সোমবার, ১৭ মে, ২০১০

একটি প্রাকৃতিক সায়েন্স ফিকশন : শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা, সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী 1

বাবা আমাকে শিখিয়েছিল অর্থাৎ বলেছিল অথবা শেখাতে চেয়েছিল। আমি শিখিনি, বরং ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি সত্বর। ' পৃথিবীর কোনো কিছুই ফেলনা নয়...প্রত্যেকটা জিনিসেরই মূল্য আছে, ঈশ্বর সকল কিছুকেই আরো বেশি প্রয়োজনীয় করে তৈরি করেছেন।' ভুল বলেছিল, আমার কাছে মনে হয়-সব কিছুই বাগদত্তা, প্রেমহীন বউয়ের মতোই অপ্রয়োজনীয়।

আকাশ মাথায় নিয়ে শুয়ে আছি, মাটিতে। দীর্ঘকাল পর। দুশ্চিন্তামুক্ত মাথা। কখনো চিৎ হয়ে, কখনো এপাশ-ওপাশ। মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে আমার ডান হাত, মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে বাম হাত। আবার কখনো বা পুরোটা পিঠ। বন্ধুর মতো একটা মেয়ে, বসে আছে পাশে, একটু পেছনে। আরেক পাশে প্রেমিকা মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। সামনে লাল লাল শাপলাফুলফোটা হ্রদ। জলের রং জলের মতোই আদুরে কালো। সেইবার...এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার, চিলি্লয়ে চিলি্লয়ে তার বন্ধুকে কিংবা প্রেমিকাকে নয়তো বউ নতুবা শ্যালকস্বরূপ কোনো প্রিয় আত্মীয়ের নিকট গল্প মারছিল, তার দূরালাপনীতে যন্ত্রতে .. হ..আমি জাহাঙ্গীরনগরে..হ..সাভারের কাছেই..এইহানে একডা নদী আছে..লাল লাল শাপলাফুল ফুইট্ট্যা আছে... আমার পাশেই ছিল অনজন। ফাট করে বলে বসলো,' শালারে গ্রীবা ধরে বের করে দেওয়া উচিত।' কেন..কেন.. কেন। কেন তুমি তাকে গ্রীবা ধরে বের করে দিতে চাও? কারণ কি তার অজ্ঞতা? .. একটা মানুষ তো বহু কিছুই না জানতে পারে। তুমিও তো কত কিছু জানো না। তাই বলে আমি তো তোমার ঘেঠি ধরে বের করে দিতে চাইছি না। হলুদ ট্যাক্সিক্যাবওয়ালা হয়তো তোমার চেয়ে একটু বেশিই নাদান লোক, সে হয়তো জানে না নদীতে শাপলা ফুল ফুটতে পারে না জলের ব্যস্ততায়। কিন্তু সে কথা জগতের কটা লোকই বা জানে? অথচ দেখো, কী দারুণ উচ্ছ্বাসভরে সে গল্প মারছিল তার কোনো প্রিয় শ্যালকের নিকট, লাল লাল সব শাপলা ফুলের। এই প্রেম ও আন্তরিকতাকে তুমি অগ্রাহ্য করতে পারো না। আমি পারি না অন্তত। অনজন চুপসে যায় ফশ করে।

আজ সেই লাল লাল শাপলা ফুল ফোটা নদীর পাশেই শুয়ে আছি.. ঘেসো মাটিতে। পাশেই বসে আছে বন্ধুর মতো একটা মেয়ে অথবা সে বন্ধু নয়। নাওতো হতে পারে। যেমন আমার পাশেই বসে আছে প্রেমিকার মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। আমি তাকে বলি, 'আচ্ছা বড় হলে কী হবে তুমি?' সে ভীষণ করে হাসে। বড় হলে কী হবো মানে? আমরা তো বড়ই! আমি বলি..হ্যা.. ধরো চাই.সে তো ঠিকই..কিন্তু অনজনের পুরনো রুমমেট তাকে জিজ্ঞেস করেছিল..বড় হলে কী হবে সে? অনজন আঁকাবাঁকা হেসেছিল এবং বলেছিল..একটা শান্তশিষ্ট গরু। সে হাসে ..প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। আমি তাকে দৈববাণীর মতো বলি..হেসো না..হেসো না মেয়ে..হেসো না কালো মেঘ... তোমার পেটের ভেতর যে ভুল অথবা ফুলের জন্ম হচ্ছে ..তাকে রুখবে কে?..একটা লাল কৃষ্ণচূঁড়া বৃ হত্যার দায়ে তুমিও অভিযুক্ত হতে পারো..। মানে? বলে চোখ সরু করে প্রেমিকার মতো মেয়ে। শোনো.. বলে আমি তাকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বোঝাই..আসলে বড় হলে মানুষ দুটো জিনিসই হতে পারে..হয় গরু...শান্তশিষ্ট অথবা অশান্ত। আর নয়তো ছাগল। ম্যা..ম্যা..করতে করতে আমি তার চোখের কালো অংশের গভীরতা মাপি। সেখানে ইট্টুখানি ভালবাসা পাওয়া যায় কি-না দেখি। কিন্তু সেখানেই স্পষ্টই লেখা আছে..দ..য়া, ক..রু..ণা। আমি আরো আদুরে বাদুরে হয়ে, প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দ- কে ভ, য়-কে া, ক- কে ল আর একখানা ছোট্ট কুঁড়েঘর দেখবার প্রত্যাশায় মাতি। কিন্তু প্রেমিকার মতোই অথচ যে প্রেমিকার নয়, খেক শিয়ালের মতোই খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে, হ্যা..আপনারে কইছে?..ধপ করে নিবে যাওয়ার মতোই প্রতিটা শব্দ। কিন্তু তার মুখের গর্ত থেকে..'কইছের' পর লাফ দিয়ে একটা মায়াবী বাতাস বের হয়। আর তাতেই বর্তে যাওয়া বতর্ুলাকার আমি আবারও টানটান ভঙ্গিতে শুরু করি, প্রবল আশা নিয়ে, চোখের কালোতে আলো করা এক ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘর দেখবার প্রগাঢ় বাসনায়।.. কিন্তু ধরো চাই ..আমার মাঝে মাঝে মানুষ হতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু মানুষ হওয়াতো খুব শক্ত কাজ! যেমন একটা পাকা বালকে টেনে সোজা করার মতোই অসম্ভব ব্যাপার। পেটের ভেতর গুঁড়ি মেরে শব্দগুলো লুকিয়ে থাকে। বেরিয়ে আসে আদর করে কুত্তার লেজ সোজা করার মতোই অবাস্তব।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। চোখের কালো চিকমিক করে উঠে। একটা দুটো খড়কুটো দেখতে পাই। আনন্দে বুকের ভেতর খরগোশের বাচ্চা নেচে নেচে ঘাস খায়। পেছন থেকে বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে যায়। উঠে গিয়ে দূরে বসে। হয়তো আরো গভীর মনোযোগে লাল লাল শাপলাফুল দেখে। এই ফাঁকে আমি আমার বুকের ভেতর নেচে যাওয়া এবং আনন্দিত খরগোশগুলোকে গ্রীবা ধরে খোয়াড়ে ঢোকাই, আনন্দের চাপড় মেরে। তারপর আরো বেশি মুখের কাছে মুখ, চোখের কাছে চোখ নিয়ে প্রেমিকার মতো মেয়েটাকে বলি.. তোমার বুঝি মানুষ হতে ইচ্ছা করে না? মেঘ জমে মুখে। নিষ্পৃহ কণ্ঠে বলে..আমি তো মানুষই। ..হ্যা ..হ্যা..সে তো ঠিকই..সে তো ঠিকই। কিন্তু এরম প্রাণীর মতো মানুষ নয়।..ঐ যে তখন বললাম..মানুষ হওয়াতো বাঁকা বাল সোজা করার মতোই সাংঘাতিক কঠিন। লুকিয়ে থাকা শয়তান শব্দগুলো গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরলো না মুখগহ্বর দিয়ে বেরলো..ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। কিন্তু নিজের কানেই যখন শুনলাম, তখন মনে হলো রাস্তার কোনো বাজে পথিক হাওয়ায় শব্দগুলো উড়িয়ে দিয়ে গেছে। ইচ্ছা করলো বাজে পথিকের গলা চেপে ধরি, দ্রুত শয়তান শব্দ থামাই। কিন্তু ডান হাত সে ইচ্ছায় সাড়া দেয় না। ঝিঁঝি ধরা ডান হাত। বাম হাত আগেই ঝিঁঝি ধরে পড়ে আছে মরে। শরীরে ঘুম পাখির মতোই বাসা বুনে যায়। ডানচোখ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়, অবলীলায় খুলে রাখি বাম চোখ। চোখভর্তি লাল লাল শাপলাফুল। চুউউং করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। মুখোমুখি হয় এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার। শাপলাফুল তার আদরের বাড়িঘর। লাল পাপড়িতে বসে জল খলবল করে পা নাচায়। পা নাচায় জল নাচে। জল নাচে..পা নাচে..।
জন হেনরি... জন হেনরি.. নাম তার ছিল জন হেনরি ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন...
খোয়াড়বন্দি মনখারাপ করা খরগোশগুলো একজোটে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে খোয়াড়ের তালা। মুক্তির আনন্দে লাফায়..নাচে..হাততালি দেয়...আনন্দের আতিশয্যে কেউ কেউ কানধরে উঠবস করে। ..ইস্..আর পারি না..সব ভুলে গেছি। ঝট করে পেছনে তাকাই। ধীরে ধীরে উধাও হয় শাপলাফুল। ফিরে আসে প্রেমিকার মতো মেয়েটার কালোমুখ..না পারার বেদনা চোখেমুখে..বলতে থাকে আনমনে..একা একা ...নিজে নিজে..আমার যে কী হবে? বাবার যদি অনেক টাকা থাকতো? অ..নে..ক টাকা?
চুপচাপ শুনি আর মনে ভেতর গজিয়ে উঠতে থাকে বহুমূল্যবান টাকার গাছ। একটা নয়, দুটো নয়, হাজার হাজার গাছ... হাজার হাজার টঙ্কা বৃ লতায় পাতায় জড়ানো মুড়ানো..জঙ্গল ...মধুপুর..জঙ্গলভর্তি টাকা...টাকার মালিক বাঘ।

না..সত্যি...সে বলতেই থাকে..আমার তো চাকরি হবে না..কে আমাকে চাকরি দেবে?... নিশ্চয়ই হবে না..বেশ থমথমে গলায় বলি। শুষ্ক হাসি হাসে প্রেমিকার মতো মেয়ে..ভয় দেখাচ্ছেন? তাকে স্পষ্ট করি। না..বাস্তবতা বোঝাচ্ছি। আরো স্পষ্ট করার জন্য বলি..তা এই ধরো..একখানা চাকরি পেতে হলে তোমাকে কিনতে হবে নিদেনপক্ষে তিন জোড়া স্যান্ডেল। হেঁটে হেঁটে য় করে তবেই না পেতে পারো টিনের হরিণসম বেসরকারি অনিশ্চয়তাপূর্ণ, বিবিধঝামেলাযুক্ত একখানা সস্তা দামের চাকরি। সোনার হরিণসম সরকারি চাকরির প্রত্যাশা..বামনের চাঁদ ভালবাসার মতোই জটিল প্রক্রিয়া..পর্যন্ত বলে বেশ একটা অসহায় ভঙ্গি আঁকি শরীরে, তাতে জটিল প্রক্রিয়ার জটিলতা আরো বৃদ্ধি পায়।

বেশ ছোটাচ্ছেন, টিভি সিনেমা দেখে দেখে নাহ্? প্রেমিকার মতো মেয়েটা এবার যুৎসই ভ্রুভঙ্গি হানে। তা দেখে মরমে মরে যাই। তারপরও সাহসে বুকে ভর দিয়ে খাঁড়াই। মিছে অবাক হই..ছোটালাম কোথায়! এখনো তো ঘোড়ার লাগাম খোলা বাকি..আসল দৌড় তো শুরুই করিনি.. তাই নাকি? বলে আসল ঘোড়দৌড় দেখার আগ্রহ দেখায় মেয়েটা। আমিও শুরু করি প্রথমে দুলকি চালে..তা ধরো নিত্যি গুঁতোগুতি করে পাবলিক বাসে ওঠা, মশার কামড়ের মতো পুচ্ছে একঝাক রাম কিংবা কাম চিমটির জ্বালা, দাঁড়িয়ে থাকলে। আর নেহায়েৎ বসবার জায়গা পেলে পাশের ভদ্রলোক, অভদ্রলোক, বদলোকেরা নিজের ঊরু ভেবে তোমার ঊরুটি ব্যবহার করতে পারে নিশ্চিন্তে... চাকরির বাজারে অনেকেই হয়তো হেসে হেসে কথা কইবে, কেউ কেউ ফাঁসিয়ে দেওয়ার ধান্দা করবে, অনেকেই বন্ধু সাজবে, সাজতে চাইবে প্রেমিক অথবা পুত্রের জনক। অনেকেই সহগামী, সহযোদ্ধা, সহমর্মী হয়ে হাতে চাররঙা কাষ্ঠ ধরিয়ে দিয়ে বলবে..অফিসে আসবেন..কাজের কথা হবে..কামের কথা..।


এক নাগাড়ে বলতে থাকি। বলতে বলতে আমোদিত হই। ঘোড়া বল্গা হরিণীর মতোই রূপকথার সমস্ত দেশ পেরিয়ে শেষমেশ উড়তে থাকে আকাশের দিকে। মোমের মতো জ্বলতে জ্বলতে গলতে গলতে মেয়েটাও হাসে। হাসতে হাসতে বিষম খায়। চারদিকে ফুটতে থাকে লাল শাপলাফুল। অজস্র..অগুনতি। জল খলবল করে পা নাচায় হলুদ ট্যাক্সি ড্রাইভার। জল নাচে, পা নাচে, পা নাচায় জল নাচে।

' কাপুরুষ সিংহ সে তো মারতেই জানে... আমরা যে মরতেও জানি.. মেয়েদের চোখ আজ চকচকে ধারালো...'

জিপারের নীচে লিঙ্গ ছোট হয়ে আসে ভয়ে। কালো মেয়েটা মুখ আলো করে জিজ্ঞেস করে..বড় হলে আপনি কী হবেন? বিপদে পড়ে যাই আমি, কঠিন। কী হতে পারি আমি? একটা শান্তশিষ্ট গরু অথবা অশান্ত ছাগল, ভীরু ভেড়া থেকে আরম্ভ করে বনের বাঘ হওয়া পর্যন্ত ভেবে ফেলি একটানে; শেষমেশ কোনোকিছু না হতে পেরে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় রা..জা..।

বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে আসে কাছে, বসে পড়ে পাশে, হাতে রাখে হাত, বলে..নে ধর ..উপহার। ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, ঘাস, আর হরেক রকমের পাতা ক্ষীণ তৃণে বেঁধে ভালবাসা দেয়। ভালবাসা নিই। ট্যাক্সি ড্রাইভার জল খলবল ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় লাল পাপড়িতে। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছোটে নরোম পাপড়ির মসৃণ ভাজ একের পর এক দ্রুত সরায়ে। ফুলের গোপন ঘর থেকে বের করে আনে তার প্রিয় ট্যাক্সিক্যাব। হর্ন বাজায় প..প..পপ..প..প। হেলেদুলে চলতে থাকে লাল পাপড়ির রাস্তায়... ' শোনো ..তাজেল গো..মন না জেনে প্রেমে মইজো না...

প্রেমের জন্য চাই উড়িয়াবাজ ঘোড়া, জরির জামা, জরির জুতা- ওসব কোনো কিছুই তো নেই আমার। ঠা ঠা করে হাসি। অথচ আরো কাছিয়ে আসে বন্ধুর মতো মেয়ে, হাসে খিল খিলিয়ে। প্রেমিকার মতো মেয়ে, গ্রীবা গুঁজে তখনো বসে থাকে দূরে। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে আমার হাল্কা ঝিঁঝি ধরা হাত দুটোকে উড়িয়াবাজ ঘোড়া বানাই। তারপর হাতদুটোকে বাতাসে খেলাই। উড়িয়ে দেই আকাশে। উড়তে উড়তেই বলতে থাকি...

...এ..ক..দা.. এক... শিন্টু ধর্মাবলম্বী রা..জা..। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে...আচ্ছা ..গাছের পাতা কেন নড়ে? অবাক হয় রাজা..সত্যিই তো কেন নড়ে গাছের পাতা! তিনি রাজা..অথচ তিনিই জানেন না কেন নড়ে গাছের পাতা? এও কি সম্ভব? খুবই সম্ভব। কারণ শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্য যে আর দশটা উত্তরাধুনিক রাজ্যের মতোই সাংঘাতিক আজগুবি, গুজগুবি এখানকার সব কান্ডকারখানা। অন্যসব উত্তরাধুনিক রাজ্যে যেমন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাঁচের বাঙ্ েবাচ্চা ফোটানো হয়, শিন্টু রাজ্যে ব্যাপারটা ঠিক ও রকম না হলেও মোটামুটি অন্যরকম। শিন্টুরা কাঁচের বাক্সে বাচ্চা না ফুটিয়ে ঊরুঝিলি্ল পর্বতের মাথায়, অত্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পদ্ধতিতে 33 বছর বয়স্ক পূত পবিত্র মানুষ ফোটায়। সঙ্গতকারণেই শিন্টুদের রাজ্যে কোনো শিশু নেই, নেই কোনো অশীতিপর বুড়োও। শুধু তাই নয়, শিন্টুদের রাজ্যে আলোময় দিন আছে, কিন্তু কেউ কখনো অন্ধকার রাত ভুলে কিংবা স্বপ্নেও দেখেনি। যে কারণে কেউই হিসাব রাখে না সময়ের। সময়ের কোনো মূল্যই নেই কারো কাছে। বরং সময় একটা ফালতু বস্তুর মতোই যত্রতত্র হামাগুঁড়ি দিয়ে পড়ে থাকে। উহা কেউ খায়ও না, রঙিন জামা হিসাবে কারো গায়ে দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। শিন্টুরা অবশ্য মান্টুদের মতো সকলেই চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত। আর মান্টুরা? ওরা তো পাশের উত্তরাধুনিক রাজ্যেরই বাসিন্দা, মাথায় যন্ত্র ফিট করে এবং মন্ত্র উচ্চারণ না করেই যারা কামকলায় লিপ্ত হতে ভালবাসে। আর উহারাও শিন্টুদের মতোই চিরজীবি, চির যৌবনপ্রাপ্ত। তবে শিন্টুরা চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত হলেও আদর্শগতভাবে তারা কিন্তু সকলেই বায়ুকামী। কিন্তু তারা মান্টু, পান্টু কিংবা বান্টুদের মতো যান্ত্রিক বায়ুকামে বিশ্বাস করে না। শিন্টুদের কেউই মাথায় যন্ত্র ফিট করে কাম কলায় লিপ্ত হতে রাজী নয়। কারণ রাজাই ওসব ভালো করে ভালবাসে না। বরং তারা প্রত্যেকেই মাথায় মন্ত্র ফিট করে বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে অত্যন্ত আরাম পায়। কারণ রাজা ওভাবেই বায়ু থেকে নিজের জন্য প্রগাঢ়তম আরাম এবং আনন্দ কাড়েন। যাই হোক, রাজা এবং প্রজাদের সম্মিলিত এ অভিনব মতির কারণে শিন্টু রাজ্যের প্রতিটা গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে বন্দরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য বায়ুকামঘর। কামঘরের প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা বায়ুকামীদের মাথায় সুনির্দিষ্ট মন্ত্র ফিট করার মধ্য দিয়ে শুরু করে বায়ুকাম প্রক্রিয়া। অতি ধীরে পোশাক আশাক খুলে বায়ুকামীরা একে অন্যের দশ হাত দূরে দূরে দাঁড়ায়। তারপর শুরু করে প্রধান পুরোহিতের নির্দেশ মতো বায়ুতে অঙ্গ দোলানো এবং লিঙ্গ চালানো। এভাবে দীর্ঘণ বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে বায়ুকামীরা গভীরতর এক মানসিক তৃপ্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর এই তৃপ্তিময় আচ্ছন্নতা বায়ুকামীদের শরীর থেকে এক ধরনের পবিত্র জল নিঃসরণে সহায়তা করে। নিঃসৃত পবিত্র জল জমা হয় পবিত্র পুষ্পভাণ্ডে। এরপর প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা পবিত্র জল জমাকৃত পবিত্র পুষ্পভাণ্ড নিয়ে যায় মহাপবিত্র ঊরুঝিলি্ল পর্বতের মাথায়, নীল কুয়াশাঘন মহা মহা পবিত্র মেঘঘরে। এরপর রাজার ইচ্ছানুসারে মেঘ ঘরে ফুলের মতো ফুটতে থাকে একেকজন 33 বছর বয়স্ক শিন্টুধর্মাবলম্বী পূত পবিত্র বায়ুকামী..যারা নেমে আসে মহা পবিত্র ঊরুঝিলি্ল পর্বতের পা বেয়ে।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। হেসে হেসে বলে..বেশ আজগুবি তো। আমি আমার উড়িয়াবাজ ঘোড়ার ডানা দুটোকে আবারো বাতাসে খেলাই এবং পাখি বানিয়ে পাখি উড়াই। তারপর বলি..রসো...আজগুবির কী আর দেখলে..ইহা তো কেবল শুরু। তারপর আবার বলতে থাকি ...যদিও শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যের সকলেই আদর্শগতভাবে বায়ুকামী, কিন্তু হলে কী হবে? তাদের অনেকেই যে আবার পায়ুকামে লিপ্ত হতেও ভালবাসে! রাজা আবার এসব জানে না। জানলে কঠিন শাস্তি। কণ্টক লিঙ্গে চড়িয়ে ফাঁসি। অন্যদিকে প্রজারাও জানে না যে রাজাই এ কুকর্মের মূল পাঁজি। এভাবে সকলেই একে অন্যের কুকর্মের কথা না জেনে, একে একে সব শিন্টুই পায়ুকর্মে লিপ্ত হতে ভালবাসে। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রকাশ্যে কেউ কারো কুকর্মের কথা না জানলেও, মনে মনে সকলেই সকলের সকলই জানে। কিন্তু তারা সকলেই যেহেতু আদর্শিকভাবে গাঢ় বায়ুকামী এবং বিশ্বাস করে ঘন সবুজ বিপ্লবে, তাই তাদের প্রত্যেকের হাঁটা চলায় ফুটে উঠে এক অতিপ্রাকৃত গাম্ভীর্য। (চলবে)

0 মতামত(সমূহ):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন