিসের মাকে চুদে
রয়ে যাই তাই একা একা নিজের ঘরে।
মনে মনে টিভি দেখি পুরনো বান্ধবী, সঙ্গী সাথী আপনার জন
আর আবিষ্কার করি সকলের সাথেই সম্পর্ক
আমার আধপোড়া সিকারেটের মতোন।
খুব করে বৃষ্টির মাকে চুদবার ইচ্ছা হয় তখন।

লোকটা ফালতু ছিল

লোকটা আমার চাইতেও ফালতু ছিল। ব্যাপারটা খাতির হওয়ার প্রথম দিকে টের পাই নাই। কিন্তু খাতির যহন পিতলা খাতিরের মুহী টার্ন নিল তখনই অস্তে অস্তে টের পাওয়া গেল।
লোকটা বু্ইড়া বয়সেও বিয়া করে নাই ক্যা? এই প্রশ্নেই মূলত খাতির পিতলা খাতিরের দিকে যাইবার নুইল। আমিও আর থামাবাইর পারলাম না। লুকটা পুলাহানের নগাল খল খল কইরা হাইস্যা উটল আর কইল শাপলু ভাই যে কী কন না? নিজের বয়সের চেয়ে বড় মানুষরে ইয়ার্কি দুস্ত হিসাবে পাইতে আমোদই লাগে। তাই আন্তরিক এট্টা ধমক দিয়া কইলাম, ধেইশ মিয়া যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দেন। কতা ঘুরাইবার চিষ্টা নিয়েন না হাইস্যা উড়িয়া দিয়া।
তাও লুকটা খলখল কইরা হাসে। পুলাহানের সরলতা নিয়া। বুঝলাম পাতরে ফুল ফুটপ না। অন্য জাগা দিয়া আক্রমণ করন নাগব। কইলাম, যাইগ বিয়া করেন নাই, করেন নাই। ভালো করছেন। তা যৌবনে প্রেম খাইছেন কয়ডা?
লুকটা চা খাইবার নুইছিল তাড়াইয়া তাড়াইয়া। কিন্তু আমার নতুন প্রশ্নের গুতায় তার মুকের আর কাপের চা দুইডাই পইড়া গেলগা হাসির তোড়ে। হাসতে হাসতেই কইল, শাপলু ভাই কি আমারে চাও খাইবার দিবেন না। আমিও হাসি আর সব চতুর মানুষের মতো।
তারপর লুকটা কইল, একটা মেয়ে মুনে হয় আমারে ভালবাসে।
আমি কইলাম, মুনে হয় ক্যা? আপনে তারে জিগান নাই?
না। এহনো জিগাই নাই। তয় এইবার জিগামু। এই বলে লুকটা থামে। আমি তারে কই, তাড়াতাড়ি জিগাশ করেন। জিগাশ কইরা খাওয়া দাওয়া শুরু কইরা দেন।
লুকটা খল খল কইরা হাসে। হাসি থামলে মেয়ে মাল কেমুন এ বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহ করি লুকটার কাছ থিক্যা। ইয়ার মইদ্যেই মনে মনে দেকতে থাকি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের কালো সুন্দরমতোন ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ারত ওই মেয়েটার সাতে লুকটার সাংঘাতিক খাওয়া দাওয়া স্টাট হইয়া গেছে।
এরপর যেদিনই দেখা হৈছে সেদিনই তত্ত্ব তালাশ করছি, কদ্দূর আইগাইলেন? জাইন্যা, তাদাগা দিতাম তাড়াতাড়ি করেন মিয়া। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শুরু করেন। খাওয়া দাওয়া খারাপ কিছু না বইলা অভয়ো দিতাম। লুকটা শুধু হাসে।
এরপর একদিন লুকটার সঙ্গে আমার পিতলা খাতির টুশকা খাইয়া গেল, যেদিন লুকটা আমার কাছে পঞ্চাইশটা ট্যাকা চাইয়া বইল। কইল শাপুল ভাই পঞ্চাইশটা ট্যাকা দেন না? কাইলক্যা দিয়া দিমুনি।
অভিজ্ঞতা থিকা জানি, ৫০ ট্যাকা চাওয়া লুক কাইলক্যা ক্যা কুনোদিনই ট্যাকা ফিরত দেয় না। তাই জিবলাটা আপসেই তিতা হইয়া গেলগা। তাছাড়া আমি নিজেই খাই জুম্বার খিছুরি।
তাই ঈষৎবিরক্ত হইয়াই ৫০ ট্যাকা বাইর কইরা দিয়া দিলাম। পরের দিন লুকটারে আগে থিক্যাই যারা চিনতো তাগো কাছে তত্ত্ব তালাশ করলাম, লুকটার এইরকম বদভ্যাস নিয়িমতই কি-না। যখন জানলাম লুকটার বদভ্যাসটা নিয়মিতই তখন সতর্ক হইয়া গেলাম।
এরপর বহুদিনই দেখা হৈছে। সতর্ক থাকার কারণে আলাপ আর জমে নাই। এইভাবে বেশকিছু দিন কাটার পর লুকটা আরেকদিন ৫০ ট্যাকা চাইয়া বসল আমার সতর্কতা সত্ত্বেও। জিবলাডা বেশ তিতা হঈয়া গেলগা। তারপরো কইলাম, ৫০ ট্যাকা দিবার পারুম না, ২০ ট্যাকা দিবার পারুম। লুকটা কইল তাই দেন। তারপর লুকটা তার ভাগ্যবিড়ম্বনার কাহিনী কইতে লাগল, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদরা তাগো ক্যামনে কইরা ঠকাইছে এই জাতীয় গল্প। কিন্তু গল্পগুইল্যা শুনবার মন আমার ছিল না তখন।
এরপর সংসারে চাকরি বাদে কীভাবে উপরি পয়সা আয় করা যায়-সে ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার চিষ্টা নিলাম। ঘ্যাজঘ্যাজ কইরা দুইডা স্ক্রিপ্ট লেইকা বইলাম টিবি নাঠকের। ম্যালা মাইষ্যের কাছে হুনছি, খালি স্ক্রিপ্ট লেইখাই নাকি বাড়ি গাড়ি মাগীবাজি করা যায়। কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতায় দেকলাম, এইসব ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। কারণ পলগো স্ক্রিপ্ট দুইডা পছন্দ হৈলেও তারা বছরদেড়েক কুনো প্রডিওসার খুঁইজা পাইল না। না খুঁজলই না। ক্যা জানে? কিন্তু তখন আমার রোখ চাইপা গেছেগা। নাটক বানামুইগোছের। গেলাম বন্ধু বান্দবের কাছে যারা টিবি নাঠক বানায়। স্ক্রিপ্ট দেইখা কৈল চলব। তবে দুস্ত আনিসুজ্জামান, মমতাজ স্যারগো স্ক্রিপ্ট বানাই আমি। তুমি এ লাইনে নতুন। তুমারে কেউ চিনে না। তুমি যুদি কুনো টিবি থিক্যা গ্রিরিন সিগন্যাল নিয়া আসতে পারো তাইলে আমি আছি। গেলাম টিবিতে। বাংলাভিশমে। ওরা স্ক্রিপ্ট পইড়া কইল বানাইয়া নিয়া আহেন। দুস্তরে কইলাম। এইবার দুস্তর নানান অর্থনৈতিক কিরাইসিস দেহা গেল। মুনডাই তিতা হৈয়া গেলগা।
মন তিতা দেইখা ইভা আইগিয়া আইয়া কৈল আমার গয়না বেইচা দেই তাও নাটক বানাও। আমি কইলাম, না, তা হয় না। ইয়ার পর নানা ইতংবিতং কইরা ইভার মা অর্থাৎ শাশুড়িআম্মা এক লাখ ট্যাকা ধার দিবার চাইল। কইলাম পরিচালক তানভীর ভাইরে। কৈল, নিয়া আয় বানাইয়া পারুম। নিয়া আইলাম। কাম শুরু। সিডিউল যেদিন ফালাইলাম শুটিনের, তার আগের দিন থিক্যাই আকাশ কানবার নুইল উউ উউ কইরা। তিন নম্বর বিপদ সঙ্কেত। শুটিন প্যাকআপ হৈয়া গেল। দশ আজার বাইরিয়া গেল। আতের তল দিয়া।
এরপর আবারো শুটিনের সিডিউল করলাম। এইবারো একই সিন তিন নম্বর বিপদ সঙ্কেত। আবারো দশ আজার বাইরিয়া গেল। আঁলিয়সের বন্ধু বান্ধবরা আমাগো দেইখা হাসতে হাসতে সান্ত্বনা দেয়। আমরা শান্ত হই। আবারো সিডিউল ফালানের পাঁয়তারা করি। কিন্তু ঈদ আইগিয়া আহায় কুনো নাট্যশিল্পীর সিডিউলই আর ধরা হারি না।
তো এই যহন অবস্থা। হঠাশ কন থিকা যানি শুইনা লুকটা শাহবাগে আহে। কয়, শাপলু ভাই শুনলাম আপনে নাকি নাটক বানাইতাছেন?
আমি কইলাম, হুম। কয়, আমারে কিন্তু নিয়েন আফনের নাটকে। আমি কইলাম, আফনে কী করবেন আমার নাঠকে?
কয়, ক্যা, অভিনয় করুম। কইলাম, আফনে অভিনয় পারেন না বড়?
কয়, কীযে কন না শাপলু ভাই। আমি টিভি নাটকে অভিনয় করতাছি না? এইযে ওইদিনও শুটিং করলাম ওই নাটকে। ওইদিন হেই নাটকে।
আমি কইলাম, বুজজি। তা আফনেরে যে আমার নাঠকে নিমু, কী দিবেন আমারে?
কয়, কী চান আফনে?
কইলাম, শ পাঁচেক ট্যাকা দিবেন এবং এক বোতল কেরু।
লুকটা পুলাহানের নগাল হাইসা উটল খলখল কইরা। কইল, দিমু অসুবিদা নাই। বাবুল ভাই পাশ থিকা কইল, একটা মাগীর ব্যবস্থাও কইরা দিওন লাগব।
লুকটা কয়, তাও সই।
আমি কইলাম, আফনে ক্যামনে মাগী দিবেন। আফনে মাগীবাজি করেন নিহি?
কয়, না আমি করি না। আমার এক বন্ধু আছে। হোটেলে টোটেলে যায় টায়। এইবার আমরা কলকল কইরা হাসি চতুর মানুষের মতো। তারপর লুকটা কয়, না, সত্যি শাপলু ভাই আফনের নাটকে আমারে একটা ভালো পার্ট দিয়েন, হেবি কান্নাকাটির অভিনয় আছে এইরকম।
আমি কইলাম, আমার নাটকে কুনো কান্নাকাটি নাই। তয় আফনের একটা চরিত্র আছে। এক হিন্দু বুইড়া ব্যাটার। যে গাঁজা খায় আর তুরুপ তুরুপ কতা চুদায়। এইবার লুকটা নইড়া চইড়া বহে আর কয়, হ এইডাই আমারে দেন এই পাটটাই দেন। আমি কই, দেহি পরিচালকের লগে কতা কইয়া, আফনেরে পছন্দ করে নিহি। এরপর লুকটা মাঝেমাঝেই ফুন দেয় আমি বিরক্ত হই। কই, সিডিউল হৈলে আফনেরে আমি কমুনি। আপনে ট্যাকা আর মদের বোতল রেডি রাইখেন। লুকটা হাসে আমি হাসি না। কারণ তানভীর ভাই নতুন সিডিউলের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারে না। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই। তানভীর ভাই জড়ায় তার পারিবারিক নানা গিয়ানজামে।
তারপর লুকটার সঙ্গে দেখা হয় আবার আজিজ মাকের্টে, যহন আমার নাটকের নিশা কাটছে। লুকটা কয়, শাপলু ভাই কিছু ট্যাকা দেন না। আমি মুখচোখ শক্ত করে কই, আমার কাছে ট্যাকা নাই।
লুকটা কয়, পাঁচ দশ ট্যাকাও হবো না? আমি কই, না। অথচ আমার পকেটে তখন একশ' ট্যাকার একটা নোট এবং কিছু খুচরা ট্যাকা নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে।
লোকটা চলে গেল। পরে শুনলাম লুকটা তার মরা মাওরে দেকতে গ্রামে গেছিল। শ্রাইদ্দ শ্যাষ কইরা ঢাকায় ফিরা আহার কতা আছিল। আহে নাই। মাঝরাইতে বুকে ব্যাদনা উইঠা মইরা গেছেগা। ভালো হৈছে। লুকটা আমার কাছে আর কুনোদিন ট্যাকা চাইতে পারবো না। যুগল রায় আর কুনোদিনই আমার পকটের ট্যাকা ছিনাইয়া নিতে পারব না।

শহরের সমস্ত বানর

শহরের সমস্ত বানর একদিন মরে যাবে
এ কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছে না
তারপরো মনে হয় বানররা যেহেতু অমর নয়
সেহেতু কোনো না কোনো দিন ওরা মরে যাবেই
খাবেই ভাত অন্ধকার কব্বরের
জব্বর নামের একটা লুক এই ভাবিয়া মনে মনে
খুব মনকলা খাইতে লাগিল। সারাদিন কাউকেই কিছু বলিল না
শুধু রাতের বেলা খেলাধুলার পর বউকে খুব তৃপ্তি নিয়া
এই কথা কহিল। যে বাননেরা মারা যাবে সমস্ত শহরের একদিন
বউ সকাল বেলা পাড়ার লোকদিগকে বলিল
আর পাড়ার লোকেরা সারাদিন অন্যপাড়ার লোকদিগকে বলিল। তাই সন্ধ্যাবেলা জব্বর মিয়া যখন অন্যপাড়ার চাস্টলে বসিয়া এই খবর শুনিল তখন সে বব্বর বনিয়া গেল। যে শহরের সমস্ত বানর একদিন অবশ্যই মারা যাবে।

চুনিয়া

মুনিয়া পাখির বাচ্চার চেয়েও ছোট্ট চুনিয়া
আরো ছুট্টনি চুনিয়া কটেজ। কটেজের গ্যাটিজে ঝালতরকারি ছিল না বলেই সামনে ছিল কিছু সিন আর সিনারি পিরাকৃতিকভাবেই আঁকা। ফাঁকায় ছিল কিছু বন্য গাছ দাঁড়িয়ে, হাত বাড়ানোর ভঙ্গিতে ছিল না কোনো মান্দি যুবতী। ফলে চান্দি ফট্টাশ ভঙ্গিতে নিজেকে নিয়ে নিজে অযথাই ছাইপাশ গু মুত খেয়ে দাঁড়ালেম হে প্রিয়তমা, তুমার ভালবাসা না খেলেই যে আজ আর চলছে না।
বলছে না কোনো কথা হৃদয়, আপনা থেকেই। হেসে উঠছে না কোনো জলো হাসতামশায়।
তাই হে মুনিয়ার ছোট মেয়ে চুনিয়া, তুমার হৃদয়ের গভীরে খুব গোপনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধানক্ষেত আর শাল বনক্ষেতে ছবি তুলি ঘপাঘপ। চুপচাপ খেয়ে যাই একে অন্যের হার্দিক ধান। মাষকালাই শুয়ারের পিটুলি-ওয়ানগালা।

ড্রাগন

জানালায় জমে আছে ড্রাগন
আগুনের তৈরি ড্রাগন
আর পাহাড়ের পাদদেশে নদী
মাদাগাস্কার নদী। আমাদের প্রেম
আমাদের মণিমাণিক্যসম প্রেম
গম ক্ষেতের ধূলিতে লুটায়।
ফোঁটায় না কোনো ফুল। শুধু অফুরান ক্ষত
তবু ব্রত গত হয় জীবন সামনে এগোয়
ক্ষত পল্লবিত হয় নতুন আগাছায়
গাছে গাছে ঝুলে আগুনে ড্রাগন
জমে থাকে জানালায় মুখ মানুষের
ফানুস উড়াবার সাধ আজন্মের
আহা পারো না মাদাগাস্কার নদী আমার
এত্ত এত্ত প্রেম দিতে?
সুধাময়? আরো পবিত্র?
জানালায় জমে আছি ড্রা........গ.........ন.......

ঘ্যানা ধইরা যাই

নারকোটিস বিছেষজ্ঞর কাছে গিয়া বললাম
আমার ডাইন আতটা ঘ্যানা ধইরা গেছেগা।
আমারে ভালা কইরা দ্যান।
নানা রকম পরীক্কা নিরীক্কা কইরা ওরা কইল
তরে ইয়াআব্বায় ধরছে। তুই ইয়াম্মা খা
ভালা হইয়া যাবি গা।
আমি ইয়াম্মার বুক্কের কাছে গিয়া কইলাম,
হে ইয়াম্মা তুমার গাতরিক ঝালমুড়ি খিলাউ
আমি মুনয় ভালা হইয়া যামুগা
নারকোটিছ বিছেষজ্ঞরা কইছে।
ওরা কি ভুতুম জানে? বলিয়া গাতরিক ঝালমুড়ি পয়দা করিতে লাগিলেন বিশি দামা পিয়াজের বদলে কম দামা পছা হশা কুচি কুচি কাটিয়া। তাহাদে মাংসছাড়া মাংসর ঝোল চামিচ দিয়া তুইলা কৈটার মুড়িতে নাগায়। তাহাদে সুমানে আতের তাইলায় কৈটা বাইড়ায় আর জুরে জুরে কয়, যে দ্যাশে নদ নদীর দুহান খুলা নাই
উদ্যাশে মানু থাহে না। খালি থাহে ছাইতানের বাচ্ছারা।
তাই ন্যা? বলিয়া ঝালছাড়া বালমুড়ি জিবলার তলে ফালিয়া দাঁত ঘ্যাজ ঘ্যাজ কইরা কুবাই আর কই হ নদ নদীর দুহান খুলা নাই।
আমার ডাইন আত ঘ্যানা ধইরা যায়। ইদ্যাশে কুনো মানু থাহে না। থাহে বুকাচুদা ছাইতানের বাচ্ছারা। কইতে কইতে আমার বাউ আতও ঘ্যানা ধইরা যায়।

বাঘ মানাগুয়া দৌড়াচ্ছে

বস্তুত ফালতু বকে লাভ নাই।
কারণ ভর্দলোকেরা ফালতু বকা ভালবাসে না।
অথচ কী মুশকিল, ভর্দলোক ছাড়া ফালতু বকে মজাউ নাই খুব এট্টা
এই যখন দশা, তখন নিকারাগুয়া এক পিলে চমকানো
সম্বাদ দিল, উহাদের দেশে নাকি সুন্দরী মেয়েরা
ফালতু খেলতে ভালবাসে। ডাল তরকারি খেয়ে দিনরাত বসে থাকে ফালতু খেলবে বলে।
এই সম্বাদ পেয়ে চলে গেলাম নিকারাগুয়ার ঘন জঙ্গলে।
জঙ্গলে বানরেরা ধরল পরথম। কীরে ফালতু খেলতে এয়েছিস?
বললাম, জ্বি হা। ফালতু খেলতেই এয়েছি। বানরেরা পোদ ফাটিয়ে হাসল, সেই শব্দে বাঘ অাসল। এসেই বানরদের উদ্দেশ করে বলল, কীরে মাল পেয়েছিস ফালতু খেলার?
বানরেরা উত্তর করল, জ্বি হা জনাব, মাল পেয়েছি বৈকি। সামনেই দণ্ডায়মান। এরপর কিছু বুঝার অাগেই বাঘ অামাকে ডাল তরকারি ছাড়াই ফালতু মেরে দিল। এবং তার পেটের ভিতর ঘুমিয়ে পড়তে পড়তেই টের পেলাম, বাঘ মানাগুয়া দৌড়াচ্ছে ফালতু খেলবে বলে।

মোনালিসা ২

ময়না নামের যে পাখিটা অামাদের সঙ্গে পিরাইভেট পড়তো
তাকে ভালবাসতাম কি-না জানি না, তবে তার কবুতরের মাংস
খাউয়ার জন্য ভাতখুর বিশ্বাস (ভাস্কর বিশ্বাস, যে অনেক ভাত খাইতো) গামলায় ভাত নিয়া হামলে পড়ল।
অার ছিল শ্যামা, যার পুরুষ্ঠু ঠোঁঠের উপরটা ছিল মৃদু ঘামে ঘামা। কাজি সোহেল শরীফ কিংবা হাজামিন ফজলে রাব্বি মিঠু অথবা কালা পুলক, যার পকেটে প্লাস্টিকের মৎস্যবাটউলা চাকু ছিল সদা প্রস্তুত। অাম কাটার তরে। তারা সবাই জমেছিল শ্যামার মুক্তোমার্কা ঘামে।
অামি শালা ফেরেব্বাস অাজীবনের পাগলা ঘুড়া
নেচেছিলাম মোনালিসার সইনদর্য্যে-সেই কত্তো ছোটবেলা!
ভাবলেই ভালো লাগে।

চৈনিক মেয়েরা

শুনেছি, চৈনিক মেয়েরা বণিক পুরুষদের শরীর খেতে দেয়
পাটিসাপ্টা পিঠাপুলির মতোন। ঘাপ্টি মেরে বন্ধুদের কাছ থেকে এইসব মজাদার গল্প শুনে দৈনিকি চৈনিক মেয়ের পাটিসাপ্টা পিঠা, রিঠা মতস্য সহযোগে খাই।
স্বাদ কেমুন জানতে চাইলে রিঠা মৎস্যই প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাহার। কিন্তু তাহারপরো উচুঁ চুঁচি অার ছোট পুশির গপ্প অাজীবনই গপাগপ গিলেছি। পিলেচমকানো ধড়াশ ধড়াশ বুকে প্রচুর কাফাকাফিসহযোগে শুনেছি, শুধু ইংরেজি জানা থাকলেই কেল্লাফতে। অরা মারতে দেয় প্রচুর মার। মারকাটারি করতে দেয় উলুবনজুড়ে ঘুলুঘুলু।
ছোট্ট পায়ে নাথি কষায় নিঙ্গে। ভেঙ্গে ফেলে শইলের সমস্ত অাইঢাই। ঘাইঘাই না করে বরং সঙ্গীতের সুমিষ্ট পান করায় ফুং ফাং ফু ফাং কথা কয়ে।

ঘাসখাওয়া বিড়াল

সত্যিকারের বাঘ কখনো ঘাস খেতে ভালবাসে না
যদিও পিথিমীর যাবতীয় জাতীয় খাদ্যই এখন ঘাস।
তাই ফালতু নিকারাগুয়া মেরে লাভ নেই।
লাভ নেই ফসিল তুলে ফাজিলদের হাসাহাসির খুরাকি দেয়ায়।
দেয়া নেয়ার সিন মডান আমলেই ফুরিয়ে গেছে
পোস্ট মডান আমল খালি নেয়। মানাগুয়াটাকে ফানা ফানা করে মেরে হলদ্যা রঙের ট্যাক্সিক্যাব দৌড়ায়। ম্যাক্সিপরা মেয়েরা আনন্দদায়কভাবে মোচড় দেয় শইল। তাতে তাদের পক্কু দেখা যাক বা না যাক আমাদের মতো ভুদাই বালকেরা গাড়ির মতোই চোখটাকে উঠিয়ে দেয় ম্যাক্সিপরা মেয়েদের বুক্কের ঢালু রাস্তায়। ডাইনে বাঁয়ে না ঘুরিয়ে।
তাই সত্যিকারের বাঘ বলে কিছুই আর নেই।
যা আছে সবই ঘাসখাওয়া বুকবিড়াল।

একটা বিনম্র কাকাতুয়া

একটা বিনম্র কাকাতুয়ার ফঁাদে পড়ে
নিজেকে হারিয়ে ফেললাম একটা বৃক্ষডালে
কাকাতুয়াটাকে নিকারাগুয়ার মেয়েদের মতো
ভালো দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল উ শালা কুনো পাখি না
শুধুই নিকারাগুয়ার ভালো মেয়ে। যারা যে কাউকেই প্রেম খাউয়াতে দ্বিধা করে না। দ্বিধা করে না বুকের ভিতরের উলুবন দেখাতে। তার সুগন্ধি তাপ পুহাতে। গুহাতে অাদর করে চাপড়ো মারে ক্ষণে ক্ষণে । ভাল লাগলে খেতে দেয় তার পান্তোয়া শরীর। চেটেপুটে, ঘেটেঘুটে। ছেনেছুনে।
তাই বৃক্ষ ডালে জমে থাকা বিনম্র কাকাতুয়া
অামাকে অাজ বেধেঁ ফেলেছে পথিমদ্ধে।

রাবণের সুমতি

নিকারাগুয়া এবং প্রস্তাবিত ধানক্ষেত একসাথে ছিল না। তাই বন্দিসদের ইবাদদ বন্দেগি জিন্দেগিতে হলো না।
চির বিস্ময়ের ব্যাপার হলো ভালো তরকারি থাকলে ভাত খাওয়াটা বেশি হইয়্যা যায় আর চিকন চাইল দাঁতে বাজে না। যেজন্য মুটা চাইল খাই। গাইল শুনতে কারোরই ভালো নাগে না, বুঝি। কিন্তু না দিতে পাইর্যাও কারো কারো খারাপ লাগে না-এইড্যা অবিশ্বাস্য। এতগুইল্যা সত্যি কতা কওয়ার পরও যদি পহটে মাত্র 30 ট্যাহা থাহে তাইলে তো খারাপ।
খুব খারাপ এই যীবন। যৌবনে ইস্ফূর্তি করার পয়সা জোটে না। ফোটে না ফুলের বনে মোড়ব্বা মার্কা মেয়েদের রসালো মৌবন। ধানক্ষেত পাটক্ষেত মরে যাক প্রেমের আলিঙ্গনে। ক্ষতি কি যদি সুমতি এ জনমে নাও ফিরে?

দুদনইজম

যখন ক্লান্তি অক্লান্তি খসে পড়ে রোদ্দুরে
বহুদ্দূর হাঁটার পর সুমন চৌধুরী অযথাই হাসে
ফ্যাক ফ্যাক করে হাসে।গাক গাক করে হাসে। হাসে আর ঝালমুড়ি খায়
বাদাম চানাচুর খিলায় বিলায় হেলায় অবহেলায়
বিজ্ঞান কিংবা অপবিত্র ঘুড়া বেনামি পুঞ্জিপাট্টা
সাফসুতরো, বিওভল, হাকান শুকের, খন্দকার ফারুকুজ্জামান, মদ খাওয়া। ডেণ্ডাবর। চিল পাখি, খাকি ক্যাম্বেল আলফাতুন কিং আফলাতুন। চুম্বন রমণ লিঙ্গ বমণ, নটিবাড়ি গমন। ডিম খাওন। ছির্যা হাবড়ি। মাউরি উফজাতি। বুকা চুদা, চালাকচুদা । বিংবল পাথর। টেরাকোটা হবিষ্যি। রাম ঠাপ। রাবণ ঠাপ। হেড়িম্বা। দাবনা। লিবিডব। কাঁফাকাফি।
বিস্কুট। কানে জবা ফুলালা পাগল, ঝালমুড়ি কোড়া কোড়া বাল। ঘিত্তা মদু। ম্যাডামের প্যাটে কোক, গাঞ্জা খাওয়া। পালতুলা ঘুড়া। বিজ্জান কোনো অবিমৃষ্যকারী নয়। নৈঙ্গিক নাজনীতির খপপড়ে পড়ে আমি আমার বাজে কথা হারাচ্ছি। মাড়াচ্ছি সাপের মাথায় পা দিয়ে কী হবে? ভাবনা ভাবনা কেন, বাল ফালিয়ে? কে কবে বড় হয়েছে। আজিম ভাই আজিম বিরাদার। আই হেট অল হাফ মার্কসিস্ট। তুমার তো মিয়া চেহারাই হয় না। এই আর যাবে কুথায়? ঘুষা খাইয়া রামু, স্যার স্যার নীচে নাইম্যা আসেন আমার উফরে হামলা হইছে। আমরা খালি হাসি আর হাসাই। আফনে ভাই কী করেন? আমি? আমি গুয়ামারা দিয়ে খাই। শালায় সিকারেট খায় কেমনে? এত্ত ধুমা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

ভিজ্যা বিড়্যাল

একটি সত্যিকারের ভিজা বিড়ালের অভিনয় করে যখন ধরা পড়লাম, তখন নিজেকে একটা পান্তোয়া গোত্রের ঘাটের মড়া মনে হলো। যে পেটের পীড়ায় ভুগে কুরে কুরে মরে গেছে, কোনো একদিন ভাত না খাওয়া সকালে।
বউ দৈনিকি রুটি দিত তারে, ভালো কোনো সালুন ছাড়াই , খালি গুড়া আলু ভাজি দিয়্যা।
খাইতে খাইতে এবং না খাইতে চাইতে চাইতে তিতিবিরক্ত হইয়্যা প্যাটের পীড়ায় ভুগা ধরল সে।
তার মনে হইলো, পিথিবী অন্ধকার হইয়্যা যাইতাছে
নইতো সে নিজেই আন্ধা হইয়্যা যাইতাছে।
এই দুইডার কুনোডাই যখন সঠিক বইল্যা মনে হইল না, তখন কী সঠিক হবে সেইড্যাও না ভাইব্যা পাইয়্যা এক দুচ্ছাই গোত্রের হশাতা তাকে বেদম পীড়ন দিল।
যেহেতু ওই এলাকায় কুনো চিনা হেন্দু নাই, তাই কিরন মাসীর কাছে উপোশী হিসাবে গিয়াও কোনো ফয়দা লাভের আয়োজনও ছিল নাই।
তাই কোনো গত্যন্তর না দেখে, নিজেকে ঝামেলা হিসাবে ট্রিট নিয়্যা ঘাটে খাড়ানো ইষৎ তাজা লুকটাই ঘণ্টাখানি পর ঘাটের মড়ায় পরিণত হল। কী এক সর্বনাশা অত্যাচারের ইতিহাস! পাতিহাসও যার জন্য কাঁদে না। রাজহাস কীভাবে? কী কারণেই বা কাঁদবে অনিশ্চিত কুনো ভিজা বিড়ালের দুঃখ অবলম্বনে? তাই নিরেট ভিজা বিড়াল এক ক্যারেট বেদনা নিয়্যা ঘাটের মড়া সাজতে ঘাটে গেল।
কিন্তু ঘাটে এক দঙ্গল আধ নেন্টা মেয়েদের স্থানকৃত্য দেখে ঘাটের মড়া সাজা হলো না তার। আর তখনই সে একটা সত্যিকারের ভিজা বিড়াল হিসাবে ধরা খেল ঘাটের আধ ন্যান্টা মেয়েদের কাছে। উহ কী ভীষণ সব্বোনাশ!

নিকেলের ঘুড়া

নিকেলের ঘুড়া বিকেল মাড়িয়ে গেল।
সকালের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর কে যেন
হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিল,
গুঁজে দিল ট্যাকে কিছু ট্যাকা।
ফালতু লাগলেও ডাল তরকারি গেলার আশায় বাজারে যেতেই হয়, তাই যাই।
নইলে কোন পৌষে বাজার নিজের ঘরে বসিয়ে নিতাম!
চাঁদ তারা আর সূর্যের গলফো ফেদে ভুদাই লোকদিগকে হাসাতাম আর হাসতাম।
হাসাতাম আর হাসতাম, বন্ধু সুমনের মতো টকেটিব লুককে কাছে পেয়ে।
তাই নিকেলের ঘুড়া বিকেল পেরিয়ে গেলে
ট্যাকে কুনো ট্যাকা নাই বলে বাসায় বাজার বসাই না কুনো কালেই।
অথচ রাজা হওয়ার সকল বৈশিষ্ট্যই ছিল আমার আর বন্ধুর সুমনের মাঝে।

বিল্লাল দারোগা

একটা তৃতীয় মাত্রার মিষ্টি বাঘ এবং একটা প্রচলিতঘুড়ার মধ্যে
বন্ধুতা স্থাপনের সুযোগটা গত মঙ্গলবার মাঠে মারা গেল।
অথচ এ কথা আকছারই শোনা যায়, বিল্লাল দারোগার ভয়ে
বাঘ আর প্রচলিত ঘুড়া একই খালে জল খায়।
ঘাস খায় একই মাঠে।
অথচ বিল্লাল দারোগা বেশিদিন বাঁচলো না
ওরে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টে হিউজ বানাইছিল আমরিরা।
কারণ বিল্লাল শালায় আমরিরেও ঘাস খাওয়াইবার চাইছিল একই খালে। তাই মঙ্গলবার আসলেই এহন আর কোনো মিষ্টি বাঘ কিংবা প্রচলিত ঘুড়ার মধ্যে বন্ধুতা সম্ভব নয়।
কারণ বিল্লাল দারোগারে হিউজ বানাইছিল আমরিরা,
আইজ থিক্যা প্রায় দেড় দশক আগে।
তারপরই রাগে দুঃখে ক্ষোভে বিল্লাল মারা যায়
বাঘ আর ঘুড়ারে এক খালে জল খাওয়াইতে না পাইর্যা।

তাহিতি নদী তীরের কাহিনী

তবু তাহিতি নদীর কাহিনী জানবার
অভিলাষ জমেছিল মধুর মতো আমাদের মনে
বনে বনে যেভাবে ঘুরে বেড়ায় রঙিন হরিণ কিংবা পাখিদের ছেলে, জলের বুকে জমে থাকা লাল শাপলার মতোন মদমত্ত তুমি আমি
নিরলে অবিরল চোখাচোখি, একা কিংবা একাকী জাপ্টে ধরার তুমুল অভ্যাস
জন্মেছিল লাল শাপলার বন আর সবুজ ঘোড়ার মনে
বনে বনে ঘুরে বেড়ানোর ছলে কলে বলে কৌশলে
জড়িয়ে ধরবার সেই মনোরম দৃশ্যাবলি
ঈষৎ বকাঝকার পর ঈষৎ ভালবাসাবাসি
ঘষাঘষি ঠুসাঠুশি ঝাপাঝাপি ধাপাধাপি
ঠাপাঠাপি শেষে ঈষৎ আলসেমি পেয়ে বসলে
তাহিতি নদী তীরের কাহিনী মনে পড়ে ফের
জলভরা নয়নে নাবিক ও বেবুশ্যের শেষ চাওয়াচাওয়ি, খাওয়াখাওয়ি শেষে
আমরা উঠে পড়ি অবশেষে,
জল দিয়ে ধুয়ে নেই সমস্ত দেহ সমস্ত দৈহিক জ্বালা...
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি বালিশে লালা

পাখিদের ডাকনাম

পাখিদের ডাক নাম আছে কিনা জানি না
জানি না সর্বনাশ কাহাকে বলে
তবে জানি বেশবাশ সাফ সুতরো রেখেও
আটকানো যায় না পাপ।
কাপ কাপ চা গিলেও তৃষ্ণা মিটে না হয়তো
কাপকাপ করলেই কি পয়দা হয় সমাধান ?
তাই পাখিদের ডাক নাম আমি জানি না,
মানি না ডাইনোশুয়োর কিংবা বিড়ালের বৃথা ফিশফাশ
সর্বনাশের ফলে বারোটা বাজলে বাজুক তেরোটা
শুধু পরোটাতে ঘি জমলেই হলো....
(শ্যাষ হয়নাই হয়তো) পরে লেকুম, পারলে। আইজক্যা যাইগ্যা।0)

নিকিতা ভার্নিকা

কে জানে, পিযুশ নন্দীদের আমলেও প্রেম ছিল?
আরো খোলামেলা, জল ঘোলা করে খেতে হতো
ভিতরের নিকিতা ভার্নিকা...
হয়তো হোঁচট খাওয়ার ফলে নায়িকা নায়কের কোলে
হামাগুড়ি খেত, নায়কের হামিতে ডামির শরীরেও যৌবন খেলতো, বেলতো রুটি পরোটার ভেতর ঈষৎ ময়দার গুড়ি,
গুড়গুড়ি টাটিয়ে উঠলে পিযুশ নন্দী
জানালার চোখ দিয়ে শুধু ফন্দি নয় আস্ত ফিকির
নিকিতা ভার্নিকার সবুজ ঘাসের গালিচা
খুঁজতো কি?
বেলচা চালিয়ে আঙ্গুলগুলিকে ইলিবিলি কাটাতে
ছাটাতে চুল ও চিন্তার বলিরেখা জল বসন্তের দাগ
মাখন মেখে ফের প্রেম চলতো রোজ সন্ধ্যায়
যখন লোকে হারিয়ে যায় যে যার মশগুলে
ছেলেরা খেলে, মেয়েরা খেলায়,
বুড়োরা খোলা হাওয়ায় হয়তো বেড়ায়,
নয়তো জীবনকে উপভোগের নিমিত্তে
গলি ঘিপিচতে ঢুকে যায় মধুরসা আহরণে
শিহরণ...শিহরণে মত্ত তখন নিকিতা ভার্নিকা,
পিযুশ নন্দীর যাতাকলে ফাতা ফাতা করে
নিজেকে অযথা

রঙিন পিস্তল এবং অরুন্ধুতী রাও

হয়তো পিস্তল সেভাবেই চেয়েছিল
উত্তম ঘোড়া আর চকচকে চাবুক
ভাবুক মন তার ভেবে রেখেছিল
সোনালি চিকুরের মেয়ে অব্দি
যিনি অরুন্ধুতী রাও নন
নিছকই স্বর্ণকেশী যুবতী।
পিস্তল তার রঙিন ঘোড়ায় চড়ে
সোনালি যুবতীর দুই হাত
মেদহীন পেটে নিয়ে পিঠে
স্বাস্ত্যবতী স্তনের খোচায়
উড়ে যায় দিগিবদিক।
তিনি অরুন্ধুতী রাও নন
নিছকই সোনালি যুবতী
রঙিন পিস্তল আর তার
তেজী ঘোড়ার পিঠে
ছুটছে দিগিবদিক।

সোমবার, ১৭ মে, ২০১০

পাখি

বস্তুত পাখিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না
তারা ভাত দিয়ে দুধ কলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ফলাহার করে কি-না তাও জানি না।
এই না জানার অসুখ নিয়ে দীর্ঘদিনের এক
বিসুখে পড়েছি...কিসু খেতে ভালো লাগে না
ভালো লাগলেও তাহা খেতে পাই না।
বিশেষ করে নারীদের...বাড়ি বয়ে অপমান
তাই ফালতু বন্ধুদের সঙ্গে
ঘুরতে যাই নদী ধারে
হাওয়া খাই ফুরফুরে
বাটি ফিরি রাত করে
বউ কথা বলে না
কী এক অজানা অভিমানে...
মান ভাঙাতে পারি না
অলস লাগে...।
ফলে ফিরে আসি পাখিতে
কিছুই জানি না বলে
তুমুল কৌতুহলও
আছড়ে পড়ে মাটিতে
তারা ভাত দিয়ে দুধকলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ডিম পাড়ে কি পারে না
নিজ বাচ্চা মারে কি মারে না
করাকরি কোথায় করে?
সমুখে না পিছনে?
ফালতু ডাল তরকারি দিয়ে
ভাত খাওয়া অব্দি কেউ কথা বলি না
না বউ না আমি।
সারা ঘরজুড়ে শুধু পাখি আর পাখি

বাঘ

একদিন নিকারাগুয়ার পথে একটা বাঘ দেখেছিলাম
শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছল। আমি বাঘের কাছে গিয়ে
বললাম, ভাই বাঘ..নুনুটা দেখাও তো?
তিনি আমাকে নুনুটা দেখাতে পারলেন না।
অতএব মনে রাখবে নুনু ছাড়া কোনো বাঘ হয় না।
যদি ভাঙচুরের রাজত্বে তুমার মতি থাকে
তবে ততি সেজে বসে থাকলে মানুষ তুমার নিকারাগুয়া দূরে থাক, মানাগুয়াও মারবে না।

ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে

হায়, মরা বাঘ
ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে,
পিথুহটার্ড রাত্রির কাছে কী চাওয়ার আছে
বেনামি সর্বনাশ আর ঘৃতাহুতি ছাড়া?
তাই সেইসব নিরীহ বাচ্চার দলে
আচ্ছা করে দৌড়ঝাপ সেরে
একা একা ঘরে ফেরার যাতনা
নিয়েই ঘরে ফিরি। বৈচিত্রবিহীন প্রতিদিন।
ডাইনোশুয়োর কিংবা কিংকংয়ের হাতে পাতে ধরে
মূল্যবান যুযুৎসুগুলো শিখে নিলে পরে
তবু ভাস্কো দা গামামার্কা ঘুষি ফাটাতে পারতাম
নোনাধরা দেয়ালে। যেহেতু সেসব শেখা হয়নি
তাই আঙুলের ডগা দিয়ে দেয়াল ঘষাই সার।
হে মরা বাঘ ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে,
বলো, পিথুহুটার্ড রাত্রির কাছে কী চাইবার আছে
এছাড়া?

আজ আর মনে নেই সেইসব

বিপদগ্রস্ত মনে হচ্ছে নিজেকে। প্রকান্তরে বাঘ কিংবা বানরের প্রেমহীনতাও ছুয়ে যাচ্ছে আজ। নাতিদীর্ঘ নদীকে সমুদ্র মনে করার কোনো কারণ নেই। তারপরও চোখের সামনেই বড় হয়ে যাচ্ছে পাতিকায় বিড়াল। নিরীহ মানসিকতা ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে।
ভেঙে ফেলছে ডানপিটে ছেলের ফালতু কোলাহল। হলভর্তি লোকেরা যখন খুবছে তালি ফাটাচ্ছে, তবু বিজ্ঞান কিংবা অপবিত্র ঘোড়ার কাউকেই প্রয়োজন নেই। তেমনিই প্রয়োজনহীন আমি তুমার কাছে। চাও বুঝি আরো প্রেম? নিখাত সলীলে ভেজা। গভীর আর উচ্চাঙ্গের দ্যোতনা?
ফাতনা ছাড়াই মাছ ধরার বায়না চেপেছে আজ। যদিও মাছেরা বরাবরই মাটি খায়, অথবা খায় না। কে জানে, আমি তো মাছ নই। কোনো কালেই ছিলাম না আপাদমস্তক এক বুনো ঘোড়া, মিষ্টি বাঘ অথবা ডানাবালা সবিতা।
সেই সব পুরনো অভিমান, কপট রাগে ভেঙে ফেলা সম্পর্কের সূতো আজ আর মনে নাই। কে যেন নাচিয়েছিল। ফালতু অভিমানে খুব বেশি কি কষ্ট পেয়েছিলাম। অতি মানব সাজার আকাঙ্ক্ষা তখনো ছিল। আজ আর নাই সেইসব পাগলামা

হাহ পটেমেকাস নদী

হাহ ! পটেমেকাস নদী
দাও তো তোমার ডান হাতটা
খাই বেদনার জল
ফল মূল কাঁচা লঙ্কার ঝাল
মাতাল মাতাল লাগলে
বেরিয়ে যাবো বন থেকে
হয়তো কোনো দূরস্থানে
নিশিযাপনের দিশা জানা নাই
মনে নেই আর কারো কথা
শুধু পটেমেকাস নদী আমার
একলা চলার ব্যথা।

নাইট এন্ড ফাইট উরা ধুরা চটপটি হাউস

দীর্ঘ লম্ফে অনেক দূর যাওয়া যায় হয়তো
বহুদূর অসম্ভব। লাফ ঝাপ ধাপ কিংবা ট্রিপল জাম্পেরও কাম বাজে নাই। কাম বাজে নাই উড়ুপেলেন কিংবা ঘুড়ার আগে গাড়ি জুড়ে
তাই ফালতু সময় নষ্টেরই বা কি দরকার?
বরং আসো, ঝাল দিয়্যা জামাই বউ চানাচুর খাই
তাতেও যুদি না বোঝো পিথিবীর কত ঝাল
তাইলে আসো, সংসদ ভবনের স্যামকের দিকে
নাইট এন্ড ফাইট উরাধুরা চটপটি হাউসে যাই
10 ট্যাকা দিয়্যা হাফ পেলেট চটপটি নিজেকে খিলাই
তারপর ঝালে ঝোলে পাগল হয়ে বিস্তর লালা ফেলে
শুশিয়ে শাসিয়ে ফের বাটি ফিরে যাই
পিথিবীর নম্র ভুদাই ।

নীলকান্ত মণি

তবুওনীলকান্ত মণির গল্প শুনি
শুনি বিড়ালের থাবা নিঃশব্দে এগিয়ে যায়
মাছের কাঁটাভিমুখে...কাটা কলাগাছ ফাটাফাটি নাচে,
হেলেদুলে নাচে আর ঘাস খায়
গ্র্যাস খায় আর ফাটাফাটি নাচে
কেটে যায় যৌবন, কেচে যায় মৌবন
মরচেপরা অংশটুকু শুধু ঝুরঝুরে লাগে
তবু হিম্মত কার
ফালতু বকার?
ডাইনোশুয়োর কিংবা অবহেলিত খাসি
বাসি ঘাসপাতা চিবিয়ে হামাগুড়ি
খায় জীবিকার যৌবন চুষে
মিশিমার মৌবন শুষে
হেসে গড়াগড়ি খায় পাত্রে অপাত্রে
বিষে নীল , নীলকান্তমণি
তার গল্প এখনো শুনি।

আমি তুমার আমু দরিয়া খেয়ে নবো

আমি তুমার আমুদরিয়া খেয়ে নবো
সাংহাই টাইপের চুমু হয়তো এঁকে দবো শিরদরিয়ায়
তবু ডানকি ডগ কিংবা বিংবল পাথরে যৌবন ফুটাবার ধান্দা করবো না, আনবো না জাঞ্জিবার থেকে উড়িয়ে কোনো বিকলাঙ্গ কোনো ঘুড়া
জানি পিথিবীর সকল পিযুশ নন্দীই ফুটবল খেলে
গর্ত করে খেলে বেলে দোয়াষের মাটিতে
খাটিতে খাটিতে যখন হয়রান হয়ে যায় তখনো রাইরম বাইরায় না হয়তো কোনো আধা চ্যাকলা ভুতুমের।
তবু হুতুম পেঁচা গুতুম গুতুম চালিয়ে যায় বিকলাঙ্গ ঘুড়া।
জানি, পিথিবীর সকল পিযুশ নন্দী ফুটবল হয়তো খেলে না, চলে না পাখি কিংবা ময়ুরের পালক পরে
তবু কেন জানি মুনে হয় পিতিবীর সকল পিযুশ নন্দী বিংবল পাতরের মূর্তি চোদে না, খেলে না কুনো ফুটবল খেলা বেলে দোয়াষের মাটিতে।

বিড়াল আর বনবিড়ালির ধাওয়া খেয়ে

নিরীহ বাঘ কিংবা বুড়ো বিড়ালের কাছে আমি পিছু হটি
হাঁটি পুরনো খানাখন্দে ভর্তিপ্রেমিকাদের বাড়ির রাস্তায়
যদিও রিস্কি এইসব শট খেলা, তারপরও খোলাখুলি বলি
আমার চরিত্রের ওইসব দোষ আজও গেল না
হে পিতামহ, নিহত পিতৃব্য ডাইনোশুয়োরদের মেলায়
ঘাস আর বিচালিতে ঠাঁসা, ডাঁশা পেয়ারার বুক নিয়ে হেঁটে যায় মেয়েরা, আমিও হাঁটি বুক তদারকিতে পিছু পিছু
ভালো লাগে না, তবুভালো লাগাই হাঁটি আর হেঁটে যাওয়া দেখায়
পৃথুলা রমণীর নিতম্বের রমণ পেট ভরে খাওয়ার ইচ্ছা প্রতি মুহূর্তে হেঁটে হেঁটে মারি
হে ডাইনোশুয়োর পাপিষ্ঠ ধমনী
বিউগলের চুমুতে সুর বাজে অবিরত, মিঠাই আর মণ্ডা খাওয়ার ঝাল মেটাই নিয়ত অন্ধকারে
ভাগীরথীর তীরে ভগ্নমনোরথে
তাল তমালের বনঘেরা জঙ্গলে
চিরিক চিরিক করে মুতি
মুতি আর পিছু হটি
বিড়াল আর বনড়িালির ধাওয়া খেয়ে

সব শ্যালকপুত্রই গেছে মরে

প্রজাপতি সিন থেকে বিবর্ণ জি্বন
সব শালাই গেছে মরে
ভাংচুরেও আজ আনন্দ নাই , খালি প্যাটের ভিতর বেদনা কুহু কুহু ডাকে
পালতোলা ঘুড়া কিংবা বালতোলা ভেড়া
সব ছেড়ে দেই শুধু হাম্বা ব্যতিরেকে
নিহত ডাইনোশুয়োর কিংবা টোনাটুনির বীর্যপতন
মিশিমার বিড়ালখানিকে অযথাই ডাকে,
আয় আয় আয়, খেলাখেলি খাই।
মিশিমার বেড়াল, উড়াল দেওয়ার যাতনায়
থিরথির করে কাঁপে, পাছার কাপড় তোলে হিশহিশিয়ে হিশি করে আর থিরথির করে কাঁপে, কাঁদে উড়ে যাবার যাতনায়
হে বিনীত মানুষ, পীতরাজ বৃক্ষের গোটা
যৌবনে জান বাজি রেখে লড়ে যাও,
গন্তব্য অজানা।।
তাই বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠে
সিলিং ফ্যানের ইঞ্চি সাতেক নীচে
মাথা গিয়ে পৌঁছায়,
ও বাবাগো বলে বিছানায় পড়ে গিয়ে মাথা বাঁচাই।
পৃথিবীতে আজ ভাংচুরেও আনন্দ নাই, তাই
শুধু চুদাচুদির মহোত্তম পাপে নিজেকে জড়াই।
জড়িয়ে মুড়িয়ে ঘন সব পাপ খেয়ে নিজেতে শুধাই
সব শ্যালকপুত্রই কি আমার মতো গেছে মরে?

কে যেন আমারে কামুড় দিল

এক ঝুম বৃষ্টির বিকালে কে জানি আমারে কামুড় দিল
সম্ভবত কুত্তায়।
নইলে কেন আমি কুত্তাপাগল হয়ে একদল হাড় হাভাতেকে বলবো
এই বেঞ্চোদের বাচ্চুরা দাঁড়াও
তোমাদের আইজ আমি বড় ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত বানামু
তার আগে তোমরা তোমাদের লিঙ্গটাকে সাফ সুতরো করে নাও
এবং বিকালের বৃষ্টিতেএকটু ফিফি করে কাঁদো
জানি, কেউ কারো কান্না না বোঝো না শোনো
তারপর ভাংচুরের আবহ আনো নিজেদের ভিতরে
এবং তুমুল গর্জনে হাসিতে ফেটে পড়ো বিজলির মতোন
পৃথিবীতে হাসি ছাড়া আর ভালো কিছু দেখি নাই।

একটি প্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন : শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা, সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী (শেষাংশ)

প্রেমিকার মতো মেয়েটা কিছু না বলে শুধু ছিঁড়ে যায় তৃণের মাথা। বন্ধুর মতো মেয়েটা ফেটে পড়ে উৎসাহে, তারপর কী হলো ..তারপর কী হলো বলে তাগাদা লাগায়..। আমি তবু চেয়ে থাকি প্রেমিকার মতো মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণে, নিজেকে বানাই উড়িয়াবাজ ঘোড়ার সাদৃশ্যকরণে। তবুও দৃষ্টিহীনের মতোই সে ছিঁড়ে যায় অসংখ্য তৃণের মাথা। আমি আমার ঘাসখাওয়া নিরানন্দিত খরগোসগুলোকে লাগামহীন ঘোড়ার গ্রীবায় চড়িয়ে ছুটতে থাকি দিগ্বিদিক...তো ওই দেশেই বাস করতো এক ভীষণ বাজে লোক। যে বায়ুকামে বিশ্বাস করতো না। পায়ুকামেও ছিল না তার মতি। এহেন বাজে লোকের ভক্তি ছিল বিজাতীয় সামুকামে। মাথায় যন্ত্র অথবা মন্ত্র ফিট ছাড়াই সে বিপুলভাবে উত্তেজিত থাকতো সম্মুখ কর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রগাঢ় ইচ্ছায়। কিন্তু তার সে প্রগাঢ় ইচ্ছা পূরণের কোনো উপায়ই ছিল না শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যে। কারণ রাজ্যব্যাপী সকলেই ছিল একেকজন আদর্শ বায়ুকামী। যদিও তারা লুকিয়ে চুরিয়ে পায়ুকর্মের মধু খেত, কিন্তু তাদের কেউই সামুকামের মিঠা সম্পর্কে বিশেষ অবগত ছিল না। ফলে এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সামুকামী সম্মুখকর্মে লিপ্ত হতে না পেরে যাচ্ছেতাই মনখারাপে আক্রান্ত হলো।
আর এই যাচ্ছেতাই মন খারাপ তাকে এতটাই দুর্বিনীত আর কাণ্ডজ্ঞানহীন করে তুলল যে হঠাৎ সে দশ হাত দূরের বায়ুকামরত এক সবুজ ভদ্রমহিলাকে জাপ্টে ধরে উপর্যুপরি লিঙ্গ চালিয়ে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় বায়ুকামীরা বাতাসে লিঙ্গ চালানো বাদ দিয়ে থ্ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকেই সামুকামীর বুরবুকামি দেখে হাসতে হাসতে পাগল হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার কড়া হাততালিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু কর্তব্য ভুলে গেল না প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা। রা..রা..করে তেড়ে আসলো তারা। ঘুসি দিয়ে সামুকার নাক ফাটালো, হনুতে ট্যাপ ফুলালো, কেটে ফেলল জোড়াভ্রু। থুঁতনি আর চোয়ালেরও কিছু বাকি রাখলো না তারা। কে যেন আবার টন্নশ করে মাথায় হাতুড়ির একখানা বাড়িও বসিয়ে দিল। তারপর পুচ্ছে একগাদা শক্তিশালী লাথি দিয়ে তাকে বিদায় করে দিল রাস্তায়।
রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে, মাথা ঘুলিয়ে যাওয়া সামুকা নিজেকে নিয়ে পালালো বনে। বনে গিয়ে ণে ণে মনে পড়ল সবুজ ভদ্রমহিলার কথা। দেখতে থাকলো বিভিন্ন এঙ্গেলে সবুজ ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরার মনোরম দৃশ্যাবলি। মন ভালো হয়ে গেল সামুকামীর। কিন্তু একই সঙ্গে ফিরে এল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কতর্ৃক প্যাঁদানোর দৃশ্যাবলিও। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল সামুকামী। কান্না ফুরিয়ে গেলে এবার পড়ল গাঢ় লজ্জার ভেতর। লজ্জা তাড়াতে সামুকা দৌড়াতে লাগলো বনময়। লজ্জা কেটে আবার ফিরে এল সবুজ ভদ্রমহিলা, ফিরে এল বিভিন্ন এঙ্গেলে জড়িয়ে ধরার রঙিন সব ছবি। সামুকামী আনন্দের আতিশয্যে তৎণাৎ হাজির হতে চাইলো সবুজ ভদ্রমহিলার কাছে। কিন্তু পরণেই তার মনে পড়ল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কতর্ৃক পিটা খাওয়ার কাহিনী। আবার ফিরে এল গভীর বেদনা।
এভাবে সামুকা ণে হাসে, ণে কাঁদে এবং হাঁটতে থাকে বনময়। গাছকে মানুষ ভেবে কথা কয়। ফুলকে নিরানন্দে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কতণ? এসব হাল্কা পাগলামি কী আর ভালো লাগে সামুকামীর? তাই খুব সহসাই বিরক্ত হয়ে দুচ্ছাই বলে হাঁটা ধরে গাঁয়ের পথে। অজানা কারণে হাতে তুলে নিল একগাদা হাস্নুহেনা।
খিলখিল করে হেসে উঠে বন্ধুর মতো মেয়ে অথবা যে বন্ধু নয়। চোখে তার ফুটে ওঠে লাল লাল শাপলাফুলফোটা নদী। চোখের রং জলের মতোই আদুরে কালো। বাড়ি ফিরে যায় হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইবার...ভাত খেতে। সামনেই বসে থাকে বন্ধুর মতো মেয়ে, ভাত বেড়ে। ছোট ছোট অনেকগুলো কুঁড়েঘর...পাশেই শুয়ে আছে নাতিদীর্ঘ নদী...অদূরে খরগোশদের বন...বয়ে যাচ্ছে সময়...আনন্দময়।
এদিকে, রাজা গাছের পাতা নড়ার রহস্য আবিষ্কারে ব্যাপক ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে রাজা কিছুই ভেবে পেল না। খুঁজে পেল না ভাবনার কোনো কূল কিনারাও। যা পেল তা শুধু জল আর জল। বিভ্রান্তিকর হাবুডুবুতে ওইসব নোংরা জল খেয়ে রাজার ত্রাহি অবস্থা প্রকাশ পেল অচিরেই। রাজা দেখতে পেল এ সম্পর্কে তার সীমাহীন অজ্ঞানতা বিরাজিত। তাই শেষমেশ কুলাতে না পেরে রাজা তার বশংবদ মন্ত্রীকে ডেকে বলল..প্রিয় মন্ত্রী ..দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমি একটা ুদ্র ভাবনায় মাথা গলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার ধারণা..এেেত্র আমার ভাবনা ঠিক সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে না।
মন্ত্রী বেশ পাকালোক। ক-তে কলিকাতার রেসের মাঠ বোঝে...টাকার উড়াউড়িও দেখে। ফাট করে বুঝে ফেলল পরিস্থিতি এবং দেরী না করে বলল...হুজুর কিছু মনে করবেন না..ইকটু ঝেড়ে কফ ফেলবেন কি? দেখি..অধম আপনার মহৎ ভাবনায় লিপ্ত হতে পারে কি-না..
রাজা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে শুরু করে...না..আ..। বিষয়টা বিশেষ মারাত্মক কিছু নয়। তবুও বলছি...আচ্ছা ..তুমি কি বলতে পারো গাছের পাতা কেন নড়ে?
মন্ত্রী রাজাকে না দেখিয়ে মুচকি হেসে...বিষয়টা বেশ ইন্টরেস্টিং হুজুর। বেশ সহজ মনে হয়, আবার কোনো মতেই একে জটিলতামুক্ত বলা যাবে না। আসলে আমাদের বিজ্ঞানীরা এ প্রসঙ্গে কী বলেছে... সেটা জানা দরকার সর্বাগ্রে। তাদের ব্যাখ্যানুযায়ী, যদি আমি ভুল না করি, তবে কেউ যদি 45 ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায় ..তাহলে দেখবে... গাছের পাতা নড়ছে...। আবার কেউ যদি 90 ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায়...তাহলে সেও দেখবে গাছের পাতা নড়ছে! সত্যি কথা বলতে কী হুজুর! গাছের পাতা নড়ার বিষয়টা আপেকিতায় মোড়ানো...দৃষ্টিবিভ্রম মাত্র।
ভাবতে ভাবতে এমনিতেই রাজার মাথা ছিল ঘুলানো, তারপর যখন দেখলো মন্ত্রী তাকে সঠিক পথের ঠিকানা না দিয়ে ভুল রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে অবলীলায়, তখন রাজা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না..চুপরাও হারামজাদা..আমাকে ধুনফুন বোঝানো হচ্ছে? ধুনফুন..অ্যাহ?
মন্ত্রী ধরা খেয়ে মরা লোক সেজে গেল নিমেষেই..গুস্তাকি মাফ করবেন হুজুর! সত্যি কথা বলতে কী... একটু হুসেনখুম খেয়েছিলাম কি-না...তাই মাথাটা একটু বাজে বকাচ্ছে।
সামনে বসা নারীদ্বয়কে বলি ..হুসেনখুম হলো এক জাতীয় নেশাদ্রব্যাদি, যা খেলে মানুষের মাথা বাজে কথা বলে।
রাজা এই কথা শুনে আহা..হাহ হাহ করে উঠল..না জেনে আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? আমি তোমার বায়ু কামঘর ভেঙেছি! অনুতাপে দগ্ধ হয় রাজা। পুড়তে পুড়তে বলে..কী করবো বলো? গাছের পাতা কেন নড়ে ..এটা জানা যে খুব বেশি জরুরি! কারণ এটা অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এইবার মন্ত্রী ঝোপে কোপ মেরে ঝোপের ভেতর শুয়ে থাকা নিরীহ সাপটাকে মেরে ফেলে বলে..হু..জু..র..! তবে কেন শুধু শুধু আমরাই বা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে যাবো?
রাজা তো অবাক! তাহলে কে ভাববে?
মন্ত্রী জাল গুটানোর আনন্দে খিচখিচ করে হাসে আর বলে...হুজুর ..বিষয়টা যেহেতু অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ..অতএব প্রজাদেরই ভেবে ঠিক করা উচিত ..আসলে গাছের পাতা কেন নড়ে?
হারানো ধন খুঁজে পাওয়ার আনন্দে রাজা কিছুণ ঘুরে ঘুরে নাচে। তারপর বলে..প্রিয়তম মন্ত্রী! তুমি আমার ডান হাতে একটা বড় করে চুম্বন আঁকো এবং রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে বলে দাও ...যে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভাবতে পারবে...তাকে দেওয়া হবে অজস্র পুরস্কার। আর যে না পারবে তাকে মৃদু শাস্তিসহযোগে তিরস্কার।
নারীদ্বয় একে অন্যের চোখে চোখ রেখে হেসে উঠলো আরেকবার। আরো জোরে ..আরো জোরে..ট্যাঙ্ িচালায় হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইভার।
মন্ত্রী আসলের সঙ্গে এবার সুদ যোগ করে...হুজুর! ..আমার লাল ঘোড়ার পা টা একটু মচকে গিয়েছিল কি-না..আর ঢেড়াওয়ালাদেরও নতুন জামাজুতো দরকার ছিল কি-না?
রাজা মন্ত্রীর অভিপ্রায় বুঝে ঝোপ পরিষ্কার করে মরা সাপ তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলে..কোনো অসুবিধা নাই। আমার আস্তাবলে দু'খানা সতেজ লাল ঘোড়া দণ্ডায়মান। যে কোনো একটা তুমি নিয়ে নাও আর যেখানে খুশি সেখানেই ঘুরে বেড়াও.. আর..আর.. অনেকবেশি হুসেনখুম খাও। আর ঢেড়াপিট্টিওয়ালাদের জন্য রাজকোশ অবারিত করো..হলো তো? এবার...
এইবার মন্ত্রী কোনো কথা না বলে, কোনো দিকে না তাকিয়ে হামলে পড়ে রাজার ডান হাতে এবং বাম পায়ে। হুমহাম শব্দে দীর্ঘ সব চুম্বন কাটতে থাকে পাদুকা যুগলে। রাজা উহু উহু আহা আহাময় শব্দে আনন্দে মরে যাওয়ার ভান করে।
এদিকে, সামুকামী দুরু দুরু মনে গ্রামে ফিরে এল। কী এক অজানা কারণে তার হাতভর্তি হাস্নুহেনা। কিন্তু একী! গ্রামে যে কেউই নেই! সামুকাকে ধরবার, মারবার, হাসবার কিংবা ভালবাসবার তরে। কী ব্যাপার তবে?
সামুকার হাতের হাস্নুহেনা শুকিয়ে যেতে থাকে, সবুজ ভদ্রমহিলাকে দেখতে না পেয়ে। কান বন্ধ হয়ে যায়..বায়ুকামীদের অট্টহাসি শুনতে না পেয়ে। চোখ প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা..প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কর্তৃক প্রদেয় শক্তিশালী ঘুসি এবং লাথির অনুপস্থিতিতে। এ রকম আদিভৌতিক পরিস্থিতিতে পড়ে সামুকামী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর দেখে না। অবশ্য এ বিমূঢ়তাও অমর হয় না। ফলে সারা গ্রাম ঢুরে কাউকে না পেয়ে গ্রামে উপস্থিত একমাত্র নিরাপত্তারী অর্ধশিতি বাঘটাকেই সামুকামী জিজ্ঞেস করে...সকলে সদলবলে কোথায় গিয়েছে? অর্ধশিতি বাঘ হালুম ভাষায় উত্তর দেয়..সুদূর দেিণ। অর্থাৎ রাজার বাড়ি হতাকা বুণ্ডাকাঠে। আর দেরী না করে সামুকাও পা চালালো সুদূর দেিণই।
এদিকে, রাজা তো মহাসমারোহে রাজদরবার সাজিয়ে বসে আছে। মন্ত্রীরও উৎসাহের একফোটা কমতি নাই। সারা রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়েছে রাজকীয় কর্মী দিয়ে, ওই আগের ছেঁড়া ঝুল্লা পুরনো পোশাক পরিয়েই। ফলে দলে দলে বায়ুকামীরা রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের দিকে ছুটে আসছে তুমুল বেগে। শক্ত হাতে ভিড় সামলিয়ে মন্ত্রী একে একে বায়ুকামীদের হাজির করছে রাজার সামনে। রাজাও মহানন্দে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলছে ঘুরে ফিরে..বল..বায়ুকামী হরি খাটকা...কেন নড়ে গাছের পাতা?
হরিখাটকার সহজ, সরল নিরীহ মাথা, সে কীভাবে জানবে..কেন নড়ে গাছের পাতা? তবু বহু কষ্টমষ্ট করে বলে..হু..জু..র..! আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম? তখন দেখি গাছের পাতা নড়ছে..নড়ছে তো নড়ছেই, থামাথামি নেই।
রাজা একটু নিমরাজি হওয়ার মতো করে বলে..চেষ্টা অতিশয় দুর্বল এবং তা মিথ্যাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা। এবং সবচে' মজার ব্যাপার হলো সত্য হতে উহার অবস্থান বহুদূরে। অতএব বায়ুকামী হরিখাটকা..তিরস্কার বিনে অন্য কিছু প্রাপ্য নাই তোমার। আর যা আছে...তা হলো মৃদু দলাই মলাই..এই কে আছিস..একে নিয়ে যা...
এরপর মন্ত্রী ডেকে আনলো বায়ুকামী লিরিবিরি আফান্দিকে। রাজা বায়ুকা আফান্দিকেও জিজ্ঞেস করলো একই কথা। কেন নড়ে গাছের পাতা? বায়ুকা লিরিবিরি আফান্দি আবার নিজ গাঁয়ের জ্ঞানী। তাই অনেক বেশি ভাব এবং তারও বেশি ভঙ্গি নিয়ে শুরু করলো..হুজুর! বহু বহু কাল আগে...যখন পৃথিবীর মানুষ সময়ের হিসাব রাখতো...যখন পৃথিবীতে শুধু আলোময় দিনই ছিল না, দেখা যেত রাত্রির অন্ধকারও...ঠিক সেই সময় ...টগডিল পাহাড়ের গুহায় বাস করতো এক ঘড়ি ব্যাঙ। সেই ঘড়ি ব্যাঙটা যখন টকটক করে ডেকে উঠতো, তখনই গাছের পাতা নড়তো।
রাজা বেশ আগ্রহভরে শুনছিল। আফান্দি থামলে রাজা মুচকি হাসে আর বলে..আদিভৌতিক কল্পনাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা এ গল্প বেশ আবেদনময়ী...কিন্তু তা মোটেও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে না। উপরন্তু তা সত্যকে নিমজ্জিত করেছে আরো ঘনান্ধকারে। অতএব বায়ুকা আফান্দি...তোমার জন্য অপো করছে উপযুক্ত তিরস্কারের ব্যবস্থা। এই কে আছিস...এটাকেও নিয়ে যা..এবং রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের সবচে' উঁচু বৃরে মগডালে সংযত করে বেঁধে রাখ্। যখন ব্যথায় কঁকিয়ে কঁকিয়ে টক টক করে কাঁদবে, তখনই সে দেখতে পাবে কীভাবে নড়ে গাছের পাতা।
আফান্দির শাস্তি নির্ধারণের পর মন্ত্রী অতি উৎসাহে ধরে নিয়ে এল এক হলুদ ভদ্রমহিলাকে। হলুদ ভদ্রমহিলা নাচতে নাচতে রাজার সামনে এল এবং নাচতেই থাকলো। রাজা একটু বিব্রত হওয়ার ভান করে গলাখাঁকারি দিয়ে বলল...ভদ্রমহোদয়া...আপনি কি বলতে পারেন..কেন নড়ে বৃরে পাতা?
হলুদ ভদ্রমহিলা নাচ না থামিয়েই চোখ নড়োবড়ো করে বলল..আমি যখন নাচি..এবং নাচতেই থাকি..তখনই দেখি গাছের পাতা নড়ছে এবং তা নড়তেই থাকে।
রাজা বেশ আমোদিত ভঙ্গিতে বলেন..অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা...সত্যের খুউব কাছাকাছি...এই কে আছিস..ওনাকে আমার খাস কামরায় নিয়ে যা। উনি যখন নাচবেন..আমি তখন বৃপত্রের নড়াচড়া দেখবোণ। তখন যেন আমাকে বিরক্ত করা না হয়। জিভে আনন্দের রস নিয়ে হুম বলে মন্ত্রীর দিকে তাকায়।
মন্ত্রীও বেশ বিগলিত..জি্ব হুজুর জি্ব হুজুর... খুব সুন্দর হয় তাহলে... খিচখিচ করে হাসে।
এভাবে মন্ত্রী বহু বায়ুকামীকে ডেকে নিয়ে এল। আর রাজাও প্রত্যেকের জন্য উত্তম তিরস্কারের সঙ্গে বিস্তর দলাই মলাইয়ের ব্যবস্থা করে বেশ আনন্দেই কাটাতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কেউই রাজার প্রশ্নের সঠিক ভাবনা ভাবতে পারলো না।
পরিস্থিতি যখন এমন, বায়ুকামীদের সকলের সিরিয়াল প্রায় শেষ, ঠিক তখনই মন্ত্রী রাজার সামনে ধরে নিয়ে গেল কান্ত, তিতি বিরক্ত হতাশ সামুকাকে। যে সামুকা হতাকা বুণ্ডাকাঠে এসেছিল জাপ্টে ধরা সবুজ ভদ্রমহিলাকে খুঁজতে। অথচ সামুকাকে একটু জিরোবার সময় না দিয়েই রাজা জিজ্ঞেস করে বসে...তুই বল কেন নড়ে গাছের পাতা?
'গাছের প্রাণ আছে।' সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে সামুকা জিরোবার ফুরসৎ খোঁজে, কিন্তু রাজার পেছনে প্রধান পুরোহিতকে দণ্ডায়মান দেখে চমকে ওঠে অজানা আশঙ্কায়।

এদিকে রাজাকে বেশ কিছুণ চুপ করে থাকতে দেখে দ্বিধান্বিত মন্ত্রী জিজ্ঞেস করে, হুজুর পুরস্কার নিয়ে আসবো? না..উপযুক্ত ভর্ৎসনার ববোস্থা করব?
রাজা সম্বিত ফিরে পেয়ে চিৎকার করে বলে...এই কে আছিস?...একে হত্যা করা হোক।
আমার অপরাধ? সামুকামী রুখে দাঁড়ায়।
রাজা: বহুবিধ..। জিভে ব্যঙ্গ আর শ্লেষের ধার।
সামুকা: যেমন?
রাজা: (অনিচ্ছাসহকারে)..এই যেমন ধরো ..রাজার আদেশের কারণ জানতে চাওয়া।
সামুকা: তারপর?
রাজা: ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাস
সামুকা: আর?
রাজা: সবুজ ভদ্রমহিলাকে অপমান
সামুকা: আরো শুনতে চাই আমি..।

ােভে ফেটে পড়ে সামুকামী। রাজাও হিসহিসিয়ে শোনাতে থাকে..সবচেয়ে বড় অপরাধ..সত্য জানো তুমি। ভয় না পাওয়াটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়..আরো যদি শুনতে চাও..তবে বলতে পারি.. তোমার জন্যই বসে আছি আমি...বিচার সভা সাজিয়েছি..প্রচুর পয়সা খরচা করে লোক দিয়ে রাজ্যব্যাপী ঢেড়া পিটিয়েছি..মন্ত্রী মশায়কে একখানা লাল ঘোড়া বিনি মাগনা দিয়ে দিয়েছি..সে এখন শুধু হুসেনখুম খাবে..আর পুরো পৃথিবী চড়ে বেড়াবে..আর তোমাদের গাঁয়ের প্রধান পুরোহিত, যে তোমাকে তার পবিত্র গুণ্ডা দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে, আর রা করেছে আমার স্বপ্নে গড়া সাধের শিন্টু রাজ্যটিকে। তিনিই হবেন আমার নতুন মুখ্যমন্ত্রী, তার প্রতু্যৎপন্নমতিতার জোরে। আর তুমি যাকে জাপ্টে ধরে এলোপাথারি লিঙ্গ চালিয়েছিলে- সেই সবুজ ভদ্রমহিলাকে আমি আমার নিজের কাছেই রেখে দোবো.. যে কোনো ধরনের অনিষ্ট হওয়ার ভয়ে। হিক হিক করে হাসতে থাকে রাজা আর হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে হুসেনখুম চাটা মন্ত্রী মহোদয়রা, একজন অপার আনন্দে অন্যজন অপার বেদনায়।
সামুকামীর রিক্ত নিঃস্ব ব্যথিত হৃদয় শেষবারের মতো বিদ্রোহ করে। কিন্তু তার আগেই কতিপয় রাজকীয় গুণ্ডা ঝাপিয়ে পড়ে বেঁধে ফেলে সামুকামীকে। পেটাতে পেটাতে নিয়ে চলে হত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার একটু আগেই একদল থুঁথু ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজার চোখেমুখে।

বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে চলে গেল দূরে। ঘর বাঁধলো বাচ্চাদের স্কুলে। প্রেমিকার মতো মেয়েটা বসে রইলো চুপচাপ, নিজের মতো করে। হাতে নিহত হয় ঘাসের শরীর, দাঁতে নিহত ঘাসের শরীর। অনজনের আঁকা বাঁকা হাসি আরো বেঁকে গেল। কিন্তু হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইভার আর কখনই আসলো না। অথচ লাল লাল শাপলাফুল এখনো ফোটে, জাহাঙ্গীর নগরের ছোট্ট ঝিলে। বাবা আমাকে শেখাতে চেয়েছিল বহুকথা। আমি শিখিনি। কারণ বাবা ছিল বড্ড গরিব, তাই বোকা। আর মাত্র একটা কথা। সবুজ ভদ্রমহিলা শেষপর্যন্ত বনে চলে গিয়েছিল, রাজাকে ফাঁকি দিয়ে...কারণ তার পেটের ভেতর ফুল হয়ে ফুটেছিল একগাদা লাল কৃষ্ণচূড়া।

একটি প্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন : শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা, সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী 1

বাবা আমাকে শিখিয়েছিল অর্থাৎ বলেছিল অথবা শেখাতে চেয়েছিল। আমি শিখিনি, বরং ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি সত্বর। ' পৃথিবীর কোনো কিছুই ফেলনা নয়...প্রত্যেকটা জিনিসেরই মূল্য আছে, ঈশ্বর সকল কিছুকেই আরো বেশি প্রয়োজনীয় করে তৈরি করেছেন।' ভুল বলেছিল, আমার কাছে মনে হয়-সব কিছুই বাগদত্তা, প্রেমহীন বউয়ের মতোই অপ্রয়োজনীয়।

আকাশ মাথায় নিয়ে শুয়ে আছি, মাটিতে। দীর্ঘকাল পর। দুশ্চিন্তামুক্ত মাথা। কখনো চিৎ হয়ে, কখনো এপাশ-ওপাশ। মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে আমার ডান হাত, মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে বাম হাত। আবার কখনো বা পুরোটা পিঠ। বন্ধুর মতো একটা মেয়ে, বসে আছে পাশে, একটু পেছনে। আরেক পাশে প্রেমিকা মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। সামনে লাল লাল শাপলাফুলফোটা হ্রদ। জলের রং জলের মতোই আদুরে কালো। সেইবার...এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার, চিলি্লয়ে চিলি্লয়ে তার বন্ধুকে কিংবা প্রেমিকাকে নয়তো বউ নতুবা শ্যালকস্বরূপ কোনো প্রিয় আত্মীয়ের নিকট গল্প মারছিল, তার দূরালাপনীতে যন্ত্রতে .. হ..আমি জাহাঙ্গীরনগরে..হ..সাভারের কাছেই..এইহানে একডা নদী আছে..লাল লাল শাপলাফুল ফুইট্ট্যা আছে... আমার পাশেই ছিল অনজন। ফাট করে বলে বসলো,' শালারে গ্রীবা ধরে বের করে দেওয়া উচিত।' কেন..কেন.. কেন। কেন তুমি তাকে গ্রীবা ধরে বের করে দিতে চাও? কারণ কি তার অজ্ঞতা? .. একটা মানুষ তো বহু কিছুই না জানতে পারে। তুমিও তো কত কিছু জানো না। তাই বলে আমি তো তোমার ঘেঠি ধরে বের করে দিতে চাইছি না। হলুদ ট্যাক্সিক্যাবওয়ালা হয়তো তোমার চেয়ে একটু বেশিই নাদান লোক, সে হয়তো জানে না নদীতে শাপলা ফুল ফুটতে পারে না জলের ব্যস্ততায়। কিন্তু সে কথা জগতের কটা লোকই বা জানে? অথচ দেখো, কী দারুণ উচ্ছ্বাসভরে সে গল্প মারছিল তার কোনো প্রিয় শ্যালকের নিকট, লাল লাল সব শাপলা ফুলের। এই প্রেম ও আন্তরিকতাকে তুমি অগ্রাহ্য করতে পারো না। আমি পারি না অন্তত। অনজন চুপসে যায় ফশ করে।

আজ সেই লাল লাল শাপলা ফুল ফোটা নদীর পাশেই শুয়ে আছি.. ঘেসো মাটিতে। পাশেই বসে আছে বন্ধুর মতো একটা মেয়ে অথবা সে বন্ধু নয়। নাওতো হতে পারে। যেমন আমার পাশেই বসে আছে প্রেমিকার মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। আমি তাকে বলি, 'আচ্ছা বড় হলে কী হবে তুমি?' সে ভীষণ করে হাসে। বড় হলে কী হবো মানে? আমরা তো বড়ই! আমি বলি..হ্যা.. ধরো চাই.সে তো ঠিকই..কিন্তু অনজনের পুরনো রুমমেট তাকে জিজ্ঞেস করেছিল..বড় হলে কী হবে সে? অনজন আঁকাবাঁকা হেসেছিল এবং বলেছিল..একটা শান্তশিষ্ট গরু। সে হাসে ..প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। আমি তাকে দৈববাণীর মতো বলি..হেসো না..হেসো না মেয়ে..হেসো না কালো মেঘ... তোমার পেটের ভেতর যে ভুল অথবা ফুলের জন্ম হচ্ছে ..তাকে রুখবে কে?..একটা লাল কৃষ্ণচূঁড়া বৃ হত্যার দায়ে তুমিও অভিযুক্ত হতে পারো..। মানে? বলে চোখ সরু করে প্রেমিকার মতো মেয়ে। শোনো.. বলে আমি তাকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বোঝাই..আসলে বড় হলে মানুষ দুটো জিনিসই হতে পারে..হয় গরু...শান্তশিষ্ট অথবা অশান্ত। আর নয়তো ছাগল। ম্যা..ম্যা..করতে করতে আমি তার চোখের কালো অংশের গভীরতা মাপি। সেখানে ইট্টুখানি ভালবাসা পাওয়া যায় কি-না দেখি। কিন্তু সেখানেই স্পষ্টই লেখা আছে..দ..য়া, ক..রু..ণা। আমি আরো আদুরে বাদুরে হয়ে, প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দ- কে ভ, য়-কে া, ক- কে ল আর একখানা ছোট্ট কুঁড়েঘর দেখবার প্রত্যাশায় মাতি। কিন্তু প্রেমিকার মতোই অথচ যে প্রেমিকার নয়, খেক শিয়ালের মতোই খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে, হ্যা..আপনারে কইছে?..ধপ করে নিবে যাওয়ার মতোই প্রতিটা শব্দ। কিন্তু তার মুখের গর্ত থেকে..'কইছের' পর লাফ দিয়ে একটা মায়াবী বাতাস বের হয়। আর তাতেই বর্তে যাওয়া বতর্ুলাকার আমি আবারও টানটান ভঙ্গিতে শুরু করি, প্রবল আশা নিয়ে, চোখের কালোতে আলো করা এক ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘর দেখবার প্রগাঢ় বাসনায়।.. কিন্তু ধরো চাই ..আমার মাঝে মাঝে মানুষ হতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু মানুষ হওয়াতো খুব শক্ত কাজ! যেমন একটা পাকা বালকে টেনে সোজা করার মতোই অসম্ভব ব্যাপার। পেটের ভেতর গুঁড়ি মেরে শব্দগুলো লুকিয়ে থাকে। বেরিয়ে আসে আদর করে কুত্তার লেজ সোজা করার মতোই অবাস্তব।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। চোখের কালো চিকমিক করে উঠে। একটা দুটো খড়কুটো দেখতে পাই। আনন্দে বুকের ভেতর খরগোশের বাচ্চা নেচে নেচে ঘাস খায়। পেছন থেকে বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে যায়। উঠে গিয়ে দূরে বসে। হয়তো আরো গভীর মনোযোগে লাল লাল শাপলাফুল দেখে। এই ফাঁকে আমি আমার বুকের ভেতর নেচে যাওয়া এবং আনন্দিত খরগোশগুলোকে গ্রীবা ধরে খোয়াড়ে ঢোকাই, আনন্দের চাপড় মেরে। তারপর আরো বেশি মুখের কাছে মুখ, চোখের কাছে চোখ নিয়ে প্রেমিকার মতো মেয়েটাকে বলি.. তোমার বুঝি মানুষ হতে ইচ্ছা করে না? মেঘ জমে মুখে। নিষ্পৃহ কণ্ঠে বলে..আমি তো মানুষই। ..হ্যা ..হ্যা..সে তো ঠিকই..সে তো ঠিকই। কিন্তু এরম প্রাণীর মতো মানুষ নয়।..ঐ যে তখন বললাম..মানুষ হওয়াতো বাঁকা বাল সোজা করার মতোই সাংঘাতিক কঠিন। লুকিয়ে থাকা শয়তান শব্দগুলো গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরলো না মুখগহ্বর দিয়ে বেরলো..ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। কিন্তু নিজের কানেই যখন শুনলাম, তখন মনে হলো রাস্তার কোনো বাজে পথিক হাওয়ায় শব্দগুলো উড়িয়ে দিয়ে গেছে। ইচ্ছা করলো বাজে পথিকের গলা চেপে ধরি, দ্রুত শয়তান শব্দ থামাই। কিন্তু ডান হাত সে ইচ্ছায় সাড়া দেয় না। ঝিঁঝি ধরা ডান হাত। বাম হাত আগেই ঝিঁঝি ধরে পড়ে আছে মরে। শরীরে ঘুম পাখির মতোই বাসা বুনে যায়। ডানচোখ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়, অবলীলায় খুলে রাখি বাম চোখ। চোখভর্তি লাল লাল শাপলাফুল। চুউউং করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। মুখোমুখি হয় এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার। শাপলাফুল তার আদরের বাড়িঘর। লাল পাপড়িতে বসে জল খলবল করে পা নাচায়। পা নাচায় জল নাচে। জল নাচে..পা নাচে..।
জন হেনরি... জন হেনরি.. নাম তার ছিল জন হেনরি ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন...
খোয়াড়বন্দি মনখারাপ করা খরগোশগুলো একজোটে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে খোয়াড়ের তালা। মুক্তির আনন্দে লাফায়..নাচে..হাততালি দেয়...আনন্দের আতিশয্যে কেউ কেউ কানধরে উঠবস করে। ..ইস্..আর পারি না..সব ভুলে গেছি। ঝট করে পেছনে তাকাই। ধীরে ধীরে উধাও হয় শাপলাফুল। ফিরে আসে প্রেমিকার মতো মেয়েটার কালোমুখ..না পারার বেদনা চোখেমুখে..বলতে থাকে আনমনে..একা একা ...নিজে নিজে..আমার যে কী হবে? বাবার যদি অনেক টাকা থাকতো? অ..নে..ক টাকা?
চুপচাপ শুনি আর মনে ভেতর গজিয়ে উঠতে থাকে বহুমূল্যবান টাকার গাছ। একটা নয়, দুটো নয়, হাজার হাজার গাছ... হাজার হাজার টঙ্কা বৃ লতায় পাতায় জড়ানো মুড়ানো..জঙ্গল ...মধুপুর..জঙ্গলভর্তি টাকা...টাকার মালিক বাঘ।

না..সত্যি...সে বলতেই থাকে..আমার তো চাকরি হবে না..কে আমাকে চাকরি দেবে?... নিশ্চয়ই হবে না..বেশ থমথমে গলায় বলি। শুষ্ক হাসি হাসে প্রেমিকার মতো মেয়ে..ভয় দেখাচ্ছেন? তাকে স্পষ্ট করি। না..বাস্তবতা বোঝাচ্ছি। আরো স্পষ্ট করার জন্য বলি..তা এই ধরো..একখানা চাকরি পেতে হলে তোমাকে কিনতে হবে নিদেনপক্ষে তিন জোড়া স্যান্ডেল। হেঁটে হেঁটে য় করে তবেই না পেতে পারো টিনের হরিণসম বেসরকারি অনিশ্চয়তাপূর্ণ, বিবিধঝামেলাযুক্ত একখানা সস্তা দামের চাকরি। সোনার হরিণসম সরকারি চাকরির প্রত্যাশা..বামনের চাঁদ ভালবাসার মতোই জটিল প্রক্রিয়া..পর্যন্ত বলে বেশ একটা অসহায় ভঙ্গি আঁকি শরীরে, তাতে জটিল প্রক্রিয়ার জটিলতা আরো বৃদ্ধি পায়।

বেশ ছোটাচ্ছেন, টিভি সিনেমা দেখে দেখে নাহ্? প্রেমিকার মতো মেয়েটা এবার যুৎসই ভ্রুভঙ্গি হানে। তা দেখে মরমে মরে যাই। তারপরও সাহসে বুকে ভর দিয়ে খাঁড়াই। মিছে অবাক হই..ছোটালাম কোথায়! এখনো তো ঘোড়ার লাগাম খোলা বাকি..আসল দৌড় তো শুরুই করিনি.. তাই নাকি? বলে আসল ঘোড়দৌড় দেখার আগ্রহ দেখায় মেয়েটা। আমিও শুরু করি প্রথমে দুলকি চালে..তা ধরো নিত্যি গুঁতোগুতি করে পাবলিক বাসে ওঠা, মশার কামড়ের মতো পুচ্ছে একঝাক রাম কিংবা কাম চিমটির জ্বালা, দাঁড়িয়ে থাকলে। আর নেহায়েৎ বসবার জায়গা পেলে পাশের ভদ্রলোক, অভদ্রলোক, বদলোকেরা নিজের ঊরু ভেবে তোমার ঊরুটি ব্যবহার করতে পারে নিশ্চিন্তে... চাকরির বাজারে অনেকেই হয়তো হেসে হেসে কথা কইবে, কেউ কেউ ফাঁসিয়ে দেওয়ার ধান্দা করবে, অনেকেই বন্ধু সাজবে, সাজতে চাইবে প্রেমিক অথবা পুত্রের জনক। অনেকেই সহগামী, সহযোদ্ধা, সহমর্মী হয়ে হাতে চাররঙা কাষ্ঠ ধরিয়ে দিয়ে বলবে..অফিসে আসবেন..কাজের কথা হবে..কামের কথা..।


এক নাগাড়ে বলতে থাকি। বলতে বলতে আমোদিত হই। ঘোড়া বল্গা হরিণীর মতোই রূপকথার সমস্ত দেশ পেরিয়ে শেষমেশ উড়তে থাকে আকাশের দিকে। মোমের মতো জ্বলতে জ্বলতে গলতে গলতে মেয়েটাও হাসে। হাসতে হাসতে বিষম খায়। চারদিকে ফুটতে থাকে লাল শাপলাফুল। অজস্র..অগুনতি। জল খলবল করে পা নাচায় হলুদ ট্যাক্সি ড্রাইভার। জল নাচে, পা নাচে, পা নাচায় জল নাচে।

' কাপুরুষ সিংহ সে তো মারতেই জানে... আমরা যে মরতেও জানি.. মেয়েদের চোখ আজ চকচকে ধারালো...'

জিপারের নীচে লিঙ্গ ছোট হয়ে আসে ভয়ে। কালো মেয়েটা মুখ আলো করে জিজ্ঞেস করে..বড় হলে আপনি কী হবেন? বিপদে পড়ে যাই আমি, কঠিন। কী হতে পারি আমি? একটা শান্তশিষ্ট গরু অথবা অশান্ত ছাগল, ভীরু ভেড়া থেকে আরম্ভ করে বনের বাঘ হওয়া পর্যন্ত ভেবে ফেলি একটানে; শেষমেশ কোনোকিছু না হতে পেরে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় রা..জা..।

বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে আসে কাছে, বসে পড়ে পাশে, হাতে রাখে হাত, বলে..নে ধর ..উপহার। ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, ঘাস, আর হরেক রকমের পাতা ক্ষীণ তৃণে বেঁধে ভালবাসা দেয়। ভালবাসা নিই। ট্যাক্সি ড্রাইভার জল খলবল ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় লাল পাপড়িতে। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছোটে নরোম পাপড়ির মসৃণ ভাজ একের পর এক দ্রুত সরায়ে। ফুলের গোপন ঘর থেকে বের করে আনে তার প্রিয় ট্যাক্সিক্যাব। হর্ন বাজায় প..প..পপ..প..প। হেলেদুলে চলতে থাকে লাল পাপড়ির রাস্তায়... ' শোনো ..তাজেল গো..মন না জেনে প্রেমে মইজো না...

প্রেমের জন্য চাই উড়িয়াবাজ ঘোড়া, জরির জামা, জরির জুতা- ওসব কোনো কিছুই তো নেই আমার। ঠা ঠা করে হাসি। অথচ আরো কাছিয়ে আসে বন্ধুর মতো মেয়ে, হাসে খিল খিলিয়ে। প্রেমিকার মতো মেয়ে, গ্রীবা গুঁজে তখনো বসে থাকে দূরে। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে আমার হাল্কা ঝিঁঝি ধরা হাত দুটোকে উড়িয়াবাজ ঘোড়া বানাই। তারপর হাতদুটোকে বাতাসে খেলাই। উড়িয়ে দেই আকাশে। উড়তে উড়তেই বলতে থাকি...

...এ..ক..দা.. এক... শিন্টু ধর্মাবলম্বী রা..জা..। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে...আচ্ছা ..গাছের পাতা কেন নড়ে? অবাক হয় রাজা..সত্যিই তো কেন নড়ে গাছের পাতা! তিনি রাজা..অথচ তিনিই জানেন না কেন নড়ে গাছের পাতা? এও কি সম্ভব? খুবই সম্ভব। কারণ শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্য যে আর দশটা উত্তরাধুনিক রাজ্যের মতোই সাংঘাতিক আজগুবি, গুজগুবি এখানকার সব কান্ডকারখানা। অন্যসব উত্তরাধুনিক রাজ্যে যেমন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাঁচের বাঙ্ েবাচ্চা ফোটানো হয়, শিন্টু রাজ্যে ব্যাপারটা ঠিক ও রকম না হলেও মোটামুটি অন্যরকম। শিন্টুরা কাঁচের বাক্সে বাচ্চা না ফুটিয়ে ঊরুঝিলি্ল পর্বতের মাথায়, অত্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পদ্ধতিতে 33 বছর বয়স্ক পূত পবিত্র মানুষ ফোটায়। সঙ্গতকারণেই শিন্টুদের রাজ্যে কোনো শিশু নেই, নেই কোনো অশীতিপর বুড়োও। শুধু তাই নয়, শিন্টুদের রাজ্যে আলোময় দিন আছে, কিন্তু কেউ কখনো অন্ধকার রাত ভুলে কিংবা স্বপ্নেও দেখেনি। যে কারণে কেউই হিসাব রাখে না সময়ের। সময়ের কোনো মূল্যই নেই কারো কাছে। বরং সময় একটা ফালতু বস্তুর মতোই যত্রতত্র হামাগুঁড়ি দিয়ে পড়ে থাকে। উহা কেউ খায়ও না, রঙিন জামা হিসাবে কারো গায়ে দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। শিন্টুরা অবশ্য মান্টুদের মতো সকলেই চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত। আর মান্টুরা? ওরা তো পাশের উত্তরাধুনিক রাজ্যেরই বাসিন্দা, মাথায় যন্ত্র ফিট করে এবং মন্ত্র উচ্চারণ না করেই যারা কামকলায় লিপ্ত হতে ভালবাসে। আর উহারাও শিন্টুদের মতোই চিরজীবি, চির যৌবনপ্রাপ্ত। তবে শিন্টুরা চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত হলেও আদর্শগতভাবে তারা কিন্তু সকলেই বায়ুকামী। কিন্তু তারা মান্টু, পান্টু কিংবা বান্টুদের মতো যান্ত্রিক বায়ুকামে বিশ্বাস করে না। শিন্টুদের কেউই মাথায় যন্ত্র ফিট করে কাম কলায় লিপ্ত হতে রাজী নয়। কারণ রাজাই ওসব ভালো করে ভালবাসে না। বরং তারা প্রত্যেকেই মাথায় মন্ত্র ফিট করে বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে অত্যন্ত আরাম পায়। কারণ রাজা ওভাবেই বায়ু থেকে নিজের জন্য প্রগাঢ়তম আরাম এবং আনন্দ কাড়েন। যাই হোক, রাজা এবং প্রজাদের সম্মিলিত এ অভিনব মতির কারণে শিন্টু রাজ্যের প্রতিটা গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে বন্দরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য বায়ুকামঘর। কামঘরের প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা বায়ুকামীদের মাথায় সুনির্দিষ্ট মন্ত্র ফিট করার মধ্য দিয়ে শুরু করে বায়ুকাম প্রক্রিয়া। অতি ধীরে পোশাক আশাক খুলে বায়ুকামীরা একে অন্যের দশ হাত দূরে দূরে দাঁড়ায়। তারপর শুরু করে প্রধান পুরোহিতের নির্দেশ মতো বায়ুতে অঙ্গ দোলানো এবং লিঙ্গ চালানো। এভাবে দীর্ঘণ বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে বায়ুকামীরা গভীরতর এক মানসিক তৃপ্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর এই তৃপ্তিময় আচ্ছন্নতা বায়ুকামীদের শরীর থেকে এক ধরনের পবিত্র জল নিঃসরণে সহায়তা করে। নিঃসৃত পবিত্র জল জমা হয় পবিত্র পুষ্পভাণ্ডে। এরপর প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা পবিত্র জল জমাকৃত পবিত্র পুষ্পভাণ্ড নিয়ে যায় মহাপবিত্র ঊরুঝিলি্ল পর্বতের মাথায়, নীল কুয়াশাঘন মহা মহা পবিত্র মেঘঘরে। এরপর রাজার ইচ্ছানুসারে মেঘ ঘরে ফুলের মতো ফুটতে থাকে একেকজন 33 বছর বয়স্ক শিন্টুধর্মাবলম্বী পূত পবিত্র বায়ুকামী..যারা নেমে আসে মহা পবিত্র ঊরুঝিলি্ল পর্বতের পা বেয়ে।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। হেসে হেসে বলে..বেশ আজগুবি তো। আমি আমার উড়িয়াবাজ ঘোড়ার ডানা দুটোকে আবারো বাতাসে খেলাই এবং পাখি বানিয়ে পাখি উড়াই। তারপর বলি..রসো...আজগুবির কী আর দেখলে..ইহা তো কেবল শুরু। তারপর আবার বলতে থাকি ...যদিও শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যের সকলেই আদর্শগতভাবে বায়ুকামী, কিন্তু হলে কী হবে? তাদের অনেকেই যে আবার পায়ুকামে লিপ্ত হতেও ভালবাসে! রাজা আবার এসব জানে না। জানলে কঠিন শাস্তি। কণ্টক লিঙ্গে চড়িয়ে ফাঁসি। অন্যদিকে প্রজারাও জানে না যে রাজাই এ কুকর্মের মূল পাঁজি। এভাবে সকলেই একে অন্যের কুকর্মের কথা না জেনে, একে একে সব শিন্টুই পায়ুকর্মে লিপ্ত হতে ভালবাসে। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রকাশ্যে কেউ কারো কুকর্মের কথা না জানলেও, মনে মনে সকলেই সকলের সকলই জানে। কিন্তু তারা সকলেই যেহেতু আদর্শিকভাবে গাঢ় বায়ুকামী এবং বিশ্বাস করে ঘন সবুজ বিপ্লবে, তাই তাদের প্রত্যেকের হাঁটা চলায় ফুটে উঠে এক অতিপ্রাকৃত গাম্ভীর্য। (চলবে)

মাতাল ডাইনোশুয়োর এবং আঁকা বাঘের বিড়াল চেহারা (শেষাংশ)

হুমহাম শব্দে ্বাস ছুটে চলছে তো চলছেই। প্যাকেটে সিগ্রেটের অনুপস্থিতি টের পায় সাইফুল। সিগ্রেটহীন প্যাকেটের মতো সাইফুলের বুকটাও শুন্য হয়ে যায়। শুন্যতার সুযোগ নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা বিড়ালটা লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দাঁত বিজলিয়ে বলে 'আন্নাতারা তোমাকে কেন ভালবাসেনি তা আমি জানি?'
'কেন ভালবাসেনি.. বলে মনে হয় তোমার?' সাইফুলের প্রশ্নে বেশ গাইগুই করে বিড়ালটা, 'বলব? মন খারাপ করবে না তো?'
'মন খারাপের কী আছে' বলে সাইফুল বিড়ালটাকে আস্বস্ত করে।
'এই তো মন খারাপ করেছো? আমি সঙ্ষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে। তোমার নিঃশ্বাস দীর্ঘতর হচ্ছে।'
বিরক্ত হয় সাইফুল, 'না বললে বলবে না। এত পেচাচ্ছ কেন?'
' ঠিক আছে ..বলছি' বলে বিড়ালটা সাইফুলের লম্বা এলোমেলো দাঁড়িতে একবার হাত বুলায়।
'খবরদার আমার দাঁড়িতে হাত দেবে না..' রাগে কাঁপাকাঁপি অবস্থা সাইফুলের।
'রাগ করছো কেন ভায়া..তোমার দাঁড়িগুলো তো সুন্দর, তাই...।' আরেকবার ঝটপট হাত দিয়ে, 'তবে মজার ব্যাপার কি জানো? তোমাকে ভালো না বাসলেও তোমার এই হিলবুল ছুলবুল মার্কা দাঁড়িটাকে কিন্তু ভালবাসতো আন্নাতারা।'
'ফের বাজে বকছো? দাঁড়াও সামনের স্টেশনেই সিগ্রেট কিনছি আর তোমাকেও তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি..।'
'এজন্যই তোমাকে ভালবাসতো না আন্না' বলে বিড়ালটা লাফ দিয়ে সাইফুলের গ্রীবায় চড়ে। এবং কানে কানে বলে,'তোমাকে ভালবাসেনি কারণ তুমি নাতিদীর্ঘকায়।'
ঝা করে কানটা লাল হয়ে যায় সাইফুলের। বজ্জাত বেড়ালটাকে এক লাথিতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে পাঠাবার প্রস্তুতি নেয় মনে মনে। মনোভাব বুঝে বিড়াল দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশ কিছুণ পর সাইফুল কন্ডাকটরের কাঁধে বিড়ালটাকে মা চাওয়ার ভঙ্গিতে দেখতে পায়। দুঃখী দুঃখী হাসি হাসে। চেঁচিয়ে ওখান থেকেই বলে, 'শুধু তাই নয়..তোমাদের পরিবারের পকেট যে যথেষ্ট গরম নয়...সেটাও একটা কারণ হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস...তাছাড়া তুমিও একটু আগেভাগেই বেশি কাবু হয়েছিলে কি-না? আরো একটু জপতে দিলে এখন হয়তো একে অন্যের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মাড়াতে পারতে। শারীরিক আইঢাই কমানেরও হয়তো একটা ববোস্থা হয়ে যেত এদ্দিন। কিন্তু তোমার পাকা বুরবুকামিতে সব নেসফাকা হয়ে গেল। যাও একটু সম্ভাবনা ছিল তাও বরবাদ হলো তোমার আবেগের ঘনঘটায়।...আমি আগেই বলেছিলাম..রয়েসয়ে হাঁকো..। তা নয়...। সব কিছুতেই ডিগাম্বুরি...।'
একটু থেমে হাই তুলে আবার বলা শুরু করে,'অবশ্য অন্যায় কিছূ করোনি বলতেই হয়...মনে ধরেছে..ঝাপি খুলে দিয়েছো..যার নেবার নেবে...যার নয় নেবে না...ব্যাস সোজা কথা ফুরিয়ে গেল....ওত হাঙ্কি পাঙ্কির কী আছে? এবার কি কাছে আসবো ডিয়ার?'
...'না...' বলে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে সাইফুল।
....'আরে হিবিসকাস রোজাসাইনেনসিস.. কেন বৃথা রাগ পুষছো? তোমার পকেটভর্তি টঙ্কা...ওসব পাতলা ইমোশান রাখো...সব বাস্কেটে ফেলে দাও। বৃথা প্রেম ফ্রেম নিয়ে হেদিয়ে মরছো। বরং পকেটের উত্তেজিত টাকাগুলোকে শান্ত করো...ওরা বিদ্রোহ করলো বলে। সবগুলোকে মেরে কেটে উত্তম আনন্দ বানাও। কে আন্নাতারা? সেকি জল খরচ করে না? বাইরে তাকিয়ে দেখ... কী ফাটাফাটি জোৎস্না! অথচ এমন রাতে আন্নাতারা ফান্নাতারা করে নিজেকেই ফাটিয়ে দিচ্ছো। বোকারা কতবার মরে জানো?' কর গুনে বিড়ালটা অনেকণ পড়ে বলে....'অসংখ্য বার।'
'তুমি একটা সত্যিকারের ড়বং। চোখের কারসাজি আর এলোমেলো কথাতেই গলে গেলে? আগেই বলেছিলাম সাবধান হও। পূর্বের অভিজ্ঞতা তোমার ভালো না। এভাবেই তোমাকে ফাঁদে ফেলেছিল কঙ্কা। শেষমেশ লবডঙ্কা খেয়েও তোমার হুশ হলো না। আবারও প্যাঁচ খেলতে গেলে আমাকে অগ্রাহ্য করে। এখন বোঝ চোখের পানি আর নাকের পানি কেমন জমে?'
... 'উহ্ থামবে? নাকি আমি নিজেই লাফিয়ে পড়বো জানালা দিয়ে।' সাইফুল বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে। একটু চুপ করে বিড়ালটা। কিন্তু তারপরও ফিসফিসিয়ে বলতে ছাড়ে না, 'যাই করো না কেন বাছা..লাফিয়ে পড়ো না। তাইলে কেলেঙ্কারির একশেষ। সবাই বলবে প্রেমে ছঁ্যাকা খেয়ে গাড়ির নিচে প্রাণ দিয়েছে।' সাইফুল শুন্য প্যাকেটটাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে মারে। বিড়ালটা সাইফুলের টোনায় বসে হাই তোলে।
কন্ডাকটর ভাড়া উত্তোলনের কাজে নেমে পড়ে। এবং প্রথমেই বাধাগ্রস্থ হয়। 'কী কস! কত ট্যাহা দিমু?
... '70 ট্যাকা।'
'ক্যা... পাচচলি্লশ ট্যাহা দেই।' যাত্রীর এমন আহাদে কন্ডাকটরের সাফ উত্তর..'তাইলে রিদের পরে যাইয়েন।'
' আইজক্যা গেলে অসুবিদা কী..'বলে কন্ডাকটরকে যুক্তির পয়েন্টে বেঁধে ফেলে যাত্রী ।
... 'অসুবিদা আছে...আইজ বাদে কাইলক্যা রিদ...এহনো যুদি মাগনা যাইবার চাইন ..তাইলে তো অসুবিদাই..।'
...'মাগনা কীরে...খানকির পুলা...দেশটারে নিজেগো বানাইয়া ফালাইছো...'
বলে চিৎকার ক্রোধাক্রান্ত যাত্রী।
'এই...ভর্দলোকের মতো কতা কন...এইডা ধলেশ্বরী বাস।' কন্ডাকটর নিজের সম্মান জিইয়ে রাখতে চায়।
'ধলেশ্বরী বাস চিনি রে চোদানির পুলা...আমরা তর রিদের বাজারের পেসেন্দার না...আঙ্গো দৈনিকি আপডাউন করার নাগে...যা ভাড়া, তাই দিছি। পাঁচচলি্লশ ট্যাকার এক পাই কম দিতাম, তাইলে কিছু কইবার পারতি। সুযোগ একটা পাইছো...আর পাবলিকের পুটকি মারবার নুইছো...' বলে ক্রোধাক্রান্ত যাত্রী কন্ডাকটরের মান সম্মান ধূলায় লুটিয়ে দেয়।
সারা বাস হেসে উঠে। কন্ডাকটর কাচুমাচু হয়, 'কী করুম...টাঙ্গাইল থিক্যা খাইল্যা বাস নিয়া আহন লাগে।'
কিন্তু কন্ডাকটরের করুণ বাস্তবতাকে মোটেই পাত্তা দেয় না ুব্ধ যাত্রী,' হ.. তাই পাবলিকের পকেট কাইট্যা লুশকান পুশাবি? তর মালিকের লাব অইলে, আঙ্গো ভাড়া কম নেয় না বড়? পাবলিকের নরোম গুয়ায় সব শালায় গুতাইবার চাও?'
সারা বাস আবারো হেসে উঠে। যে লোকটা বাসের সিট না পেয়ে নিজের কাপড়ের বস্তার সিটে চড়ে যাচ্ছিলো সে তো হাসতে হাসতে হাফানির টান ধরিয়ে ফেলে। গাড়ি খন্দে পড়ে লাফিয়ে পড়লে সেও লাফিয়ে পড়ে এক যাত্রীর ঘাড়ে। 'হুরু মিয়া! পড়ার আর জাগা পাইলেন না। একেবারে বেয়ুশ অইয়্যা যায়!' ব্যথা পাওয়া যাত্রী ফোশ করে উঠে।
'ভাইয়েরও মুনে হয় চাক্কা জ্বালাইছে..?' পাশের রসিক যাত্রী বেদনাময় পরিস্থিতি হাল্কা করে দিলে আরেক পশলা হাসিতে যোগ দেয় অন্যরা। অপমানিত ুব্ধ সিট না পাওয়া যাত্রীটা শ্লেষের সঙ্গে ,' চুদানির পুলারা রাস্তাডা এ্যাদ্দিনেও হারলো না' বলে আবার নিজের কাপড়ের বস ায় গিয়ে বসে।
কন্ডাকটর গ্যাঞ্জাম বুঝে গাড়ির পেছনের দিক থেকে সটকে পড়ে সামনের দিক থেকে ভাড়া কাটা ধরে। সামনে বসা হুজ্জতে ইজ্জত খোঁয়াতে নারাজ ভদ্রলোকরা কোনো হাঙ্গামা ছাড়াই 45 টাকার ভাড়া 70 টাকা দিয়ে দিতে থাকলো।
সাইফুলের নাক বেয়ে একটা গরম দীর্ঘশ্বাস বাসের জানালা গলে বেরতেই বাতাসের তোড়ে উড়ে যায়। সাইফুলের নাজুক হৃদয় ক্রমেই পুড়ে যায় মিষ্টি বিড়ালের রসালো চাটে। তো সেই বোম্বাস্টিং চাঁদনী রাতে, বন্ধুসমেত আন্নাতারা হলে চলে গেলে, সাইফুল কোথাও চলে যেতে পারে না সহসা। কালভার্টেই বসে থাকে দীর্ঘণ। মনমরা। মাথার ভেতর থেকে খসে পড়ে জারুলের বেগুনী বন, কৃষ্ণচূঁড়ার লাল বন, বান্দর লাঠির হলুদ বন, বন্ধ হয় জঙ্গুলে মেয়েদের ঘুরে ঘুরে নাচা। প্রান্তরে এক মাতাল ডাইনোশুয়োর এসে ঝ্যাঙন ঝ্যাংগং শব্দে ভেঙে ফেলে বনের সমস্তগাছ, ফুল, পাখি, লতা পাতা, দাবানল ছড়িয়ে দেয় বনময়। সাইফুল আগুনে পোড়া আহত পাখির মতোই টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়ায় এবং হাঁটতে থাকে এলোমেলো।
উদ্দেশ্যহীন বহুণ হেঁটে যখন সেটাকেও উদ্দেশ্যহীন মনে হতে থাকে তখনই সাইফুল 301 নম্বর রুমে ফিরে আসে। 'কীরে অলুম্বুস এতণ কোথায় ছিলি?' সাইফুলকে দেখে চোখ বড় বড় করে অনজন আরো বলে, 'জানিস এর মধ্যে কত কাণ্ড? ঝন্টুকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে.. রিকশাওয়ালা মামা বাড়ি ফিরেছে?' অনজনের পেকে উঠা ব্রন শুকিয়ে যেতে বসেছে, চোখের কোলে কালো দাগ অসঙ্ষ্ট হতে শুরু করেছে।
সাইফুল ছেঁড়া ছেঁড়া শুনে শুকনো হাসে। উত্তর দিতে ইচ্ছা করে না তার। অনজনের উৎসাহ তাতে কমে না ' জানিস এদিকে আমরা রিকশাওয়ালা মামাকে চাঁদার টাকা দিয়ে একটা নতুন রিকশা কিনে দিচ্ছি? আরেকটু সুস্থ হলেই সে রিকশা চালাতে পারবে।'
সাইফুল আর পারে না। চিৎকার করে উঠে,' তাতে আমার কোন বাল ফেলানি গেছে?' অনজন থমকায়, পরণেই সরু করে ফেলে চোখ। কী যেন বোঝে, কী যেন বোঝে না। সাইফুলের কাঁধে হাত রাখে, আদরের চাপ দেয়,' কী হয়েছে?' জানতে চায়।
সাইফুল অসহায় হয়,' জানি না।'
অনজন ছাড়ে না,'আমাকে বল।'
'সম্ভবত আমি বোধহয় প্রেমে পড়েছি।' সাইফুল লাজুক হাসে।
অথচ ঠাশ ঠাশ করে হেসে উঠে অনজন। প্রাণখোলা। ' এই কথা? আমি ভাবলাম জুয়া খেলে সবস্বান্ত হয়ে ফিরলি বুঝি?'
'যা শালা! ব্যাপারটা হাসি ঠাট্টার পর্যায়ে নেই।' সাইফুল মনুণ্ন হয়।
'সে তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তো ভদ্রমহিলাটি কে?' আয়েশি ভঙ্গিতে সিগ্রেট ধরায় অনজন।
'আন্নাতারা চৌধুরী।' সাইফুল অনজনের চোখের দিকে তাকায় না।
'আন্নাটারা চৌঢুরী। হিউজ বিগ শট খেলেছিস, চান্স আছে লাইনের চার পাঁচ গজ আগেই ধরা খেয়ে যাওয়ার।' অনজন পরপর তিনটা রিং ছাড়ে ধোঁয়ার।
'কেন?' সাইফুল ঘুরে দাঁড়ায় এবং অনজনের চোখের দিকে তাকায়।
' মিসটাইমিং হওয়ার সম্ভাবনা যেমন প্রবল, তেমনি গেমটা তুমুল প্রতিদ্্বন্ধিতাপূর্ণ হবে বলেই আশা করছি। যদ্দুর শুনেছি, এ লাইনে ইতোমধ্যে বেশ ক'জনই নাম লিখিয়েছে।'
' তার মানে আমার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে?'
অনজনের ধারালো গোঁফ আরো সুচালো হয়। কী যেন ভাবার চেষ্টা করে, খাতায় একটা বাঘ আঁকে যার চেহারা বিড়ালের মতোই বোকাটে। কলমটা ছুঁড়ে ফেলে বলে,' না, আমি তা বলছি না, তবে এটা একটা জটিল ইকুয়েশন।'
সাইফুল ধৈর্য হারায়,' একটু সরল করে বল।'
অনজন একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলে,' তোর ব্যাপারটি কি আন্না জানে?'
আন্নাতারা যে জানে না, ব্যাপারটি যে তা না, সেটা যে সাইফুল বোঝে না, ব্যাপারটি তাও না। ফলে দ্বিধান্বিত সাইফুলকে বলতেই হয়,' সম্ভবত না।'
'তাহলে ওকে আগে জানা। তারপর দেখ ও কী বলে।' অনজন ব্যাপারটির অতি সরলীকরণ করে দেয়।
'যদি না করে?' সাইফুল মরমে মরে যায়।
' হঁ্যাও তো করতে পারে, নাকি?' অনজন সম্ভাবনাকে খারিজ করে দেয় না।
সাইফুল তবু গাইগুই করে,' যদি না করে তখন কী হবে ভাবতে পারিস?'
'খুব পারি। তুই শালা ধনে প্রাণে মারা যাবি, এইতো? আবার কী' অনজন এবার ঠা ঠা করে হাসে। সাইফুলও হাসে, তবে সে হাসিতে জোর নেই আগের মতো। অনজন কলমটা কুড়িয়ে এনে আরো একটা বাঘ আঁকে, যার চেহারা মাদী বিড়ালের মতো পানসে। পাশে লেখে আন্নাতারা + সাইফুল। আর বলে,' আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস?' সাইফুল কাঁচুমাচু হয়।
' আর দু'দিন এ কথা চেপে রাখলে নির্ঘাৎ টেঁসে যাবি। ভালো চাস তো তাড়াতাড়ি বলে ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্তকর। নইলে তুই শালা অলুম্বুস এমনিতেই মরে যাবি।' অনজন এবার একটা রিকশা আঁকে এবং রিকশার চাকার নিচে লেখে রিকশাওয়ালা। সাইফুল দোনোমনো করে বলেই ফেলে,' এখনই কি বলবো?'
'যা শালা..এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে? রাত তিনটা। সকালে উঠে বলিস।'
সাইফুল কাথা টেনে মাথা গুঁজে দেয় কাথার ভেতর। কাথার ভেতর ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠে জারুলের বেগুনি বন। কৃষ্ণচুঁড়ার লাল বন। বাঁদর লাঠির হলুদ বন। জঙ্গুলে মেয়েরা বেগুনী লালে হলুদে ইচ্ছেমতো সাজে। তারপর হাতে হাত ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে। চুয়ের নেশায় তাদের ঢুলুঢুলু আখি, বুকে গোল্লাকার নিরীহ নরোম পাখি- এ রাতে সবই দিলখোলা। দ রে কোথাও বাঘ ডাকে। সাইফুল ঘুরে বেড়ায় জোসনায় ধুয়ে যাওয়া বনময়। খানিক পরেই আন্নাতারা আসে খুব অল্যে, মাথায় লতায় পাতায় জড়ানো তৃণ গুল্মের মুকুট। বনের গাছেরা হেসে উঠে অযথা। গাছে বসে থাকা পাখিরা গান ধরে সুখের। আন্না এগিয়ে আসে বড় ধীর গতিতে। এতটাই যে অসহ্য ঠেকে। চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসে জল, বালিশ হয়তো ভেজে, সাইফুলের কি আর সে খেয়াল আছে?
আন্নাতারা এলে, বোম্বাস্টিং চাঁদের রাতে, নির্দিষ্ট ণে, নির্দিষ্ট স্থানে, কথামতোন, সাইফুল ভুলে যায় পৃথিবীর সব। যতটা পারে আলগোছে হাত ধরে। কিছু না বলার আনন্দে দেখতে থাকে নিজেরা নিজেদের। দেখা শেষ হলে, যেহেতু শেষ হয় সবই, হো হো হিহি হাসিতে ফেটে পড়ে, দৌড়ায় দু'জনকে দু'জনায় ধরবার, ধরা দেবার আনন্দে, বনময়।
হাসির শব্দে ডাইনোশুয়োর আসে, যথারীতি। ঝ্যাঙ্গং ঝ্যাঙ্গন চিৎকারে ফেটে পড়ে বনময়। বীভৎস আনন্দে ভেঙে ফেলে বৃরে গ্রীবা, পাখির গান, ফুলের সৌরভ। জীঘাংসার আগুনে পুড়িয়ে দেয় গোটা অরণ্যানী। ভয়ে বিবর্ণ আন্নাতারা-সাইফুল ছুটতে থাকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে, কখনো ছোট টিলা পেরিয়ে, আবারো কখনো বা রু ফসলের মাঠ, কখনো বা জলহীন ছোট্ট নদী। তারপর ওরা চলে আসে এক ভিন গাঁয়ে।
জীর্ণ কুটিরগুলো দাঁড়িয়ে আছে জবুথবু, জন নেই, মনিষ্যি নেই, নেই পশু পীরও দেখা। সবই রু বেজায় খটখটে, সবুজের লেশ নেই। সাইফুল আন্নার চোখের দিক তাকায় সেখানেও একই জিজ্ঞাসা। সাইফুল চিৎকার করে ডাকে 'কেউ আছেন?' একবার দুই বার তিনবার। কোনো সাড়া নেই, শব্দ নেই। দু'জনই এবার দুজনের চোখে তাকায়, দু'জনের চোখেই একই জিজ্ঞাসা, ভয় ভয় ভাব। ভয় কাটাতেই সাইফুল আরো জোরে চিৎকার করে ওঠে,' গ্রামে কেউ আছেন?' আন্নাতারাও চেঁচিয়ে ওঠে, 'আমাদের সাহায্য দরকার, আমরা বিপদে পড়েছি।' মনুণ্ন হয় সাইফুল, বিপদে পড়ার কথাটাকে সে ভালোভাবে নেয় না। আন্নার বোকামিতে খানিকটা বিরক্তও হয়। আবার মায়াও লাগে। আশেপাশে কেউ নেই দেখে টুক করে চুমু খেয়ে সাইফুল আবার চেঁচিয়ে ওঠে,' কেউ আছেন? কেউ কি নেই?' মনে মনে বলে কোনো শালার পুত্রই কি নেই?
ঘড়ঘড়ে একটা আওয়াজ শোনা যায়, হঠাৎ অসঙ্ষ্ট। সাইফুল শুনতে পায় না, আন্নাতারা কিন্তু ঠিকই শোনে 'সাই..কোনো শব্দ পেয়েছো?'
না তো! আবারো ডেকে উঠতে যায়, 'আমি মনে হয় পেয়েছি' আন্নাতারা এ দাবি তাকে থামিয়ে দেয়। 'কচু শুনেছো বলে আন্নাতারা কান মুচড়ে দিতে যায় 'এতণ ধরে চেচাচ্ছি কোনো শব্দ পেলাম না। আর তুমি পেয়েছো।' আন্নাতারা তার কানদুটোকে ধরতে দেয় না সাইফুলকে, তার আগেই বলেই 'ওই যে শোনো। শব্দটা আবার হচ্ছে।' সাইফুলও মনোযোগী কান পাতে। ঘড়ঘড়ে একটা শব্দ এবার সাইফুলও শুনতে পায়। সতর্ক হয় যে কোনো কিছুর মোকাবিলায়।
' হাঁরের নগাল ক্যারা চিল্লায়?' বলে মানুষের গলায় কে যেন বলে উঠে। আন্নাতারা চমকে গিয়ে সাইফুলের গায়ে লেপ্টে দাঁড়ায়। চাদরে ঢাকা একটা জবুথবু মানুষ এসে ওদের কাছাকাছি দাঁড়ায়। ' আফনেরাই চিল্লাইতাছেন না বড়?'
সাইফুল জবুথবু মার্কা লোকটা যে মানুষই, নিশ্চিত হলে হাফ ছেড়ে বলে,' হঁ্যা আমরাই।'
' আফনেরা ক্যারা?' জবুথবু লোকটা তার খুনখুনে বৃদ্ধ গলায় আরো জানতে চায়।
'আমরা ভিন গাঁয়ের মানুষ।'
' ক্যা? আফনেরা জানেন না যে এই গেরামে অভিশাপ নাগছে?'
'কীসের অভিশাপ।'
'বুজবার পারতাছেন না?'
সাইফুলের ধন্দ লাগে, সে ঠিকই বুঝতে পারে, তারপরও সেটা যদি সঠিক না হয়, তবে বোকামির খপ্পড়ে পড়ার চান্স থাকে। তাই সে চুপ করে থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করে।
তাই বৃদ্ধই চেঁচিয়ে উঠে,' ক্যা? দেকতাছেন না, কোনো গাছ নাই পালা নাই, জন নাই, মনিষ্যি নাই, গরু আঁস মুরগি কিচ্ছু নাই?'
'হ্যাঁ..হ্যাঁ সেতো ঠিকই। সত্যিই তো আমরা কিছুই দেখিনি।' বোকামিটাকে সাইফুল বৃদ্ধকে উৎসাহ দানের টনিক হিসাবে ব্যবহার করে। তাই বৃদ্ধও না জানা লোককে জানাবার দায় নিয়ে ভড়ভড় করে বলে,' এইন্যা ব্যাকই আছিলো আমাগো গেরামে।'
'কিন্তু গেলো কোথায়' সাইফুল প্রশ্ন করে বৃদ্ধকে নিজের ইচ্ছেমতো এগিয়ে নিয়ে যায়।
' হে কতা ক্যারা কইবো, আর ক্যারাই বান হুনবো?'
'আমি শুনতে চাই 'বলে আন্নাতারাও সাইফুলের মতো একই কাজ করে। তবে না জেনে, অতি কৌতূহলে।
' ফইজুদ্দি, তুফাজ্জল, ছাওমিয়া ওরা ব্যাকেই আছাল। কইলাম সার দিয়্যা জমির পুটকি মাইরো না। আমার কতা তো হুনলোই উইল্টা কইলো 'শরবেশ..তুই কিন্তুক পছা কতা কইস না, আঙ্গো ইসাব মতো আঙ্গো চলবার দে। তর পছন্দ না অয়, বাইত্তে যাইয়্যা বউয়ের বুনি টানগা..এনে আহিস্যা।' আমি নাহি পছা কতা কই? এহন তরা কনে? ক্যারা বউয়ের বুনি টানতাছে? মইরা সাফা অইয়্যা গেছে গা হালারা। হালারা মরছে তো মরছেই, বউ পুলাহান হুইদ্দা মারছে। আমার কষ্ট অনেই। ওগো বউ পুলাহানরা তো কুনো অন্যায় করে নাই, তারা মরলো ক্যা?
তাপফরও আমি বুছার নগাল বার বার গেছি, ওই ফজা..ওই ছাও মিয়া ্যাতে সার দিইস না...দেইস নারে দেইস না। আমার কতা ক্যারা হুনে। ওগো তহন বাক বাক্কুম দশা। দশ মুণ, বারো মুণ কইর্যা ধান পায় এক ্যাতেত্থন। চোকে তহন লুব আর লুব। বেশি বেশি কইর্যা সার মারে, নানান পদের সার। ঢিপকল দিয়্যা পানি তুলে। আরো কত ধুনফুন সিস্টিম। ওরা তো আর জানে না মাটির তল দিয়্যা কী ঘইঠ্যা যাইতাছে। আমি টের পাই, বুক ধরফড় কইর্যা কাঁফে। পানি খাই বিষের নগাল তিতা মুনে অয়, ওগো ্যাতের ধানের চাইল দিয়্যা একদিন ভাত রানছিলাম, খাইয়্যা হারি নাই। বুঝবার পারলাম বিষ ছড়াইতাছে।
মান সম্মান ভাইঙ্গ্যা একদিন ওগোরে আমার মুনের কতাডা কইয়াই ফালাইলাম। ওরা আমার কতা হুইনা খ্যাকখ্যাক কইর্যা আসলো আর কইলো,' বুইড়্যা অইয়্যা গেলি গা শরবেশ, তাও তর নইটামি গেল না। বাইত্তে যাইয়্যা বউয়ের বুনি টান গা।' ইয়্যার আর বছরও ঘুইর্যা আইলো না, ফাস্টে মরলো ছাও মিয়া, ওর পাওয়ের মইদ্যে কাটাগাড়ার নগাল কী জানি অইছিলো, ডাক্তার কয়্যা হারলো না কিছুই। এরপর গেল তুফাজ্জল। ওরও ওইরহমই কি জানি অইছিলো। এরপরেই শুরু অইল আসল খেল। ্যাতের ফসল পাকার আগেই হলুদ অইয়্যা মইর্যা যায় গা। যতই সার মারে সবুজ আর অয় না। ফজার মাতা খারাপ। একদিন অগো অন দিয়্যা যাইবার নুইছি ফজা ডাইক্যা কয়,' শরবেশ ফসল তো কিছুই পাইল্যাম না।' আমি কইল্যাম কেমনে পাবি? বিশ তিরিশ বছর তো জমিডারে লুইট্যা পুইট্যা খাইলি, এহন আর চাস ক্যা?'
ফজা কতা কয় না। এর পরের বছর যে বীজ ছিটাইলো তা থিকা কুনো চারাই অইলো না। না খাইয়্যা মইরা গেল ফজা, ফজার বউ আর আষ্টজন পুলাহান। তুফাজ্জলের বউ শহরে গেল গা, কুলে ম্যায়া নিয়্যা, চাইর ঘর তাঁতি আছিলো ওরাও গেল গা একদিন। এরপর দিন যায় খালি মরার খবর হুনি। একদিন দেখলাম আমি ছাড়া গেরামে আর কেউই নাই। আরো ছয়মাস পরে দেখলাম আমাগো গেরামের চাইরমুইড়্যা সাত গেরামের কেউই নাই। অভিশাপ নাগছে..,.অভিশাপ।'
কথা বলতে বলতে বুড়োর মুখে ফেনা কাটে। বড় এক ঢোক গিলে সাইফুলের দিকে তাকিয়ে বলে,' তা আফনেরা এইহানে মরবার আইলেন ক্যা?'
' আমাদেরও যে একই দশা...জঙ্গলে ডাইনোশুয়োর নেমেছে। ফুল বৃ লতা পাতা সব তছনছ করে ভেঙে ফেলেছে, আগুন ধরিয়ে দিয়েছে পুরো জঙ্গলে।'
' ব্যাবকতে মিলা হেই ডাইনা হালার আড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা চহির তলে বাইন্দা রাকলেন না ক্যা?' বুড়ো পরামর্শ বাতলায়।
' দাদা এইটা একটা উত্তরাধুনিক ডাইনোশুয়োর, রাস আর খারি দজ্জালের চাইতেও খারাপ।' সাইফুল অপারগতা জানায়।
'তাইলে তো ঠিকোই আছে, সামান্য এক সারের নগেই আমরা পারলাম না, আর আদুনিক ডাইনাশুয়ারের নগে আফনেরা পারবেন কেমনে?' বুড়ো ব্যাপারটা বুঝে, বুঝেই বলে,' ঠিক আছে মন চাইলে আমাগো এনে থাহা হারেন, কিন্তুক খাইবেন কি? মাটির তলে যে কয়ডা চিড়া মুড়ি রাকছি, তা দিয়্যা মাস তিনিও তো চলবো না তিনজনের। তয় পরিশ্রম করা হারলে জমি থিক্যা নতুন আলু তুলা হারুম। তা আফনেগো যে আদুইর্যা শইল দেকতাছি, আফনেরা কি পারবেন খাটা খাটনির কাম? '
' পরিশ্রম করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আপনাদের জমিতে তো বীজই গজায় না?' সাইফুল আন্নাতারার দিকে তাকিয়ে সমর্থন আদায় করে, আন্নাতারাও হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ে,' তাইতো!'
বুড়ো হাসে,' খাড়াইতেই ভুইল্যা গেলেন গা? আমার এক টুকর্যা পালানে কেউরেই সার দিবার দেই নাই, ওইডা দিয়্যাই চলতাছি। তাছাড়া অভিশাপের চাইর পাঁচ বছর কাইট্যা গেল গা। ফজার ্যাতে কয়ডা ডাঙ্গার বীছি ছিটাইয়্যা দিছিলাম..কয়দিন আগে..একটা দুইড্যা যে জ্বালাইতাছে না, তাও আবার না। তয় পানির খুব সমেস্যা। পালানে একটা কুয়া কাটছি, পানি যে নাই, তা না, আছে। তয় অনেক নিচে খুব কষ্ট কইর্যা তুলন নাগে। আফনেরা যোয়ান মর্দ, ফূর্তি কইর্যা যেমুন গতর চাষ দ্যান, তেমুন কইর্যা জমি চাষ দিলে এই গেরামেই আমি আবার সোনা ফলাইবার পারুম। ' চকিতে আন্না-সাইফুল চোখাচখি করে আর গা ছমছমে লজ্জায় লাল হয় তারা। বুড়া কিক খিক করে হাসে আর বলে ওই কুণার ঘরে আফনেরা থাহেন, আফনেগো নিগ্যা আমি চাইড্ডা চিড়া নিহা আহি।'
এরপর কাঁথার তলে সাইফুল দেখতে থাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সব দৃশ্যাবলি, ঘামে গরমে জেরবার সাইফুল ভীষণ অনুর্বর জমি চাষে নামে দিনের বেলা, আর রাতের বেলায় আন্নার তুমুল উর্বর গাত্রভূমিতে চালায় সুতীব্র লাঙলের ফলা। জমে উঠে প্রেম আর পরিশ্রমের সুনিবিড় খেলা। অথচ তখন ভয়ানক চৈত্র মাস, যখন মানুষের একশ' টাকার নোট শুকিয়ে এক টাকা হয়ে যায়। সেই সময় উত্তর দিক থেকে একটা অচেনা লোক এগিয়ে আসে সাইফুলদের গ্রামে। কাছে আসতেই সাইফুল তার নাম জিজ্ঞেস করে, লোকটা উত্তর দেয়,' আমার নাম মাসানুবুফুকুউকা।' বলতে না বলতেই বড় বড় ফোটায় নেমে আসে তুমুল বৃষ্টি, বহু আকাঙ্খিত।'
কাথার বাইরে ঠাঠা হাসিতে আবারো ফেটে পড়ে অনজন অযথা। সামনে বসে থাকা তাপস জিজ্ঞেস করে,' কী হয়েছে, অনজন দা, হাসতেছেন কেন?'
অনজন উত্তর দেয়,' গাধাটায় আবারো প্রেমে পড়েছে।'
গাড়ি ঘোড়ার মতোই দৌড়ায় তীব্র বেগে। ত্যান্দর কন্ডাকটর সামনের দিকে ভাড়া কেটে পুনরায় ফিরে আসে পেছনে 'কী ভাড়া দিবাইন ন্যাহ?'
' ভাড়া না তরে হাদলাম। তুইতি না নিলি ন্যা?' সাফ জানিয়ে দেয় এক যাত্রী।
' কত জানি দিছিলান?'
' ক্যা? ভাড়া যা তাই। পাঁচচলি্লশ ট্যাহা।'
' আজক্যার ভাড়া তো পাঁচচলি্লশ ন্যা। সত্তর ট্যাকা।'
' তুই কইলেই মানমু?'
' ব্যাকেই তো মানলো।'
' ব্যাকে গু খাইলে আমিও গু খামু? একটু থেমে আরো বলে, 'ব্যাকের তো কালা ট্যাহা আছে, আমার আছে না বড়?'
' ওই সুমস্ত ভাবের কথা বাইত্তে যাইয়্যা কাক্কীর নগে প্যাঁচাল পাইরেন। এহন চালু কইর্যা পকোট থিক্যা সত্তরডা ট্যাহা বাইর করেন। চালু করেন... বলে ছোট্ট একটা ধমকও দেয়।
' এই জ্যান্দরের বাচ্চা কতা বার্তা ইশাব মতো কবি।'
' তোমার হাতে আবার কী ইশাব কইর্যা কতা কমু? ভাড়া না দিবার পারলে সামনের ইস্টিশনে ভর্দলোকের মতো আলগুস্তে বাস থিক্যা নাইম্যা যাইবা।' যাত্রীর কেউগা চেহারা আর ময়লা জামা দেখে নিশ্চিন্ত মনে কন্ডাকটর আপনে আজ্ঞের ধার ধারা শেষ করে দেয়। কিন্তু সেটা মানবে কেন অত ভালো যুক্তি বোঝা যাত্রী? ফলে ধুমাশ করে সে কন্ডাকটরের নাক প্যাঁচিয়ে একটি ঘুষি বসিয়ে দেয়। হতভম্ব কন্ডাকটর দু' সেকেন্ড সময় নেয় সামলে উঠার, তারপরই ধাস করে যে হাতের আঙ্গুলের খাঁজে খাঁজে টাকা রাখে, সে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে উল্টো দিক দিয়ে কিল বসায় বাসের ছাদে আর মুখের গোল থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসে,' ওস্তাদ গাড়ি থামান। হালায় আমারে বঙ্নি দিছে।' সাংঘাতিক উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে আরো বলে,' আমার কুচ থন নয় আজার ট্যাহা কাইড়্যা নিছে। ওস্তাদ গাড়ি থামান... হালারে আমি মারুম..।'
ঘ্যাচ করে গাড়ি থামিয়ে দেয় ড্রাইভার। যাত্রীরা রা..রা করে উঠে। ভদ্রলোকদের গলা এবার সাংঘাতিক সোচ্চার' ড্রাইভার সাহেব...গাড়ি থামালেন কেন? গাড়ি চালান।' পাশে থেকে বলে উঠে,' হ..জাগাডা ভালো না...ডাকাতি অয় মাঝেমদ্যেই।' আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে, 'ওই ড্রাইভার..গাড়ি ধামাইল্যা ক্যা? ড্রাইভার সাব গাড়ি থামালেন ক্যান? ওই ডাইবর গাড়ি ছাড়ই। ওই চুদানির পুলা ডাইবার গাড়ি ছাড়। ড্রাইভার সাহেব, গাড়ি ছাড়ছেন না কেন?' যাত্রীরা একজোট হয়ে চিৎকার শুরু করে এবার। গাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় ড্রাইভার। কারণ পচানব্বই ভাগ গ্যাঞ্জামও সামাল দেয়া যায়, কিন্তু একশ'ভাগ অসম্ভব।
গাড়ি আবারো ঘোড়ার মতো দৌড় শুরু করে রাস্তা ধরে। কন্ডাকটর বঙ্নি মারা যাত্রীর আশেপাশেই ফোঁস ফোঁস করে ঘোরে। কিন্তু কিছু করতে না পারার নিরানন্দে হাঁসফাঁস করে। খানিকণ পরে কন্ডাকটর যখন নিঃসন্দেহ হয় প্রতিশোধ নেওয়া অসম্ভব, তখন গম্ভীর হয়ে পুনরায় ভাড়া কাটতে আরম্ভ করে। কন্ডাকটরের ব্যথামাখানো গাম্ভীর্য নাকি অজানা গ্যাঞ্জামের আশঙ্কা নাকি দয়া, সে যাই হোক যাত্রীরা আর কথা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত পঁচিশ টাকা কন্ডাকটরের হাতে তুলে দেয়। শুধু একজন বলে.. 'কন্ট্রাকটার ভাই..পাঁচ ট্যাহা ছট আছে...বিশ্বাস করেন.. আর ট্যাহা নাইঙ্ক্যা..থাকল্যে দিয়া দিতাম।' কন্ডাকটর কথা না বলে পাঁচ টাকা কম পয়ষট্টি টাকা নিয়ে 99.98 ভাগ অনৈতিক ভাড়া কাটার মিশন সাকসেসফুল করে তোলে।
সারা রাত বানানো প্রেমে মশগুল থেকে ঘুমহীন সাইফুল ভোরের আলো ভালো করে ফোটার আগেই আন্তহলীয় দূরালাপনী যন্ত্রের সাহায্যে খুশি খুশি গলায় আন্নাতারাকে বলে ,' হ্যালো আন্নাতারা..মাসানুবুফুকুউকা ..'
আন্নাও উত্তর দেয়,' মাসানুবুফুকুউকা'
' আমি তোমাকে ভালবাসি..'
' এইগল্যা কী কন?'
'সম্ভবত.. আমি.. বোধহয়.. তোমার.. প্রেমে.. পড়েছি..।'
' আর কিছু বলবেন?'
' ন্ ননা।'
' রাখি' বলে সুরভি রেখে দেয় পৃথিবীর সব। সাইফুলের জীবনের যত মধু, জমাকৃত রোম্যান্টিক সব প্ল্যান কিংবা একসঙ্গে ফুচকা গেলা, সিনেমা দেখা, সবই মুহুর্তর্ে ফালতু হয়ে যায়। টলতে টলতে রুমে ফিরে আসে সাইফুল এবং কখন যে ঘুমিয়ে যায়, কে জানে?
সকাল গড়িয়ে দুপুরে ঘুম ভাঙে, ঘুম থেকে উঠে বুকজুড়ে একটা স্থায়ী টনটনে ব্যথা টের পায়। হুহুকারের শো শো শব্দও শোনে। মুখে জল দিয়ে মলত্যাগ না করেই সাইফুল বেরিয়ে পড়ে হল থেকে। এলোমেলো হাঁটতে থাকে। ট্রান্সপোর্টে যায়, চা সিগ্রেট খায়। তারপর গিয়ে মুক্তমঞ্চের পেছনে ওই কালভার্টে গিয়ে বসে।
হঠাৎ বন থেকে বেরিয়ে আসে আন্নাতারা, কপালে সবুজ টিপ, একগাদা বন্ধুসমেত। দলটা গোল হয়ে বসে যায় হ্রদের ধারে। সাইফুল গন্তব্যহীনতায় ভুগে ওদিকেই হাঁটে।
' কত বৃষ্টি বাদলা মন উতলা
ভিজে না তো কোনো ছায়া
আলো ছায়া বনে ভাঙা ডাল দেখো
ছোট ফুল কত একা...
মাসানুবুফুকুউকা... মাসানুবুফুকুউকা..মাসানুবুফুকুউ...কা...'
এটুকু গেয়েই গায়ক বলতে থাকেন, 'মাসানুবুফুকুউকা ছিলেন একজন জাপানি প্রকৃতি বিজ্ঞানী। তার ওপর দায়িত্ব বর্তালো ফসলের তিকারক পতঙ্গ ধ্বংসের কীটনাশক আবিষ্কারের। বানালেনও তিনি। কিন্তু কীটনাশক প্রয়োগে দেখা গেল ফসলের তিকর পোকা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকারী পতঙ্গরাও মারা পড়লো, দেদারসে। ভাবনায় পড়লেন মাসানুবুফুকুউকা। ভীষণ ভাবনা। দিন যায় রাত যায়, নাওয়া খাওয়া ভুলে যায় মাসানুবা। দীর্ঘদিন পর.... হঠাৎ... একদিন...। মাসানুবুফুকুউকা আবিষ্কার করে বসলেন সেই প্রাকৃতিক চাষপদ্ধতি...যেখানে ব্যবহার করা হবে না কোনো রাসায়নিক সার.. কিংবা কোনো কীটনাশক। ''দু' তিন বছর ফালতু ফেলে রাখো জমিটা। এ সময় জমিতে যা গজাবে, ঘাস, লতা, গুল্ম, পাতা, সবাইকে বাড়তে দাও ফন ফন করে। মরে যাওয়ার সময় হলে মরে যেতে দাও, যেতে দাও পচে গলে ওই মাটিরই বুকে। আর তাতেই রাসায়নিক সার কীটনাশকের যন্ত্রনায় এতদিন ধরে জর্জরিত জমিটা ঘাস লতা গুল্মের পচা গলা শবটাকে পাবে যন্ত্রনা লাঘবের পাচন হিসাবে। আর এভাবেই দু' তিন মৌসুম পরেই রাসায়নিক আর কীটনাশকের দহনে জ্বলা জমিটা ফিরে পাবে অতীতের উর্বরতা। তারপর চাষ করো যা কিছু..ফলন কিন্তু একটুও কমবে না, বরং বাড়বে দ্বিগুণ তিনগুণ...। আর তিকর পতঙ্গের কথা ভাবছো? ভয় নেই। ফসলের উপকারী পতঙ্গদের চাষ বাড়াও। ওরাই ব্যবস্থা নিবে তিকর পোকাদের।'
' পাখিটার কথা বলি যে কারণ
আমাদেরও ডানা কাটা
গরুটার কথা বলি যে কারণ
আমাদেরও চোখ বাঁকা
মাসানুবুফুকুউকা মাসানুবুফুকুউকা মাসানুবুফুকুউ...কা...'
'মাসানুবুফুকুউকা আমাদের সময়ের হিরো। তাকে বন্ধু ভাবলেই শুধু আমরা বাঁচাতে পারি আমাদের সাতরঙা পৃথিবীটাকে, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক আর হাইব্রিড বীজের উৎপাত থেকে।' ঝাঁকড়া চুলের গায়ক তার চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে উসকোখুসকো চুলগুলোকে বশে আনে। সাইফুল আন্নাতারার দিকে বহু প্রেম নিয়ে তাকায়। আন্নার আকাশ দেখা ফুরায় না, ফুরায় ঢাকা থেকে আগত গায়কের সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলা।
এর দিন তিনেক পরেই আন্নাতারা সাইফুলকে ডেকে নিয়ে যায় মুক্তমঞ্চের পেছনে কালভার্টে। পেছনেই বাচ্চা বট গাছ। আন্না শুরু করে ' আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।'
সাইফুল কেঁপে উঠে আশা নিরাশার দোলায়। 'বলো' বলে দুলুনি কমায়।
'যে বিবদমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে আমাতে এবং আপনাতে। তার জরুরি অবসান প্রয়োজন আছে বলে কি আপনার মনে হয় না?'
'নিশ্চয়ই।' সাইফুল দিন তিনেকের হেবি বেদনাবিদুর পরিস্থিতির সত্যিই অবসান চায়।
'আপনি আমার কাছে যা চেয়েছেন, সে বিষয়ে আমার বক্তব্য কি আপনি জানতে চান?'
' হ্যাঁ চাই-ই তো'
' আমার বক্তব্য হচ্ছে আমি চাই না।'
সাইফুল কোথায় যেন কী হারানোর ব্যথা পায়, বড্ড জোরে। তারপরও সেটা ফিরে পাওয়ার লোভে শেষ চেষ্টা করে 'যদি কখনো, কোনোদিন তোমার মনে হয় তুমি চাও?'
' কখনো, কোনোদিন কোনোভাবেই আমার সেটা মনে হবে না। কারণ আমি ওভাবে ভাবি না।' মুক্তমঞ্চের পেছনে বাচ্চা বটগাছটা পর্যন্ত থরথরিয়ে কাঁপে।
খন্দে পড়ে বাস বারকয়েক লাফিয়ে উঠে। ঝাঁকিতে জেগে উঠে সাইফুলের টোনার বিড়াল। এবং প্রথমেই জিজ্ঞেস করে,' সাইফুল আমরা এখন কোথায়?'
' হাঁটুভাঙ্গা পার হলাম মাত্র।'
' আর কতণ লাগবে।'
' ঘণ্টাখানেক।'
' পকেটের টঙ্কাগুলো কি যথাস্থানেই আছে?'
' হ্যাঁ।'
' তোমার মনের বেদনা?'
'যথাস্থানেই।'
' একটুও কমেনি।'
'না'
' তুমি কি বেদনা কমাতে চাও?'
' চাই-ই তো।'
'তাহলে তোমার পকেটের টাকাগুলো ভেঙে ফূর্তি কিনতে পারো সহজেই।'
'টাকা দিয়ে ফূর্তি কেনা যায় না কি?'
' দেখো তোমার বাল গজিয়েছে তাও তো বছর দশেক হলো। তারপরও কেন এমন অবান র বোকাটে সব প্রশ্ন করছো?'
' প্রশ্নটা অবান্তর হবে কেন? টাকা দিয়ে যে আনন্দ ফূর্তি কেনা যায়..ব্যাপারটাই তো আমি জানি না।'
' তুমি তো আসলে জগতের কিছুই জানো না। নইলে কোন গর্দভ প্রেমে পড়ে? প্রেমে তো পড়ার কিছু নেই, তবে প্রেমে ফেলার অবশ্যই কিছু আছে।'
' তুমি কিন্তু এই চান্সে আমাকে বেশ দু'হাত নিয়ে নিচ্ছ।'
' আমি নিচ্ছি! না, তুমি দিচ্ছ?'
' আমি দেব বলেই তুমি নেবে?'
' কী বলছো এসব! মানুষ মাগনা পেলে আলকাতরা খাওয়া ছাড়ে না, আর আমি তো একটা মিথ্যাকারের বিড়াল, তুমি দেবে আর আমি নেব না?'
' কিন্তু টাকাটা তো মা বহু কষ্টে রোজগার করেছে।'
' টাকা কষ্ট করেই রোজগার করতে হয়। আর মা বাবারাই তা করে থাকে। তবে সেটা ভাঙতে হয় ফূর্তি করার জন্যই। এবং তা ছেলেমেয়েরাই ভাঙ্গে।'
' তুমি আবার ফালতু বোঝাচ্ছ।'
' আমি একদম ফালতু বোঝাচ্ছি না। তোমার বুকে যে স্থায়ী ব্যথা গেড়ে বসেছে, সেটাকে তো ঝেড়ে তাড়াতে হবে, নাকি? আর ওটাকে তাড়ানোর জন্য তোমাকে ফূর্তির রাস্তাই ধরতে হবে।'
' ফূর্তির রাস ায় কী কী পাওয়া যেতে পারে?'
' দেখ তোমার বাল পাকার আর মাত্র বছর বিশেক বাকি। তারপরও তুমি জিজ্ঞেস করছো ফূর্তির রাস্তায় কী কী পাওয়া যায়? আরে কী পাওয়া যায় না তাই জিজ্ঞেস করো।'
'ঠিক আছে ঠিক আছে...ক্ষেপে যাচ্ছ কেন?'
' পেছি না, শুধু তোমার বুরবুকামি দেখে...খারাপ লাগছে।'
' খারাপ লাগার কিছু নেই। এখন ব্যথা কমাবার উপায় বলো।'
' বেশ্যালয়ে যাও। ভালো একটা মেয়ে দেখে সারারাত প্রেম করে চলে এসো। ব্যথা কমবে। '
'কী!?'
' চোখ বড় বড় করার কিছু নেই। আমার প্রেসকিপশন মানো...ব্যথা কমবে।'
' দরকার নেই ব্যথা কমার।'
'দরকার পড়বে সাইফুল..দরকার পড়বে। নিজেকে কী ভাবো তুমি? প্রেমিক?'
'কিছুই না।'
'কিছু তো একটা ভাবোই। নইলে শুধু শুধু প্রেমে পড়তে যাবে কেন?'
এবার সাইফুল চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকে। জবাব না পেয়ে উৎসাহহীন হয়ে পড়ে অতু্যৎসাহী বিড়ালটাও। গাড়ি ঘোড়ার মতোই দৌড়ায়। রাস্তার দু'পাশের গাছেরাও। দৌড়ায় বোম্বাস্টিং চাঁদটাও।
রাত দেড়টায় হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়ি পৌঁছায় টাঙ্গাইল পুরাণ বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রীরা হাত পা ঝাড়া দিয়ে মোচড়া মুচড়ি করতে করতে নামতে থাকে। সাইফুলের নামতে ইচ্ছা করে না, ইচ্ছা করে না বাড়ি ফিরতে। তার মনভর্তি এখনো জমাট বেদনা, পকেটভর্তি উত্তেজিত কড়কড়ে টাকা। তারপরও সাইফুল নেমে পড়ে এবং অন্য যাত্রীদের মতোই রিকশা খোঁজায় মন দেয়। একটা রিকশা পেয়েও যায়। কিন্তু রিকশাওয়ালাকে বাড়ি যেতে না বলে যেতে বলে বেবিস্ট্যান্ডে।
বেবিস্ট্যান্ডে চিৎকারের মতোই বাজতে থাকে.. দুনিয়াকা মজা লেলো, দুনিয়াকা হামারি হায়..দুনিয়াকা হা