প্রেমিকার মতো মেয়েটা কিছু না বলে শুধু ছিঁড়ে যায় তৃণের মাথা। বন্ধুর মতো মেয়েটা ফেটে পড়ে উৎসাহে, তারপর কী হলো ..তারপর কী হলো বলে তাগাদা লাগায়..। আমি তবু চেয়ে থাকি প্রেমিকার মতো মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণে, নিজেকে বানাই উড়িয়াবাজ ঘোড়ার সাদৃশ্যকরণে। তবুও দৃষ্টিহীনের মতোই সে ছিঁড়ে যায় অসংখ্য তৃণের মাথা। আমি আমার ঘাসখাওয়া নিরানন্দিত খরগোসগুলোকে লাগামহীন ঘোড়ার গ্রীবায় চড়িয়ে ছুটতে থাকি দিগ্বিদিক...তো ওই দেশেই বাস করতো এক ভীষণ বাজে লোক। যে বায়ুকামে বিশ্বাস করতো না। পায়ুকামেও ছিল না তার মতি। এহেন বাজে লোকের ভক্তি ছিল বিজাতীয় সামুকামে। মাথায় যন্ত্র অথবা মন্ত্র ফিট ছাড়াই সে বিপুলভাবে উত্তেজিত থাকতো সম্মুখ কর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রগাঢ় ইচ্ছায়। কিন্তু তার সে প্রগাঢ় ইচ্ছা পূরণের কোনো উপায়ই ছিল না শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যে। কারণ রাজ্যব্যাপী সকলেই ছিল একেকজন আদর্শ বায়ুকামী। যদিও তারা লুকিয়ে চুরিয়ে পায়ুকর্মের মধু খেত, কিন্তু তাদের কেউই সামুকামের মিঠা সম্পর্কে বিশেষ অবগত ছিল না। ফলে এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সামুকামী সম্মুখকর্মে লিপ্ত হতে না পেরে যাচ্ছেতাই মনখারাপে আক্রান্ত হলো।
আর এই যাচ্ছেতাই মন খারাপ তাকে এতটাই দুর্বিনীত আর কাণ্ডজ্ঞানহীন করে তুলল যে হঠাৎ সে দশ হাত দূরের বায়ুকামরত এক সবুজ ভদ্রমহিলাকে জাপ্টে ধরে উপর্যুপরি লিঙ্গ চালিয়ে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় বায়ুকামীরা বাতাসে লিঙ্গ চালানো বাদ দিয়ে থ্ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকেই সামুকামীর বুরবুকামি দেখে হাসতে হাসতে পাগল হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার কড়া হাততালিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু কর্তব্য ভুলে গেল না প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা। রা..রা..করে তেড়ে আসলো তারা। ঘুসি দিয়ে সামুকার নাক ফাটালো, হনুতে ট্যাপ ফুলালো, কেটে ফেলল জোড়াভ্রু। থুঁতনি আর চোয়ালেরও কিছু বাকি রাখলো না তারা। কে যেন আবার টন্নশ করে মাথায় হাতুড়ির একখানা বাড়িও বসিয়ে দিল। তারপর পুচ্ছে একগাদা শক্তিশালী লাথি দিয়ে তাকে বিদায় করে দিল রাস্তায়।
রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে, মাথা ঘুলিয়ে যাওয়া সামুকা নিজেকে নিয়ে পালালো বনে। বনে গিয়ে ণে ণে মনে পড়ল সবুজ ভদ্রমহিলার কথা। দেখতে থাকলো বিভিন্ন এঙ্গেলে সবুজ ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরার মনোরম দৃশ্যাবলি। মন ভালো হয়ে গেল সামুকামীর। কিন্তু একই সঙ্গে ফিরে এল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কতর্ৃক প্যাঁদানোর দৃশ্যাবলিও। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল সামুকামী। কান্না ফুরিয়ে গেলে এবার পড়ল গাঢ় লজ্জার ভেতর। লজ্জা তাড়াতে সামুকা দৌড়াতে লাগলো বনময়। লজ্জা কেটে আবার ফিরে এল সবুজ ভদ্রমহিলা, ফিরে এল বিভিন্ন এঙ্গেলে জড়িয়ে ধরার রঙিন সব ছবি। সামুকামী আনন্দের আতিশয্যে তৎণাৎ হাজির হতে চাইলো সবুজ ভদ্রমহিলার কাছে। কিন্তু পরণেই তার মনে পড়ল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কতর্ৃক পিটা খাওয়ার কাহিনী। আবার ফিরে এল গভীর বেদনা।
এভাবে সামুকা ণে হাসে, ণে কাঁদে এবং হাঁটতে থাকে বনময়। গাছকে মানুষ ভেবে কথা কয়। ফুলকে নিরানন্দে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কতণ? এসব হাল্কা পাগলামি কী আর ভালো লাগে সামুকামীর? তাই খুব সহসাই বিরক্ত হয়ে দুচ্ছাই বলে হাঁটা ধরে গাঁয়ের পথে। অজানা কারণে হাতে তুলে নিল একগাদা হাস্নুহেনা।
খিলখিল করে হেসে উঠে বন্ধুর মতো মেয়ে অথবা যে বন্ধু নয়। চোখে তার ফুটে ওঠে লাল লাল শাপলাফুলফোটা নদী। চোখের রং জলের মতোই আদুরে কালো। বাড়ি ফিরে যায় হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইবার...ভাত খেতে। সামনেই বসে থাকে বন্ধুর মতো মেয়ে, ভাত বেড়ে। ছোট ছোট অনেকগুলো কুঁড়েঘর...পাশেই শুয়ে আছে নাতিদীর্ঘ নদী...অদূরে খরগোশদের বন...বয়ে যাচ্ছে সময়...আনন্দময়।
এদিকে, রাজা গাছের পাতা নড়ার রহস্য আবিষ্কারে ব্যাপক ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে রাজা কিছুই ভেবে পেল না। খুঁজে পেল না ভাবনার কোনো কূল কিনারাও। যা পেল তা শুধু জল আর জল। বিভ্রান্তিকর হাবুডুবুতে ওইসব নোংরা জল খেয়ে রাজার ত্রাহি অবস্থা প্রকাশ পেল অচিরেই। রাজা দেখতে পেল এ সম্পর্কে তার সীমাহীন অজ্ঞানতা বিরাজিত। তাই শেষমেশ কুলাতে না পেরে রাজা তার বশংবদ মন্ত্রীকে ডেকে বলল..প্রিয় মন্ত্রী ..দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমি একটা ুদ্র ভাবনায় মাথা গলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার ধারণা..এেেত্র আমার ভাবনা ঠিক সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে না।
মন্ত্রী বেশ পাকালোক। ক-তে কলিকাতার রেসের মাঠ বোঝে...টাকার উড়াউড়িও দেখে। ফাট করে বুঝে ফেলল পরিস্থিতি এবং দেরী না করে বলল...হুজুর কিছু মনে করবেন না..ইকটু ঝেড়ে কফ ফেলবেন কি? দেখি..অধম আপনার মহৎ ভাবনায় লিপ্ত হতে পারে কি-না..
রাজা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে শুরু করে...না..আ..। বিষয়টা বিশেষ মারাত্মক কিছু নয়। তবুও বলছি...আচ্ছা ..তুমি কি বলতে পারো গাছের পাতা কেন নড়ে?
মন্ত্রী রাজাকে না দেখিয়ে মুচকি হেসে...বিষয়টা বেশ ইন্টরেস্টিং হুজুর। বেশ সহজ মনে হয়, আবার কোনো মতেই একে জটিলতামুক্ত বলা যাবে না। আসলে আমাদের বিজ্ঞানীরা এ প্রসঙ্গে কী বলেছে... সেটা জানা দরকার সর্বাগ্রে। তাদের ব্যাখ্যানুযায়ী, যদি আমি ভুল না করি, তবে কেউ যদি 45 ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায় ..তাহলে দেখবে... গাছের পাতা নড়ছে...। আবার কেউ যদি 90 ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায়...তাহলে সেও দেখবে গাছের পাতা নড়ছে! সত্যি কথা বলতে কী হুজুর! গাছের পাতা নড়ার বিষয়টা আপেকিতায় মোড়ানো...দৃষ্টিবিভ্রম মাত্র।
ভাবতে ভাবতে এমনিতেই রাজার মাথা ছিল ঘুলানো, তারপর যখন দেখলো মন্ত্রী তাকে সঠিক পথের ঠিকানা না দিয়ে ভুল রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে অবলীলায়, তখন রাজা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না..চুপরাও হারামজাদা..আমাকে ধুনফুন বোঝানো হচ্ছে? ধুনফুন..অ্যাহ?
মন্ত্রী ধরা খেয়ে মরা লোক সেজে গেল নিমেষেই..গুস্তাকি মাফ করবেন হুজুর! সত্যি কথা বলতে কী... একটু হুসেনখুম খেয়েছিলাম কি-না...তাই মাথাটা একটু বাজে বকাচ্ছে।
সামনে বসা নারীদ্বয়কে বলি ..হুসেনখুম হলো এক জাতীয় নেশাদ্রব্যাদি, যা খেলে মানুষের মাথা বাজে কথা বলে।
রাজা এই কথা শুনে আহা..হাহ হাহ করে উঠল..না জেনে আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? আমি তোমার বায়ু কামঘর ভেঙেছি! অনুতাপে দগ্ধ হয় রাজা। পুড়তে পুড়তে বলে..কী করবো বলো? গাছের পাতা কেন নড়ে ..এটা জানা যে খুব বেশি জরুরি! কারণ এটা অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এইবার মন্ত্রী ঝোপে কোপ মেরে ঝোপের ভেতর শুয়ে থাকা নিরীহ সাপটাকে মেরে ফেলে বলে..হু..জু..র..! তবে কেন শুধু শুধু আমরাই বা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে যাবো?
রাজা তো অবাক! তাহলে কে ভাববে?
মন্ত্রী জাল গুটানোর আনন্দে খিচখিচ করে হাসে আর বলে...হুজুর ..বিষয়টা যেহেতু অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ..অতএব প্রজাদেরই ভেবে ঠিক করা উচিত ..আসলে গাছের পাতা কেন নড়ে?
হারানো ধন খুঁজে পাওয়ার আনন্দে রাজা কিছুণ ঘুরে ঘুরে নাচে। তারপর বলে..প্রিয়তম মন্ত্রী! তুমি আমার ডান হাতে একটা বড় করে চুম্বন আঁকো এবং রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে বলে দাও ...যে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভাবতে পারবে...তাকে দেওয়া হবে অজস্র পুরস্কার। আর যে না পারবে তাকে মৃদু শাস্তিসহযোগে তিরস্কার।
নারীদ্বয় একে অন্যের চোখে চোখ রেখে হেসে উঠলো আরেকবার। আরো জোরে ..আরো জোরে..ট্যাঙ্ িচালায় হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইভার।
মন্ত্রী আসলের সঙ্গে এবার সুদ যোগ করে...হুজুর! ..আমার লাল ঘোড়ার পা টা একটু মচকে গিয়েছিল কি-না..আর ঢেড়াওয়ালাদেরও নতুন জামাজুতো দরকার ছিল কি-না?
রাজা মন্ত্রীর অভিপ্রায় বুঝে ঝোপ পরিষ্কার করে মরা সাপ তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলে..কোনো অসুবিধা নাই। আমার আস্তাবলে দু'খানা সতেজ লাল ঘোড়া দণ্ডায়মান। যে কোনো একটা তুমি নিয়ে নাও আর যেখানে খুশি সেখানেই ঘুরে বেড়াও.. আর..আর.. অনেকবেশি হুসেনখুম খাও। আর ঢেড়াপিট্টিওয়ালাদের জন্য রাজকোশ অবারিত করো..হলো তো? এবার...
এইবার মন্ত্রী কোনো কথা না বলে, কোনো দিকে না তাকিয়ে হামলে পড়ে রাজার ডান হাতে এবং বাম পায়ে। হুমহাম শব্দে দীর্ঘ সব চুম্বন কাটতে থাকে পাদুকা যুগলে। রাজা উহু উহু আহা আহাময় শব্দে আনন্দে মরে যাওয়ার ভান করে।
এদিকে, সামুকামী দুরু দুরু মনে গ্রামে ফিরে এল। কী এক অজানা কারণে তার হাতভর্তি হাস্নুহেনা। কিন্তু একী! গ্রামে যে কেউই নেই! সামুকাকে ধরবার, মারবার, হাসবার কিংবা ভালবাসবার তরে। কী ব্যাপার তবে?
সামুকার হাতের হাস্নুহেনা শুকিয়ে যেতে থাকে, সবুজ ভদ্রমহিলাকে দেখতে না পেয়ে। কান বন্ধ হয়ে যায়..বায়ুকামীদের অট্টহাসি শুনতে না পেয়ে। চোখ প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা..প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কর্তৃক প্রদেয় শক্তিশালী ঘুসি এবং লাথির অনুপস্থিতিতে। এ রকম আদিভৌতিক পরিস্থিতিতে পড়ে সামুকামী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর দেখে না। অবশ্য এ বিমূঢ়তাও অমর হয় না। ফলে সারা গ্রাম ঢুরে কাউকে না পেয়ে গ্রামে উপস্থিত একমাত্র নিরাপত্তারী অর্ধশিতি বাঘটাকেই সামুকামী জিজ্ঞেস করে...সকলে সদলবলে কোথায় গিয়েছে? অর্ধশিতি বাঘ হালুম ভাষায় উত্তর দেয়..সুদূর দেিণ। অর্থাৎ রাজার বাড়ি হতাকা বুণ্ডাকাঠে। আর দেরী না করে সামুকাও পা চালালো সুদূর দেিণই।
এদিকে, রাজা তো মহাসমারোহে রাজদরবার সাজিয়ে বসে আছে। মন্ত্রীরও উৎসাহের একফোটা কমতি নাই। সারা রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়েছে রাজকীয় কর্মী দিয়ে, ওই আগের ছেঁড়া ঝুল্লা পুরনো পোশাক পরিয়েই। ফলে দলে দলে বায়ুকামীরা রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের দিকে ছুটে আসছে তুমুল বেগে। শক্ত হাতে ভিড় সামলিয়ে মন্ত্রী একে একে বায়ুকামীদের হাজির করছে রাজার সামনে। রাজাও মহানন্দে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলছে ঘুরে ফিরে..বল..বায়ুকামী হরি খাটকা...কেন নড়ে গাছের পাতা?
হরিখাটকার সহজ, সরল নিরীহ মাথা, সে কীভাবে জানবে..কেন নড়ে গাছের পাতা? তবু বহু কষ্টমষ্ট করে বলে..হু..জু..র..! আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম? তখন দেখি গাছের পাতা নড়ছে..নড়ছে তো নড়ছেই, থামাথামি নেই।
রাজা একটু নিমরাজি হওয়ার মতো করে বলে..চেষ্টা অতিশয় দুর্বল এবং তা মিথ্যাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা। এবং সবচে' মজার ব্যাপার হলো সত্য হতে উহার অবস্থান বহুদূরে। অতএব বায়ুকামী হরিখাটকা..তিরস্কার বিনে অন্য কিছু প্রাপ্য নাই তোমার। আর যা আছে...তা হলো মৃদু দলাই মলাই..এই কে আছিস..একে নিয়ে যা...
এরপর মন্ত্রী ডেকে আনলো বায়ুকামী লিরিবিরি আফান্দিকে। রাজা বায়ুকা আফান্দিকেও জিজ্ঞেস করলো একই কথা। কেন নড়ে গাছের পাতা? বায়ুকা লিরিবিরি আফান্দি আবার নিজ গাঁয়ের জ্ঞানী। তাই অনেক বেশি ভাব এবং তারও বেশি ভঙ্গি নিয়ে শুরু করলো..হুজুর! বহু বহু কাল আগে...যখন পৃথিবীর মানুষ সময়ের হিসাব রাখতো...যখন পৃথিবীতে শুধু আলোময় দিনই ছিল না, দেখা যেত রাত্রির অন্ধকারও...ঠিক সেই সময় ...টগডিল পাহাড়ের গুহায় বাস করতো এক ঘড়ি ব্যাঙ। সেই ঘড়ি ব্যাঙটা যখন টকটক করে ডেকে উঠতো, তখনই গাছের পাতা নড়তো।
রাজা বেশ আগ্রহভরে শুনছিল। আফান্দি থামলে রাজা মুচকি হাসে আর বলে..আদিভৌতিক কল্পনাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা এ গল্প বেশ আবেদনময়ী...কিন্তু তা মোটেও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে না। উপরন্তু তা সত্যকে নিমজ্জিত করেছে আরো ঘনান্ধকারে। অতএব বায়ুকা আফান্দি...তোমার জন্য অপো করছে উপযুক্ত তিরস্কারের ব্যবস্থা। এই কে আছিস...এটাকেও নিয়ে যা..এবং রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের সবচে' উঁচু বৃরে মগডালে সংযত করে বেঁধে রাখ্। যখন ব্যথায় কঁকিয়ে কঁকিয়ে টক টক করে কাঁদবে, তখনই সে দেখতে পাবে কীভাবে নড়ে গাছের পাতা।
আফান্দির শাস্তি নির্ধারণের পর মন্ত্রী অতি উৎসাহে ধরে নিয়ে এল এক হলুদ ভদ্রমহিলাকে। হলুদ ভদ্রমহিলা নাচতে নাচতে রাজার সামনে এল এবং নাচতেই থাকলো। রাজা একটু বিব্রত হওয়ার ভান করে গলাখাঁকারি দিয়ে বলল...ভদ্রমহোদয়া...আপনি কি বলতে পারেন..কেন নড়ে বৃরে পাতা?
হলুদ ভদ্রমহিলা নাচ না থামিয়েই চোখ নড়োবড়ো করে বলল..আমি যখন নাচি..এবং নাচতেই থাকি..তখনই দেখি গাছের পাতা নড়ছে এবং তা নড়তেই থাকে।
রাজা বেশ আমোদিত ভঙ্গিতে বলেন..অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা...সত্যের খুউব কাছাকাছি...এই কে আছিস..ওনাকে আমার খাস কামরায় নিয়ে যা। উনি যখন নাচবেন..আমি তখন বৃপত্রের নড়াচড়া দেখবোণ। তখন যেন আমাকে বিরক্ত করা না হয়। জিভে আনন্দের রস নিয়ে হুম বলে মন্ত্রীর দিকে তাকায়।
মন্ত্রীও বেশ বিগলিত..জি্ব হুজুর জি্ব হুজুর... খুব সুন্দর হয় তাহলে... খিচখিচ করে হাসে।
এভাবে মন্ত্রী বহু বায়ুকামীকে ডেকে নিয়ে এল। আর রাজাও প্রত্যেকের জন্য উত্তম তিরস্কারের সঙ্গে বিস্তর দলাই মলাইয়ের ব্যবস্থা করে বেশ আনন্দেই কাটাতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কেউই রাজার প্রশ্নের সঠিক ভাবনা ভাবতে পারলো না।
পরিস্থিতি যখন এমন, বায়ুকামীদের সকলের সিরিয়াল প্রায় শেষ, ঠিক তখনই মন্ত্রী রাজার সামনে ধরে নিয়ে গেল কান্ত, তিতি বিরক্ত হতাশ সামুকাকে। যে সামুকা হতাকা বুণ্ডাকাঠে এসেছিল জাপ্টে ধরা সবুজ ভদ্রমহিলাকে খুঁজতে। অথচ সামুকাকে একটু জিরোবার সময় না দিয়েই রাজা জিজ্ঞেস করে বসে...তুই বল কেন নড়ে গাছের পাতা?
'গাছের প্রাণ আছে।' সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে সামুকা জিরোবার ফুরসৎ খোঁজে, কিন্তু রাজার পেছনে প্রধান পুরোহিতকে দণ্ডায়মান দেখে চমকে ওঠে অজানা আশঙ্কায়।
এদিকে রাজাকে বেশ কিছুণ চুপ করে থাকতে দেখে দ্বিধান্বিত মন্ত্রী জিজ্ঞেস করে, হুজুর পুরস্কার নিয়ে আসবো? না..উপযুক্ত ভর্ৎসনার ববোস্থা করব?
রাজা সম্বিত ফিরে পেয়ে চিৎকার করে বলে...এই কে আছিস?...একে হত্যা করা হোক।
আমার অপরাধ? সামুকামী রুখে দাঁড়ায়।
রাজা: বহুবিধ..। জিভে ব্যঙ্গ আর শ্লেষের ধার।
সামুকা: যেমন?
রাজা: (অনিচ্ছাসহকারে)..এই যেমন ধরো ..রাজার আদেশের কারণ জানতে চাওয়া।
সামুকা: তারপর?
রাজা: ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাস
সামুকা: আর?
রাজা: সবুজ ভদ্রমহিলাকে অপমান
সামুকা: আরো শুনতে চাই আমি..।
ােভে ফেটে পড়ে সামুকামী। রাজাও হিসহিসিয়ে শোনাতে থাকে..সবচেয়ে বড় অপরাধ..সত্য জানো তুমি। ভয় না পাওয়াটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়..আরো যদি শুনতে চাও..তবে বলতে পারি.. তোমার জন্যই বসে আছি আমি...বিচার সভা সাজিয়েছি..প্রচুর পয়সা খরচা করে লোক দিয়ে রাজ্যব্যাপী ঢেড়া পিটিয়েছি..মন্ত্রী মশায়কে একখানা লাল ঘোড়া বিনি মাগনা দিয়ে দিয়েছি..সে এখন শুধু হুসেনখুম খাবে..আর পুরো পৃথিবী চড়ে বেড়াবে..আর তোমাদের গাঁয়ের প্রধান পুরোহিত, যে তোমাকে তার পবিত্র গুণ্ডা দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে, আর রা করেছে আমার স্বপ্নে গড়া সাধের শিন্টু রাজ্যটিকে। তিনিই হবেন আমার নতুন মুখ্যমন্ত্রী, তার প্রতু্যৎপন্নমতিতার জোরে। আর তুমি যাকে জাপ্টে ধরে এলোপাথারি লিঙ্গ চালিয়েছিলে- সেই সবুজ ভদ্রমহিলাকে আমি আমার নিজের কাছেই রেখে দোবো.. যে কোনো ধরনের অনিষ্ট হওয়ার ভয়ে। হিক হিক করে হাসতে থাকে রাজা আর হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে হুসেনখুম চাটা মন্ত্রী মহোদয়রা, একজন অপার আনন্দে অন্যজন অপার বেদনায়।
সামুকামীর রিক্ত নিঃস্ব ব্যথিত হৃদয় শেষবারের মতো বিদ্রোহ করে। কিন্তু তার আগেই কতিপয় রাজকীয় গুণ্ডা ঝাপিয়ে পড়ে বেঁধে ফেলে সামুকামীকে। পেটাতে পেটাতে নিয়ে চলে হত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার একটু আগেই একদল থুঁথু ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজার চোখেমুখে।
বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে চলে গেল দূরে। ঘর বাঁধলো বাচ্চাদের স্কুলে। প্রেমিকার মতো মেয়েটা বসে রইলো চুপচাপ, নিজের মতো করে। হাতে নিহত হয় ঘাসের শরীর, দাঁতে নিহত ঘাসের শরীর। অনজনের আঁকা বাঁকা হাসি আরো বেঁকে গেল। কিন্তু হলুদ ট্যাঙ্ িড্রাইভার আর কখনই আসলো না। অথচ লাল লাল শাপলাফুল এখনো ফোটে, জাহাঙ্গীর নগরের ছোট্ট ঝিলে। বাবা আমাকে শেখাতে চেয়েছিল বহুকথা। আমি শিখিনি। কারণ বাবা ছিল বড্ড গরিব, তাই বোকা। আর মাত্র একটা কথা। সবুজ ভদ্রমহিলা শেষপর্যন্ত বনে চলে গিয়েছিল, রাজাকে ফাঁকি দিয়ে...কারণ তার পেটের ভেতর ফুল হয়ে ফুটেছিল একগাদা লাল কৃষ্ণচূড়া।
সোমবার, ১৭ মে, ২০১০
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মতামত(সমূহ):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন