লোকটা আমার চাইতেও ফালতু ছিল। ব্যাপারটা খাতির হওয়ার প্রথম দিকে টের পাই নাই। কিন্তু খাতির যহন পিতলা খাতিরের মুহী টার্ন নিল তখনই অস্তে অস্তে টের পাওয়া গেল।
লোকটা বু্ইড়া বয়সেও বিয়া করে নাই ক্যা? এই প্রশ্নেই মূলত খাতির পিতলা খাতিরের দিকে যাইবার নুইল। আমিও আর থামাবাইর পারলাম না। লুকটা পুলাহানের নগাল খল খল কইরা হাইস্যা উটল আর কইল শাপলু ভাই যে কী কন না? নিজের বয়সের চেয়ে বড় মানুষরে ইয়ার্কি দুস্ত হিসাবে পাইতে আমোদই লাগে। তাই আন্তরিক এট্টা ধমক দিয়া কইলাম, ধেইশ মিয়া যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দেন। কতা ঘুরাইবার চিষ্টা নিয়েন না হাইস্যা উড়িয়া দিয়া।
তাও লুকটা খলখল কইরা হাসে। পুলাহানের সরলতা নিয়া। বুঝলাম পাতরে ফুল ফুটপ না। অন্য জাগা দিয়া আক্রমণ করন নাগব। কইলাম, যাইগ বিয়া করেন নাই, করেন নাই। ভালো করছেন। তা যৌবনে প্রেম খাইছেন কয়ডা?
লুকটা চা খাইবার নুইছিল তাড়াইয়া তাড়াইয়া। কিন্তু আমার নতুন প্রশ্নের গুতায় তার মুকের আর কাপের চা দুইডাই পইড়া গেলগা হাসির তোড়ে। হাসতে হাসতেই কইল, শাপলু ভাই কি আমারে চাও খাইবার দিবেন না। আমিও হাসি আর সব চতুর মানুষের মতো।
তারপর লুকটা কইল, একটা মেয়ে মুনে হয় আমারে ভালবাসে।
আমি কইলাম, মুনে হয় ক্যা? আপনে তারে জিগান নাই?
না। এহনো জিগাই নাই। তয় এইবার জিগামু। এই বলে লুকটা থামে। আমি তারে কই, তাড়াতাড়ি জিগাশ করেন। জিগাশ কইরা খাওয়া দাওয়া শুরু কইরা দেন।
লুকটা খল খল কইরা হাসে। হাসি থামলে মেয়ে মাল কেমুন এ বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহ করি লুকটার কাছ থিক্যা। ইয়ার মইদ্যেই মনে মনে দেকতে থাকি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের কালো সুন্দরমতোন ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ারত ওই মেয়েটার সাতে লুকটার সাংঘাতিক খাওয়া দাওয়া স্টাট হইয়া গেছে।
এরপর যেদিনই দেখা হৈছে সেদিনই তত্ত্ব তালাশ করছি, কদ্দূর আইগাইলেন? জাইন্যা, তাদাগা দিতাম তাড়াতাড়ি করেন মিয়া। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শুরু করেন। খাওয়া দাওয়া খারাপ কিছু না বইলা অভয়ো দিতাম। লুকটা শুধু হাসে।
এরপর একদিন লুকটার সঙ্গে আমার পিতলা খাতির টুশকা খাইয়া গেল, যেদিন লুকটা আমার কাছে পঞ্চাইশটা ট্যাকা চাইয়া বইল। কইল শাপুল ভাই পঞ্চাইশটা ট্যাকা দেন না? কাইলক্যা দিয়া দিমুনি।
অভিজ্ঞতা থিকা জানি, ৫০ ট্যাকা চাওয়া লুক কাইলক্যা ক্যা কুনোদিনই ট্যাকা ফিরত দেয় না। তাই জিবলাটা আপসেই তিতা হইয়া গেলগা। তাছাড়া আমি নিজেই খাই জুম্বার খিছুরি।
তাই ঈষৎবিরক্ত হইয়াই ৫০ ট্যাকা বাইর কইরা দিয়া দিলাম। পরের দিন লুকটারে আগে থিক্যাই যারা চিনতো তাগো কাছে তত্ত্ব তালাশ করলাম, লুকটার এইরকম বদভ্যাস নিয়িমতই কি-না। যখন জানলাম লুকটার বদভ্যাসটা নিয়মিতই তখন সতর্ক হইয়া গেলাম।
এরপর বহুদিনই দেখা হৈছে। সতর্ক থাকার কারণে আলাপ আর জমে নাই। এইভাবে বেশকিছু দিন কাটার পর লুকটা আরেকদিন ৫০ ট্যাকা চাইয়া বসল আমার সতর্কতা সত্ত্বেও। জিবলাডা বেশ তিতা হঈয়া গেলগা। তারপরো কইলাম, ৫০ ট্যাকা দিবার পারুম না, ২০ ট্যাকা দিবার পারুম। লুকটা কইল তাই দেন। তারপর লুকটা তার ভাগ্যবিড়ম্বনার কাহিনী কইতে লাগল, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদরা তাগো ক্যামনে কইরা ঠকাইছে এই জাতীয় গল্প। কিন্তু গল্পগুইল্যা শুনবার মন আমার ছিল না তখন।
এরপর সংসারে চাকরি বাদে কীভাবে উপরি পয়সা আয় করা যায়-সে ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার চিষ্টা নিলাম। ঘ্যাজঘ্যাজ কইরা দুইডা স্ক্রিপ্ট লেইকা বইলাম টিবি নাঠকের। ম্যালা মাইষ্যের কাছে হুনছি, খালি স্ক্রিপ্ট লেইখাই নাকি বাড়ি গাড়ি মাগীবাজি করা যায়। কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতায় দেকলাম, এইসব ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। কারণ পলগো স্ক্রিপ্ট দুইডা পছন্দ হৈলেও তারা বছরদেড়েক কুনো প্রডিওসার খুঁইজা পাইল না। না খুঁজলই না। ক্যা জানে? কিন্তু তখন আমার রোখ চাইপা গেছেগা। নাটক বানামুইগোছের। গেলাম বন্ধু বান্দবের কাছে যারা টিবি নাঠক বানায়। স্ক্রিপ্ট দেইখা কৈল চলব। তবে দুস্ত আনিসুজ্জামান, মমতাজ স্যারগো স্ক্রিপ্ট বানাই আমি। তুমি এ লাইনে নতুন। তুমারে কেউ চিনে না। তুমি যুদি কুনো টিবি থিক্যা গ্রিরিন সিগন্যাল নিয়া আসতে পারো তাইলে আমি আছি। গেলাম টিবিতে। বাংলাভিশমে। ওরা স্ক্রিপ্ট পইড়া কইল বানাইয়া নিয়া আহেন। দুস্তরে কইলাম। এইবার দুস্তর নানান অর্থনৈতিক কিরাইসিস দেহা গেল। মুনডাই তিতা হৈয়া গেলগা।
মন তিতা দেইখা ইভা আইগিয়া আইয়া কৈল আমার গয়না বেইচা দেই তাও নাটক বানাও। আমি কইলাম, না, তা হয় না। ইয়ার পর নানা ইতংবিতং কইরা ইভার মা অর্থাৎ শাশুড়িআম্মা এক লাখ ট্যাকা ধার দিবার চাইল। কইলাম পরিচালক তানভীর ভাইরে। কৈল, নিয়া আয় বানাইয়া পারুম। নিয়া আইলাম। কাম শুরু। সিডিউল যেদিন ফালাইলাম শুটিনের, তার আগের দিন থিক্যাই আকাশ কানবার নুইল উউ উউ কইরা। তিন নম্বর বিপদ সঙ্কেত। শুটিন প্যাকআপ হৈয়া গেল। দশ আজার বাইরিয়া গেল। আতের তল দিয়া।
এরপর আবারো শুটিনের সিডিউল করলাম। এইবারো একই সিন তিন নম্বর বিপদ সঙ্কেত। আবারো দশ আজার বাইরিয়া গেল। আঁলিয়সের বন্ধু বান্ধবরা আমাগো দেইখা হাসতে হাসতে সান্ত্বনা দেয়। আমরা শান্ত হই। আবারো সিডিউল ফালানের পাঁয়তারা করি। কিন্তু ঈদ আইগিয়া আহায় কুনো নাট্যশিল্পীর সিডিউলই আর ধরা হারি না।
তো এই যহন অবস্থা। হঠাশ কন থিকা যানি শুইনা লুকটা শাহবাগে আহে। কয়, শাপলু ভাই শুনলাম আপনে নাকি নাটক বানাইতাছেন?
আমি কইলাম, হুম। কয়, আমারে কিন্তু নিয়েন আফনের নাটকে। আমি কইলাম, আফনে কী করবেন আমার নাঠকে?
কয়, ক্যা, অভিনয় করুম। কইলাম, আফনে অভিনয় পারেন না বড়?
কয়, কীযে কন না শাপলু ভাই। আমি টিভি নাটকে অভিনয় করতাছি না? এইযে ওইদিনও শুটিং করলাম ওই নাটকে। ওইদিন হেই নাটকে।
আমি কইলাম, বুজজি। তা আফনেরে যে আমার নাঠকে নিমু, কী দিবেন আমারে?
কয়, কী চান আফনে?
কইলাম, শ পাঁচেক ট্যাকা দিবেন এবং এক বোতল কেরু।
লুকটা পুলাহানের নগাল হাইসা উটল খলখল কইরা। কইল, দিমু অসুবিদা নাই। বাবুল ভাই পাশ থিকা কইল, একটা মাগীর ব্যবস্থাও কইরা দিওন লাগব।
লুকটা কয়, তাও সই।
আমি কইলাম, আফনে ক্যামনে মাগী দিবেন। আফনে মাগীবাজি করেন নিহি?
কয়, না আমি করি না। আমার এক বন্ধু আছে। হোটেলে টোটেলে যায় টায়। এইবার আমরা কলকল কইরা হাসি চতুর মানুষের মতো। তারপর লুকটা কয়, না, সত্যি শাপলু ভাই আফনের নাটকে আমারে একটা ভালো পার্ট দিয়েন, হেবি কান্নাকাটির অভিনয় আছে এইরকম।
আমি কইলাম, আমার নাটকে কুনো কান্নাকাটি নাই। তয় আফনের একটা চরিত্র আছে। এক হিন্দু বুইড়া ব্যাটার। যে গাঁজা খায় আর তুরুপ তুরুপ কতা চুদায়। এইবার লুকটা নইড়া চইড়া বহে আর কয়, হ এইডাই আমারে দেন এই পাটটাই দেন। আমি কই, দেহি পরিচালকের লগে কতা কইয়া, আফনেরে পছন্দ করে নিহি। এরপর লুকটা মাঝেমাঝেই ফুন দেয় আমি বিরক্ত হই। কই, সিডিউল হৈলে আফনেরে আমি কমুনি। আপনে ট্যাকা আর মদের বোতল রেডি রাইখেন। লুকটা হাসে আমি হাসি না। কারণ তানভীর ভাই নতুন সিডিউলের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারে না। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই। তানভীর ভাই জড়ায় তার পারিবারিক নানা গিয়ানজামে।
তারপর লুকটার সঙ্গে দেখা হয় আবার আজিজ মাকের্টে, যহন আমার নাটকের নিশা কাটছে। লুকটা কয়, শাপলু ভাই কিছু ট্যাকা দেন না। আমি মুখচোখ শক্ত করে কই, আমার কাছে ট্যাকা নাই।
লুকটা কয়, পাঁচ দশ ট্যাকাও হবো না? আমি কই, না। অথচ আমার পকেটে তখন একশ' ট্যাকার একটা নোট এবং কিছু খুচরা ট্যাকা নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে।
লোকটা চলে গেল। পরে শুনলাম লুকটা তার মরা মাওরে দেকতে গ্রামে গেছিল। শ্রাইদ্দ শ্যাষ কইরা ঢাকায় ফিরা আহার কতা আছিল। আহে নাই। মাঝরাইতে বুকে ব্যাদনা উইঠা মইরা গেছেগা। ভালো হৈছে। লুকটা আমার কাছে আর কুনোদিন ট্যাকা চাইতে পারবো না। যুগল রায় আর কুনোদিনই আমার পকটের ট্যাকা ছিনাইয়া নিতে পারব না।
মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০১০
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মতামত(সমূহ):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন